যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা না করে সেতুর পুনঃনির্মাণ কাজ

35

বান্দরবানের লামা উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সরই খালের ওপর হাসনা ভিটা নামক স্থানের সেতুটি ধসে পড়ার প্রায় দু বছর পর পূণ:নির্মাণ কাজ শুরু করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। কিন্তু নির্মাণ কাজ শুরুর আগে যাতায়াতের জন্য সেতুর পাশে আরেকটি বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ফলে সরই-লোহাগাড়া সড়ক দিয়ে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার যাতায়াতকারী শিক্ষার্থী, পর্যটকসহ স্থানীয়রা। বিশেষ করে পার্বত্য লামা উপজেলার কয়েকশ বাগানে উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য বাজারজাত করণে দারুণ ব্যঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এতে কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন শতশত বাগান মালিকসহ স্থানীয় কৃষকেরা। শুধু তাই নয়, ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নির্মাণ কাজে ধীরগতিরও অভিযোগ স্থানীয়দের।
সূত্র জানায়, উপজেলার সরই খালের এপারে লামা উপজেলার সরই ইউনিয়ন, ওপারে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপাজেলার পুটিবিলা ইউনিয়ন। দুই পারের মানুষের যোগাযোগের সুবিধার্তে গত ২০ বছর আগে খালের হাসনাভিটা নামক স্থানে ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ করে বান্দরবানের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ সেতুটিই ছিল দুই উপজেলার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে পার্বত্য লামা উপজেলায় অবস্থিত কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে শত শত পর্যটক আসা যাওয়া করেন। কিন্তু বিভিন্ন সময় স্থানীয় ও বাহিরাগত কিছু প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এ সেতুর দু’পাশ থেকে অবাধে বালু উত্তোলনসহ ধারণ ক্ষমতার অধিক যানবাহন চলাচলের কারণে গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে নড়েবড়ে হয়ে যায়। এক পর্যায়ে অতিবর্ষণে সৃষ্ট পানির স্রোতের টানে ২০১৮ সালের ২০ জুন সেতুটির এক পাশ ধসে পড়ে।
এতে ভারি যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেও সেতুটির ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে পারত দু পারের মানুষ। গত মার্চ মাসে চট্টগ্রাম জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবানের পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পুরনো সেতুটির ছাদ ভেেেঙ্গ ফেলে। এতে যোগাযোগ সম্পুর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। কাজটি তদারকি করছেন লোহাগাড়া উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইদ্রিস ও সরই ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জানে আলম বলেন, সেতুটির নির্মাণ কাজ চলছে ধীরগতিতে। তিন মাসে শুধুমাত্র একটি পিলারের ফাইলিং করা হয়েছে মাত্র।
তারা আরো বলেন, কাজে ধীরগতির কারণে যারা প্রতিদিন লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, চট্টগ্রামে অফিস ও ব্যবসা বাণিজ্য করেন বা জরুরি প্রয়োজনে এ সড়ক দিয়ে বাধ্য হয়ে যাতায়াত করেন তারা পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে পার্বত্য লামা উপজেলায় উৎপাদিত কৃষি পন্য বাজারজাতে দারুন ব্যাঘাত হচ্ছে। তাই যাতায়াতের জন্য বিকল্প ব্যবস্থাসহ সেতুটি নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। একই সময় এ সড়কে চলাচলকারী সিএনজি চালক শফিকুল ইসলাম, ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালক এরশাদ আলীসহ আরো অনেকে এক সূরে বলেন, ক্যায়াজুপাড়া বাজার থেকে ব্রিজ পর্যন্ত যাওয়া যায়।
এরপর যাত্রীদের নামিয়ে দিতে হয়। আবার বাধ্য হয়েই যাত্রীরা মালামাল কাঁধে নিয়ে পায়ে হেঁটে খাল পার হয়ে ওপারে গিয়ে আবার গাড়িতে ওঠেন। তাও আবার খালে পানি কম থাকলে, খালে বেশি পানি থাকলে মোটেও সম্ভব হয়না। অনেক সময় হেটে খাল পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। এদিকে স্থানীয় মেরিডিয়ান গ্রæপের আম বাগান ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান বলেন, ইউনিয়নে বিভিন্ন ও ব্যক্তিমালিকানাধীন কয়েকশ আম বাগান রয়েছে।
ইতিমধ্যে এসব বাগানে এ আম পাকা শুরু করেছে। কিন্তু সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় কারণে আম বাজারজাতে দারুন ব্যঘাত ঘটছে। যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা না করে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সরই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ উল্ আলম ও লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইউনুছ এক সূরে জানান, দুই উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ সম্পুর্ণ বন্ধ থাকায় জনসাধারণের চলাচলসহ বিশেষ করে কৃষি খাত চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সেতু নির্মাণ কাজ দ্রæত সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তারা। তবে সেতু নির্মাণ কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নুরুল আলম জিকু বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমনের কারণে সেতুটির নির্মাণ কাজে কিছুটা বিঘœ ঘটেছে। আশা করি আগামী ৫-৬ মাসের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করা যাবে। তিনি আরো বলেন, আগেও বিকল্প যাতায়াতের জন্য সহযোগিতা করেছি।
বর্তমানে স্থানীয়রা যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থার উদ্যোগ নিলে সহযোগিতা করা হবে। এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা প্রকৌশলী দিবাকর রায় মুঠোফোনে জানায়, ঠিকাদারের সাথে আলাপ করে যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে। তাছাড়া খুব দ্রæততম সময়ের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।