চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। গত এক সপ্তাহের অভিযানে সিএমপি ট্রাফিক বিভাগে মামলা হয়েছে এক হাজারেরও বেশি এবং গাড়ি জব্দ হয়েছে চার শতাধিক। চার জোনে ১৫টি বিশেষ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
গতকাল শনিবার সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত ১৫ জানুয়ারি থেকে মোটরসাইকেল, সিএনজি ট্যাক্সি, মিনি বাস, প্রাইভেট কার ও হিউম্যান হলারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। একই সাথে সিএমপি’র অপরাধ বিভাগের পক্ষ হতে বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চলছে।
ট্রাফিক বিভাগের তথ্য মতে, ট্রাফিক বিভাগের চারটি জোন মিলিয়ে চেক পোস্ট বসছে নিউ মার্কেট, কাজীর দেউড়ি, নতুন ব্রিজ (শাহ আমানত সেতু), জিইসি, খুলশী ডায়াবেটিক হাসপাতালের সামনে/গোলপাহাড়, কাপ্তাই রাস্তার মাথা/বহদ্দারহাট, অক্সিজেন/বালুছড়া, আগ্রাবাদ বাদামতলী, বড়পোল, টোল রুট ওয়াই জংশন/পাহাড়তলী থানা ক্রসিং, আকবরশাহ/সিডিএ ১নং, সিমেন্ট ক্রসিং, নিমতলা, সি-বিচ/এয়ারপোর্ট ক্রসিং।ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ হতে জানা গেছে, বিশেষ অভিযানের প্রথম দিন অর্থাৎ ১৫ জানুয়ারি মামলা ১১৭টি, গাড়ি জব্দ ৩৯টি, দ্বিতীয় দিন মামলা ১৯৬টি, জব্দ ৬২টি, তৃতীয় দিন মামলা ১৮৫টি, জব্দ ৫৬টি, চতুর্থ দিন মামলা ৬৮টি, জব্দ ১৭টি, পঞ্চম দিন মামলা ১৫৭টি, জব্দ ৬৪টি, ষষ্ঠ দিন মামলা ৪১টি, জব্দ ৭০টি, সপ্তম দিন মামলা ১২৪টি, জব্দ ৫৭টি, অষ্টম দিন মামলা ৬১টি, জব্দ ২৪টি। এভাবে গত ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ৯৪৯টি এবং গাড়ি জব্দ করা হয়েছে ৩৮৯টি। আবার গতকাল শনিবার মামলার পরিমাণ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানা গেছে। একইসাথে জব্দকৃত গাড়ির পরিমাণ চার শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
সরেজমিনে নগরীর কাজীর দেউড়ী মোড়, জিইসি, টাইগারপাস, আগ্রাবাদ, বড়পোলসহ বিভিন্ন মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, দায়িত্বরত সার্জেন্টরা প্রত্যেক গাড়ির কাগজপত্র যাচাই করে দেখছেন আর মামলা দিচ্ছেন। কাগজপত্রে অসংগতি পাওয়া গেলেই ড্যাম্পিংয়ে (জব্দ করে) পাঠিয়ে দিতে দেখা গেছে।
দায়িত্বরত সার্জেন্টকে বেশ তৎপর লক্ষ্য করা গেছে। তারা মোটরসাইকেল, সিএনজি ট্যাক্সি, প্রাইভেট কারসহ অন্যান্য গাড়ির অসংগতিগুলো খতিয়ে দেখছেন। কোন সমস্যা দেখলেই মামলা দিচ্ছে সার্জেন্টরা। আবার সার্জেন্টদের পাশাপাশি ট্রাফিক পরিদর্শকদেরও মাঠে থাকতে দেখা গেছে।
কাজীর দেউড়ীতে দায়িত্ব পালন করা সার্জেন্ট সুব্রত ধর বলেন, নির্বাচনী সহিংসতাকে কেন্দ্র করে আমরা গাড়ির বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। কোন গাড়িকে ছাড় দিচ্ছি না। কিছু কিছু গাড়িকে সিগন্যাল দিলে তারা বিভিন্ন জায়গায় লবিং করা শুরু করে কিন্তু এ অভিযানে আমরা সেগুলো দেখছি না। গাড়ির সব ওকে থাকলে ছেড়ে দিচ্ছি, খারাপ থাকলে মামলা দিচ্ছি।
নিউমার্কেট মোড় এলাকার যাত্রী সাখাওয়াত হোসেন সুমন জানান, নগরীর বিভিন্ন জায়গায় বর্তমানে অবৈধ গাড়ি এবং গ্রাম সিএনজি ট্যাক্সি চলাচল করছে আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ হতে অভিযান পরিচালনা করা হলেও এসব গাড়ির দৌরাত্ম এখনো পুরোপুরি থামানো যায়নি। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব গাড়ি এখনো চলাচল করছে।
চার জোনের (উত্তর, দক্ষিণ, বন্দর ও পশ্চিম) ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) মশিউর রহমান, মহিউদ্দিন খান, জসিম উদ্দিন ও বিপ্লব কুমার পাল যথাক্রমে বলেন, সর্বশ্রেণির যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অনেক পরিবহন ফিটনেস ফেইল থাকার কারণে ভয়ে রাস্তায় আসছে না। নির্বাচন এবং নির্বাচন পরবর্তী আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এ ব্যাপারে সিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ পূর্বদেশকে বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযানে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে আসছি। তার পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে যাতে কোন ধরনের সহিংসতা বা অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ হতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একই সাথে যেসব বিষয় নির্বাচনকে সহিংস করতে পারে সেগুলো প্রতিরোধ করতে আমাদের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন স্থানে তাৎক্ষণিক চেকপোস্ট হচ্ছে। যেহেতু মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাস এ ধরনের বাহনগুলো সহিংস ঘটনায় সচরাচর ব্যবহার করা হয় সেজন্য এগুলোকে নজরদারি করা হচ্ছে।