মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা ওমিক্রন !

30

 

গত কয়েকদিনের শৈত্যপ্রবাহে সত্য সত্য দেহে কাঁপুনি ঝাঁকুনি দিয়া দরদ-ব্যথা আরম্ভ হইয়াছে। কাহারও কাহারও সর্দি-কাশি জ্বর হইয়াছে। দাদি কহিতেন-‘মাঘের শীতে বাঘ ডোরে’। অর্থাৎ মাঘ মাসের শীতে বাঘও আর্তনাদ করিতে থাকে। মাঘ মাসের শীতের দাপট বুঝাইতেই এই প্রবাদের জন্ম। ইনসান হাইওয়ান সমানভাবে কাঁপিতেছে। গুলবদন তামামদিন কাশ্মীরি শাল জড়াইয়া থাকে। মেহেরজানের পছন্দের সবুজ চাদর দুপুর তক গায়ে থাকে।আমি সকালের মিঠা রোদে আরাম কেদারায় বসিয়া পিঠটা খানিক ছেঁকিয়া নিই, এই ছুরতে শীত পার করিতেছি। ডর স্রেফ করোনা’র প্রাদুর্ভাবের। ওমিক্রন লইয়া তেমন চিন্তিত না হইলেও সতর্কতার কমতি নাই। কোনই বিমারকে কিংবা শত্রæকে হালকা ভাবে দেখিবার অবকাশ নাই। এই খতরনাক বিমার করোনা অনেক প্রাণ কাড়িয়া নিয়াছে। অনেক বাচ্চাকে এতিম করিয়াছে, অনেক নারীকে বিধবা বানাইয়াছে। ঠাÐাজনিত আবহাওয়ায় ইহার পালে হাওয়া লাগে। শীত আসিতে না আসিতে আবারও করোনা চোখ রাঙাইতে আরম্ভ করিয়াছে। গুলবদন আর মেহেরজান দুই জনই আমার চাইতে বেশি স্কুল পড়ুয়া নাতিদের জন্যই ঘাবড়াইয়া গিয়াছে। দীর্ঘ দুই বছর করোনার জন্য মুল্লুকের তামাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ইহাতে শিক্ষার্থীদের যাহা লোকসান হইয়াছে তাহা রি-কভার করিবার মওকা পাইতেছেনা ইহার মধ্যেই ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা ওমিক্রন’আসিয়া হাজির।
ওমিক্রন তেমন খতরনাক নয়। মাগার তাই বলিয়া ওমিক্রনের কাঁধে হাত রাখিয়া চলিবার মওকাও নাই। সকিনার বাপ কহিয়াছিলেন, ওমিক্রনকে সহজভাবে নেওয়াটাই হইবে বিপজ্জনক। যাহারা মাস্ক পরা, হাত ধোয়া অবহেলা জনিত পরিত্যাগ করিয়াছেন, ভিড় বাট্টা এড়াইয়া জীবন তরীর পালে মুক্ত বাতাস লাগাইতে মত্ত, তাহাদের জন্য যেকোনো সময় ওমিক্রন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করিতে পারে। শীত মৌসুম টাকে আমি বরাবরই আরামের ঋতু মনে করিতাম। খানা-পিনায় আরাম পাইতাম। মাগার ধীরে ধীরে শীত মৌসুমটা কেমন জানি বিষন্ন হইয়া উঠিতেছে। শীত আসিতে না আসিতে করোনা’র প্রাদুর্ভাব মানুষদেরকে দারুণ ভাবে শংকিত করিয়াছে একদিকে, অন্যদিকে গ্যাসের তীব্র সংকটে পড়িয়াছে জনজীবন। আওয়ামীলীগ সরকার উন্নয়ন করিতেছে। ইহাতে বিলকুল সন্দেহ নাই। পদ্মাসেতু, কর্ণফুলি টানেল সহ ফ্লাইওভার, ব্রিজ, কালভার্ট অনেক উন্নয়ন। মাগার রাস্তাগুলিতে বড় বড় গর্ত, যানজট। চালের দাম বৃদ্ধি, মাছ-মাংস সহ নিত্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে বাকি উন্নয়ন ভাসিয়া গিয়াছে।পতেঙ্গা কাটগড় হইতে সল্টগোলা ক্রসিং রাস্তাটা এতই ভাঙাচোরা তাহা বলিয়া বোঝানো যাইবেনা। এই মাজা ভাঙা সড়কের হাল দর্শনে বাকি উন্নয়ন হাওয়া ভর্তি বেলুন সদৃশ মনে হইতে থাকে। গাড়ি বাড়িয়াছে, মানুষ বাড়িয়াছে মাগার রাস্তার প্রশস্ততা বাড়ে নাই। যানজটের হাত হইতে নিষ্কৃতি পাইতে হইলে সড়ক প্রশস্তকরিতে হইবে। ফুটপাত ক্লিয়ার রাখিতে হইবে। বড় বড় লং ভেহিকেল, কনটেইনার, কভার ভ্যান, প্রাইম মুভার এই হেভী গাড়িগুলির চলাচলের সময় নির্ধারণ করিয়া দিতে হইবে। অন্যথায় এই কান্না থামিবার নহে। তাজ্জবের ব্যাপার হইল, শীতকালে আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে গ্যাসের চাপ কমিয়া যাইবার হেতু তালাশ করিয়া পাইলাম না।আরও একটা সমস্যা হইল বিদ্যুৎ বিভাগের যতকাজ ছুটির দিনের জন্য আটকাইয়া থাকিবে কেন ?ডিউটি টাইমে করিতে পারিবে এহেন কাজ ওভার টাইমে করিতে রাখিয়া দেয় তাও আবার ছুটির দিনে। ছুটির দিনের লাভ হইল ডাবল পয়সা পাওয়া যায়।