মোহনবাগানের বিপক্ষে লাওসের নাটকীয় জয়

32

উদ্বোধনী ম্যাচে গ্যালারি ভর্তি দর্শক কিন্তু খেলা ছিল একতরফা। চট্টগ্রাম আবাহনীর সামনে তেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে নি মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টস ক্লাব। অন্যদিকে দুই বিদেশি দলের খেলা দেখার জন্য গতকাল অনেক কম দর্শক সমাগম হলেও ম্যাচ হয়েছে দারুণ প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ ও উপভোগ্য। হাড্ডা হাড্ডি লড়াই আর চরম নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচটিতে ১০ জনের লাওসের ইয়ং এলিফ্যান্ট ফুটবল ক্লাবের কাছে ১-২ গোলে পরাজিত হয়েছে কলকাতার জায়ান্ট, ঐতিহ্যবাহী মোহনবাগান ক্লাব।
এ নিয়ে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ‘ক’ গ্রুপের দু’টি ম্যাচ শেষে স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী ও লাওসের ইয়ং এলিফ্যান্টস দুই পয়েন্ট করে সংগ্রহ করেছে, বিপরীতে পয়েন্টশূণ্য টিসি স্পোর্টস ও মোহনবাগান।
৫ জন স্প্যানিস ও একজন ত্রিনিদাদ-টোবাগোর এবং ৪ জন জাতীয় ফুটবলার নিয়ে মাঠে নামে মোহনবাগান। অন্যদিকে গড় ২১ বছরের ইয়ং এলিফ্যান্টস দলে কোন বিদেশি ছিলই না বরং প্রথমবারের মতো কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে এসেছে মাত্র ৪ বছর বয়সী সংগঠনটি। সময়কাল আর অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ মোহনবাগানের কাছে উড়ে যাওয়ারই কথা কচি-কাঁচাদের নিয়ে সাজানো ইয়ং এলিফ্যান্টসের! কিন্তু ছোট লংকায় কী যে ঝাল সেটাই যেন টের পেল পশ্চিমবঙ্গের জায়ান্টরা।
ম্যাচের শুরু থেকে মুহুর্মুহু আক্রমণ শানাতে থাকে মোহনবাগান। প্রথম ১০ মিনিটে ৩বার গোলে হামলা ইয়ং এলিফ্যান্টসদের মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। লাওসের ইয়ংরা প্রথম গোলের চান্স পায় ম্যাচের ১৬ মিনিটে। বোনপাচান বংকং অবশ্য হতাশই করেন স্থানীয় সমর্থকদের। কেননা খেলা দেখতে আসা অধিকাংশ দর্শকই গলা ফাটিয়েছে লাওসের ক্লাবটির নামে। ১৮ মিনিটে তিন স্প্যানিশের দক্ষতায় ঠিকই গোল আদায় করে নেয় মোহনবাগান। কর্নার কিক নেন মিডফিল্ডার কোর্তা উড়ে আসা বল ফ্রান্সিসকো হাভিয়ের গঞ্জালেস মুনোজের ছোঁয়া লেগে চলে যায় হুলেন কলিনেস ওলাজিওলার কাছে। হেড থেকে বল এলিফেন্টসের জালে জড়িয়ে দেন এই স্প্যানিশ উইঙ্গার।
পরে আক্রমণের জোর ধরে রেখে একের পর এক তোপ শানিয়ে গেছে মোহনবাগান। কিন্তু তারুণ্যে সাজানো এক দল নিয়ে আক্রমণ প্রতিহত করে প্রতি আক্রমণে উল্টো ৪৩ মিনিটে সমতায় ফেরে লাওসের ক্ষুদে হাতিরা।
প্রায় মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে আক্রমণে উঠে যান ছানতাছোনে থিনোলাথ। বল বাড়িয়ে দেন ফরোয়ার্ড সমজে কিউহানামের দিকে। তরুণ এ ফরোয়ার্ড দেখিয়েছেন দারুণ খেল। মোহনবাগানের দুই খেলোয়াড়কে বোকা বানিয়ে গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে বল প্লেসিং করে জড়িয়ে দেন জালে।
দ্বিতীয়ার্ধে দুদলই আক্রমণাত্নক ফুটবল খেলে। একের পর এক আক্রমণ করে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে ডিফেন্ডারদেরকে। বেশ কয়েকবার গোলরক্ষককেও ভালো পরীক্ষায় ফেলেন। ম্যাচ তখন পেন্ডুলামের মতো দুলছে দু’ দিকে।
তবে ম্যাচটি জমে ওঠে শেষ মুহূর্তে। ৮৭ মিনিটে মোহনবাগানের এক খেলোয়াড়কে নিজেদের ডি-বক্সের ভেতর বাধা দিলে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন এলিফেন্টস অধিনায়ক ভান্না বোনলোভোংসা। পেনাল্টি পায় ভিকুনার দল। কিন্তু সুযোগটি নষ্ট করেন জোশেভা কর্তা। তার স্পট-কিক ডান পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন জায়াসাভাত।
পেনাল্টি হাতছাড়া হওয়ার দুঃখ ভোলার আগেই মোহনবাগানকে পরের মিনিটে স্তব্ধ করে দেন সমজে কিউহানাম। চকিত পাল্টা আক্রমণে ছানতাছোনে থিনোলাথের মাটি কামড়ানো ক্রসে দারুণ এক প্লেসিংয়ে মোহনবাগান গোলরক্ষককে দ্বিতীয়বারের মতো বোকা বানিয়ে জোড়া গোলের সঙ্গে দলেরও জয় আদায় করে নেন এলিফেন্টস ফরোয়ার্ড। পরের মিনিটে প্রতি-আক্রমণে ওঠে মোহনবাগানের গোলরক্ষক দেবজিৎ মজুমদারকে পরাস্ত করেন সোমজে। থিনোলাথের ক্রস থেকে দ্বিতীয় গোল করেন তিনি। ম্যাচের যোগ করা সময়ে গোল শোধের চেষ্টা করেও সফল হয়নি মোহনবাগান।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন বিজয়ী দলের দু’টি গোলই করা স্ট্রাইকার সমজে কিওহানাম। তার হাতে পুরষ্কার তুলে দেন সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।
আজ কোন খেলা নাই। কাল দু’টি ম্যাচ-চেন্নাই-তেরেঙ্গুনু (৪টা) এবং বসুন্ধরা কিংস-গোকুলাম কেরালা (৭টা)।