নিজস্ব প্রতিবেদক
বাঁশখালীর পুকুরিয়া থেকে সাতকানিয়া যাওয়ার রামপুরা ডিসি সড়কটি দিয়ে চলাচল করে শত শত সিএনজি অটোরিকশা। দূরত্ব কম থাকায় সাতকানিয়ার চারটি ইউনিয়নের লোকজন সড়কটি ব্যবহার করে বলেই সিএনজি চলাচলে মাত্রা বেড়ে যায়। এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে সেখানে সংঘবদ্ধ হয়েছে সিএনজি অটোরিকশা চোরচক্রের সদস্যরা। প্রায় সময় যাত্রীবেশে গাড়িতে উঠে চালককে চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগ করে ছিনিয়ে নেয়া হয় সিএনজি অটোরিকশা। এমন একটি চোরচক্রের সন্ধান পেয়ে গত দুইদিনে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে চারটি সিএনজি অটোরিকশাও উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আব্বাস প্রকাশ লেদু, শফিক আহমদ, মো. ইউসুফ, আনছার উদ্দিন। তাদের প্রত্যেকের বাড়ি বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নে নাটমুড়া নতুন পাড়া গ্রামে। এরমধ্যে আব্বাস গতকাল বাঁশখালী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দীন পূর্বদেশকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের সিএনজি অটোরিকশা চোরচক্রের ঘাঁটি পুকুরিয়া। সাতকানিয়া-বাঁশখালী সংযোগ সড়কে চলাচল করা গাড়িগুলো টার্গেট করে যাত্রীবেশে উঠে ছিনতাইকারীরা। তারা প্রথমে চালকের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে, পরে চেতনানাশক কিছু খাইয়ে গাড়িটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এমন একটি চোরাই হওয়া গাড়ি উদ্ধার করতে গিয়ে এ চক্রটির সন্ধান মিলেছে। পরে তাদের স্বীকারোক্তি মতে চারটি চোরাই সিএনজি অটোরিকশা উদ্ধারের পাশাপাশি চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে একজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, সাতকানিয়ার মো. কালাম নামের এক ব্যক্তির গাড়িতে যাত্রীবেশে ওঠে ছিনতাইকারীরা। কালামের গাড়িটি ছিনিয়ে নিয়ে তারা টেকনাফ নিয়ে যায়। সেখান থেকে গাড়িসহ আব্বাস প্রকাশ লেদুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি মতে একে একে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ চক্রের হাতে এখনো পর্যন্ত ১০টির মতো চোরাই সিএনজি টেক্সি আছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে।
পুকুরিয়া এলাকার কয়েকজন জানান, ধরা পড়া শফিক আহমদের পুকুরিয়া চৌমুহনীতে এবং মো. ইউসুফের বহনাপুকুর পাড় এলাকা সিএনজি অটোরিকশা মেরামতের গ্যারেজ আছে। এই গ্যারেজের আড়ালে তারা মূলত টেক্সি চোরাই কাজের সাথে জড়িত। এ চক্রের সাথে সিরাজ, ফরহাদ, মিজান, ইয়াছির নামে কয়েকজনও আছে। তারা রামপুরা সড়ক থেকে গভীর রাতে সিএনজি অটোরিকশা ছিনিয়ে নিয়ে প্রথমেই নতুন পাড়া এলাকায় ঢুকিয়ে ফেলে। সেখান থেকেই পরিস্থিতি বুঝে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয় গাড়িগুলো। এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এমন অপকর্মের সাথে জড়িত থাকলেও তারা স্থানীয় এক নব্য আওয়ামী লীগ নেতার প্রশ্রয়ে থাকায় কেউ মুখ খুলেনি।
ওসি কামাল উদ্দীন বলেন, ‘পুকুরিয়ার বাসিন্দা জহির নামে তাদের একজন দলনেতা আছে। তার বিরুদ্ধে ১৫ থেকে ২০টির মতো মামলা আছে। জহিরসহ আরও যারা গাড়ি চোরচক্রের সাথে জড়িত তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এখনো পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃতদের সাথে রাজনৈতিক কোন সম্পৃক্ততা আছে কিনা তা জানা যায়নি। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী কেউ জড়িত থাকলে তাও খতিয়ে দেখা হবে।’