যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট পদে জো বাইডেনের জয় স্বস্তিতে বিশ্ববাসী

38

গত রবিবার একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকীয় কলামে এ কয়টি লাইন দিয়ে শুরু করেন লেখক-১৯৭০ সালে ছেলেটির শাশুড়ি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন- বাবা, তুমি ভবিষ্যতে কী হতে চাও ? তোমার স্বপ্ন কী? তখন তিনি বলেছিলেন-‘আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে চাই।’ সেই ছেলেটি আজ সত্তরোর্ধ্ব বুড়ো ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। লক্ষ্য পূরণে দৃঢ় এ বুড়ো রাজনীতির শেষ বিকালে এসে আকাশের চাঁদ ঠিকই ধরলেন। শাশুড়িকে দেয়া কথা রাখলেন। তাঁর স্বপ্ন সত্যিই পূরণ হয়েছে। সেই সাথে বিশ্ববাসীও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট। স্বপ্ন দেখা এবং তা পূরণের লক্ষ্য স্থির রেখে সামনে এগিয়ে গেলে সে স্বপ্ন পূরণ হবেই ভারতের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট এ পি জে আব্দুল কালাম এমন একটি ঐতিহাসিক বাণী দিয়েছিলেন যুবকদের উদ্দেশ্যে। জো বাইডেন সেই কথা জনতেন কিনা আমাদের জানা নেই, তবে তিনি আব্দুল কালামের বাণী সত্যায়ন করে দৃষ্টান্ত রাখলেন। নতুন করে তা পৃথিবীকে দেখিয়ে দিলেন। আমরা জানি, প্রতি চার বছর পরপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। সে হিসাবে এবার ৩ নভেম্বর মঙ্গলবার দেশটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত মার্কিন গণমাধ্যমের খবর বলছে, বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যেই দুই প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গেছে। এএফপি বলছে, নেভাদার ছয়টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেলেই হোয়াইট হাউসে প্রবেশের টিকিট পাবেন বাইডেন। শুক্রবার বিকাল নাগাদ বাইডেন ওই ছয়টি ভোট নিজের ভাগে নিয়ে আসেন। ফলে নির্ধারিত ২৭০-এর চেয়ে আরো ৩টি বেশি পেয়ে ইতিহাস গড়লেন। অর্থাৎ ২৭৩ ভোটে এগিয়ে থেকে প্রত্যাশিত বিজয় লাভ করলেন বাইডেন। আর পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে হোয়াইট হাউস ছাড়ার কথা থাকলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সভ্য ও গণতান্ত্রিক সকল রীতিকে ধূলোয় মিশিয়ে ডোনাল্ট ট্রাম্প বাইডেনের বিজয়কে অভিনন্দন না জানিয়ে বরং নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেন। এতে শুধু মার্কিনীরা নয়, পুরো বিশ্ব স্তম্ভিত। হতাশাগ্রস্ত। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোন প্রেসিডেন্টের এমনটি অনৈতিক আচরণ এ প্রথম বার বলে গণমাধ্যমের বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে। আমরা জানি, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি অন্য অনেক দেশের চেয়ে আলাদা। এখানে মাত্র দুটি রাজনৈতিক দল জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধিত্ব করে। একটি রিপাবলিকান পার্টি, যা একটি রক্ষণশীল রাজনৈতিক দল। এটি ‘গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি’ নামে পরিচিত। অন্যটি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এ পার্টি উদারনৈতিক রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত। প্রায় সব সময়ই এ দুটি দলের কোনো একটি থেকেই দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। অবশ্য ছোট কিছু রাজনৈতিক দল আছে, যারা মাঝে মাঝে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিশ্বের একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি। যুদ্ধ, মহামারী বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো কোনো আন্তর্জাতিক সংকটের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট কী ভূমিকা রাখছেন, তার প্রভাব অপরিসীম। এসব কারণে মার্কিন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবং এর ফলাফল নিয়ে সারা বিশ্বের মানুষের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়। কিন্তু এ নির্বাচনের প্রক্রিয়াটা ঠিক কীভাবে কাজ করে, তা অনেকেই পুরোপুরি বুঝতে পারেন না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে প্রার্থীকে আসলে দুই ধরনের ভোটে জিততে হয়। একটি হচ্ছে ‘পপুলার’ ভোট বা সাধারণ ভোটারদের ভোট। আরেকটি হচ্ছে ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ নামে এক ধরনের নির্বাচকমন্ডলীর ভোট। নির্বাচনের প্রার্থীরা আসলে এ ইলেক্টোরাল ভোট জেতার জন্যই লড়াই করেন। এ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর জনসংখ্যার ভিত্তিতে। যে অঙ্গরাজ্যে জনসংখ্যা বেশি, সেখানে ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যাও বেশি। মোট ইলেক্টোরাল ভোট ৫৩৮টি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হতে গেলে একজন প্রার্থীকে অন্তত ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পেতে হবে। একেকটি অঙ্গরাজ্যের ইলেক্টোরাল কলেজ সেই রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারদের রায় অনুযায়ী ভোট দিয়ে থাকে। একটি রাজ্যে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি পপুলার ভোট পান, তিনি ওই রাজ্যের সব ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে যান। এভাবে একেকটি রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট যোগ হতে হতে যে প্রার্থী ২৭০-এর বেশি ভোট পান, তিনিই হন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেই হিসেবে জো বাইডেন ২৭৩ ভোট পেয়ে বিজয় লাভ করেছেন । এবার নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনের দিনে সব জনমত জরিপই জো বাইডেনের বিপুল বিজয়ের আভাস দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমও ছিল ট্রাম্পের বিপক্ষে। এরপরও বাইডেন সহজে এ বিজয় পাননি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেই ট্রাম্পকে পরাস্ত করতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ক্ষমতার পরিপূর্ণ স্বাদ পেতে বাইডেনকে ভীষণ বেগ পেতে হবে, কারণ প্রায় অর্ধেক নাগরিকের প্রতিনিধিত্ব করছেন ট্রাম্প। এরপরও বিশ্ববাসী আশা করছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিধ্বস্ত অর্থনীতি ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে বাইডেন এ মুহূর্তে গুরুত্বপুর্ণ নেতা।