যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে হতবাক অস্ট্রেলিয়ার কুর্দিরা, স্বজনদের নিয়ে উদ্বেগ

47

সিরিয়ার কুর্দি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল রোজাভায় গত সপ্তাহেই বোমার আঘাতে নিহত হয়েছেন আব্দুলরহমান খলিলের বাবা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কোনও ধরনের শেষকৃত্য ছাড়াই দাফন করতে হয় তাকে। খলিলের ভাষায়, ‘সবাই খুবই আতঙ্কিত ছিল। পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ। সবাই যখন দলবদ্ধ হয় তখনই শুরু হয় বোমাবর্ষণ।’ কেবল খলিলের বাবাই নয়; সিরিয়ার তুর্কি সীমান্ত অঞ্চলে এমন বিপন্ন পরিস্থিতিতে রয়েছেন অনেকেই। দীর্ঘদিন ধরে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ ছিল সিরিয়ার কুর্দি বিদ্রোহীদের হাতে।
সিরিয়ার বাইরেও দুনিয়াজুড়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে কুর্দি স¤প্রদায়ের মানুষ। অস্ট্রেলিয়া এর অন্যতম। এই জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের বসবাস সেখানে। সিরিয়ার তুর্কি সীমান্ত এলাকায় কুর্দি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তুরস্কের সামরিক অভিযানে তারা ভীষণ উদ্বিগ্ন। সিডনিসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে এখন এই স¤প্রদায়ের সদস্যদের আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে তুর্কি-সিরিয়া সীমান্তের অস্থিরতা।
কুর্দিরা বলছে, সিরিয়া থেকে হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তে তারা হতবাক। অন্য অনেকের মতো করেই এই সিদ্ধান্তকে তুর্কি সামরিক অভিযানের সবুজ সংকেত হিসেবে দেখছে তারা।
সিরিয়ার সশস্ত্র কুর্দি বিদ্রোহীদের তুরস্কের কুর্দিদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলে মনে করে আঙ্কারা। অন্যদিকে সিরিয়ার দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে প্রতিবেশী দেশ তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৩৬ লাখ সিরীয় শরণার্থী; যাদের এখন নিজ দেশে ফেরাতে মরিয়া প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। কুর্দি বিদ্রোহীদের হাত থেকে সিরিয়া সীমান্ত পুনরুদ্ধার করে সেখানে ওই শরণার্থীদের পুনর্বাসন করতে চায় তুরস্ক। এ লক্ষ্যের কথা জানিয়েই ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর অঞ্চলটিতে ‘অপারেশন পিস স্প্রিং’ নামের সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেয় আঙ্কারা। তুর্কি অভিযানের আগে সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় গত ১৭ অক্টোবর কুর্দি বিদ্রোহীদের সঙ্গে পাঁচ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় আঙ্কারা।
অস্ট্রেলীয় কুর্দিরা বলছে, আঙ্কারা পক্ষ থেকে কুর্দিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের যে অভিযোগ তোলা হয়েছে. তা আসলে বানোয়াট। এখানে তুরস্কের আরও বড় স্বার্থ রয়েছে।
আঙ্কারার অভিযানে বিপাকে পড়েছে সীমান্ত এলাকার কুর্দি জনগোষ্ঠী। গত বছরই তুর্কি অভিযানে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল ছাড়তে বাধ্য হন ইলিয়াসের বাবা। গত মাসে তার জায়গা হয় একটি শরণার্থী শিবিরে। সেখানেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। এখন ইলিয়াস দুশ্চিন্তায় রয়েছেন রোজাভায় থাকা পরিবারের বাকি সদস্যদের নিয়ে।
ইলিয়াস বলেন, দুই-একদিন পরপরই তিনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তবে সবসময়ই তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তা হয়। তিনি বলেন, আমি সবসময়ই আমার ভাই-বোনদের জন্য চিন্তিত থাকি। সেখানে অনেক শিশু আছে। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি শঙ্কিত। আমাদের মানুষদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি শঙ্কিত।’
সিডনিতে কুর্দি জনগোষ্ঠীর সদস্যরা পরাষ্পরের সঙ্গে কথা বলে নিজেরা হালকা হওয়ার চেষ্টা করেন। সবাই সিরিয়ার তুর্কি সীমান্ত এলাকায় থাকা স্বজনদের খোঁজ নেওয়ার চেস্টা করছেন। ব্রাস্ক আইভেরি নামে এক কুর্দি বলেন, অস্ট্রেলীয় কুর্দিরা সেখানকার সংঘাতকে তীব্রভাবে অনুভব করছে। এই সংঘাত কুর্দিদের একটি প্রজন্মের অসুবিধা ও বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
ব্রাস্ক আইভেরি বলেন, এই সংঘাত হয়তো দুনিয়ার আরেক প্রান্তে ঘটছে। কিন্তু আমাদের কাছে মনে হয়, যেন এটা এখানেই ঘটছে। কারণ এরা আমাদেরই পরিবার-পরিজন, আমাদেরই মানুষ। এটি দীর্ঘ ও মর্মান্তিক ইতিহাসের আরেকটি অধ্যায়। যে কোনও কুর্দি পরিবার, প্রতিটি কুর্দি পরিবারেই এটি কোনও না কোনওভাবে দাগ কাটে।