অথচ এইদিন বেশিরভাগ মানুষ বাসায় থাকেন। বিদ্যুৎ না থাকিলে জীবনও খোঁড়াইয়া খোঁড়াইয়া চলে। বিদ্যুৎ এখন জীবনের অংশ। ছোট ছোট এই সমস্যাগুলি উন্নয়নের সূর্যকে ¤øান করিয়া দিতেছে। মাস্টার সাহেব একদা কহিয়াছিলেন-গ্যাস, বিদ্যুৎ, ওয়াসা ও রেল এই চারটি সরকারি প্রতিষ্ঠান যদি ঈমানদারির সহিত কাজ করিয়া থাকে এবং প্রতিষ্ঠানগুলির কর্মকর্তা কর্মচারীগণ যদি নিজেদেরকে পাবলিক সার্ভেন্ট রূপে উপস্থাপন করিতে লজ্জা না পান,তাহা হইলে স্রেফ দেশ প্রকৃত উন্নয়নের তরফ আগাইবে। আমরা দিনে কতবার আয়নায় নিজের চেহেরা দেখিয়া থাকি। অনেকে নিজেদের চেহেরা দেখিয়া দোয়া পড়িয়া থাকেন ‘হে আল্লাহ্, সমস্ত প্রশংসা তোমারই জন্য, তুমি আমাকে কতো সুন্দর করিয়া সৃষ্টি করিয়াছ। আমার এই সুন্দর চেহেরা ও শরীরের চাইতে আরও অধিক সুন্দর করিয়া দাও আমার চরিত্রকে’। দোয়াতেই নাকি ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। তাই মহান আল্লাহপাক যদি কবুল করিয়া থাকেন তাহা হইলে তাহারা নিজেরাও কামিয়াব হইবেন জনতাও খোশ হইবে।
আমাদের চরিত্র যদি হয় অনন্য তাহা হইলে বিবেক জাগ্রত হইবে, তামাম কিছু নিয়মের সহিত চলিবে।হারাম-হালাল শনাক্ত করিবার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়া পাইবে। যেইদিন হইতে আমরা হালাল-হারাম চিনিতে পারিব গেণদিন হইতে মুল্লুক অর্ধেক শোধরাইয়া যাইবে।কাপড়ে ছোপরে লিপস্টিক কাজলে বাহ্যিক উন্নয়ন নয়। অন্তরের আন্তরিক উন্নয়ন চাই। যেই উন্নয়নে মানুষকে সত্যিকারের আশরাফুল মাখলুকাত বানাইতে পারে। লজ্জা শরম হায়া আবারও ফিরিয়া আসিবে যাহা বিলুপ্তির পথে । নানান কথা ভাবিতে ভাবিতে তন্দ্রার মতো আসিয়াছিল হাত হইতে খবরের কাগজটা পড়িয়া গিয়াছিল। আচানক সকিনার বাপের কাশিতে চক্ষু মেলিয়া দেখিলাম সকিনার বাপ আসিয়া হাজির। ভাবিয়াছিলাম একটু লেখিতে বসিব। মাগার অসময়ে সকিনার বাপের আগমনে লেখার ঝোঁকটা মস্তক ঝাড়াইয়া ফেলিয়া সকিনার বাপকেই স্বাগতম জানাইলাম। সকিনার বাপ সোফায় তশরিফ রাখিতে রাখিতে গলার মাফলারটা ছহি তরিকায় ঠিকঠাক করিয়া কুশল বিনিময়ের পর কহিলেন, দীর্ঘদিন নির্বাচন লইয়া নানান ছুরতের বিতর্কে রাজনীতির ময়দান যখন উত্তপ্ত, ঠিক তখনই নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কিছুটা আশার আলো দেখিতে পাওয়া গেল। আমি নির্ঘাত জানি মাস্টার সাহেব থাকিলে এখানে তর্ক আরম্ভ হইত। আমি খামোশ রহিলাম তাহাকে তাহার মতামত ব্যক্ত করিতে বিলকুল বাধাগ্রস্তকরি নাই। বরং মাস্টার সাহেব আর সকিনার বাপের তর্কে আমি বিরক্তবোধ করিনা। কারণ তাহারা কখনও শালীনতার সীমা লংঘন করেন না। তাহাদের বক্তব্যে গোঁড়ামি থাকেনা। একজনের কথা শেষ না হইলে অন্যজন বলেননা। তাহাদের তর্কে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় থাকে বলিয়াই আমি খোশ দিলে তাহাদের বয়ান শুনি। এই কথা সত্য নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে কোনোরূপ সহিংসতা হয় নাই। ভোট কারচুপিরও ব্যাপক কোন অভিযোগ পাওয়া যায় নাই। ই ভি এম এর টেকনিক্যাল ত্রæটির কথা কেউ কেউ বলিয়াছেন। যাহা হোক, অধিকাংশ মানুষ কী বলে তাহাই ধর্তব্য। রাজনীতিতে নাকি শেষ কথা বলিতে কিছু নাই। তাহা হইলে সমাধানও নাই। বিচিত্র এই রাজনীতি।
রাজনীতি এখন রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণে নাই। এই গাড়ির লাগাম এখন ধনাঢ্য সমাজের একাংশের হাতে। সকিনার বাপ মাঝে মাঝে কাশিতেছেন। আমার ভয় হয়। এই ছুরতে কাশিয়া কাশিয়া জ্বর লইয়া অনেকে শয্যাশায়ী হইতে দেখিয়াছি। গোলাম আলি গরম গরম চা আর গণজ্জা পিঠা লইয়া আসিলে আমাদের আড্ডা থামিয়া গেল।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট