মোছলেম উদ্দীনের চলে যাওয়া আওয়ামী লীগের জন্য বিরাট ক্ষতি

39

পূর্বদেশ ডেস্ক

চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য প্রায়ত মোছলেম উদ্দিন আহমদকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মোছলেম উদ্দিন দল ও দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। তাঁর চলে যাওয়া আওয়ামী লীগের জন্য বিরাট ক্ষতি। চিরদিন তাঁকে জাতি স্মরণ করবে।
গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে আনা শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
গতকাল সোমবার আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিনের মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। তার প্রতি সম্মান জানিয়ে সংসদে এক মিনিট নিবরতা পালন ও আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মোনাজাত করা হয়। পরে এই এমপির মৃত্যুতে চলতি সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদের বৈঠক মুলতবি করা হয়। মোছলেম উদ্দিন আহমদ গত রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও শোক প্রস্তাবের ওপর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সামশুল হক চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এবং জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ ও মসিউর রহমান রাঙ্গা বক্তব্য রাখেন।
মোছলেম উদ্দিনকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অসুস্থ থাকা সত্তে¡ও কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তাকে সভাপতি করেছি। তবে আমারও একটি দ্বিধা ছিল তিনি বেঁচে থাকবেন কিনা? কারণ, তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। আমি প্রতিনিয়ত সেই খবরটি পাচ্ছিলাম। গতকালও খবর নেই। খুব খারাপের দিকে চলে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি আমাদের ছেড়ে চলেই গেলেন’।
এই সংসদের সদস্য হতে পেরে তিনি খুবই আনন্দিত ছিলেন উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, ‘আমরা তাকে এক-দুইবার নমিনেশন দিয়েছিলাম। তখন হয়তো জয়ী হতে পারেননি। ২০২০ সালে নমিনেশন পেয়ে জয়ী হয়ে এলেন। তিনি খুবই খুশি ছিলেন যে, তিনি সংসদ সদস্য হতে পেরেছেন। জনগণের কথা সংসদে বলতে পারবেন। আজকে তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন’।
তিনি বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি করে তিনি উঠে এসেছেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ করেছেন। তার রাজনীতিতে কখনও কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বা তার আগের আন্দোলন সংগ্রামে তিনি সবসময় সক্রিয় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় অপারেশন চালাতে গিয়ে তিনি ও মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রেপ্তারও হন। তারা সেখানে যথাযথ গেরিলার মতোই কাজ করেছিলেন। সেখান থেকে নিজেদের মুক্ত করতে সক্ষম হন। মুক্ত হয়ে আবারও যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ায় যারা চট্টগ্রামে প্রতিবাদ করেছিলেন, মোছলেম উদ্দিন তাদের সঙ্গে ছিলেন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, খালেদা জিয়ার ভোট চুরির বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ সব আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকান্ডে তাঁর অবস্থান উপলব্ধি করেছি। সব সময় তাকে পাশে পেয়েছি’।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ একজন কর্মীকে আমরা হারিয়েছি। যিনি আমাদের দলের দুঃসময়ে পাশে যেমন ছিলেন, জাতীয় স্বার্থেও যথেষ্ট অবদান রেখে গেছেন। ক্যানসারে আক্রান্ত হলেও আমার চট্টগ্রামের জনসভার আয়োজন করতে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। এ সময় তিনি একটি কেমোও নেননি’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তরিকতা ও দলের প্রতি কর্তব্যবোধ, দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ এটাই ছিল সব থেকে বড় কথা। আওয়ামী লীগের জন্য এটা বিরাট ক্ষতি। ছোট বেলা থেকে চট্টগ্রামের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ। চট্টগ্রামের বহু নেতা চলে গেছেন’। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
চলতি সংসদে আওয়ামী লীগের ২১ জন সদস্যসহ ২৩ জন মারা গেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জানি না প্রতিবারই সংসদে আছি। বহু নেতাকর্মীকে হারাই। মানুষ মরণশীল। একদিন সবাইকে চলে যেতে হবে। তবে তার কর্মফলটাই মানুষ স্মরণ করবে’।