মোগাদিসুতে গাড়ি বোমায় ৭০ জনের বেশি নিহত

24

সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুতে এক শক্তিশালী গাড়ি বোমার বিস্ফোরণে ৭০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে কয়েকটি রাস্তার সংযোগস্থলে একটি চেকপয়েন্টে বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। নিহতদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ বহু বেসামরিক লোক রয়েছে, আহতের সংখ্যাও পঞ্চাশের বেশি।
মদিনা হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহামেদ ইউসুফ বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছেন, তিনি এ পর্যন্ত ৭৩টি মৃতদেহ পেয়েছেন, তবে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
এখন পর্যন্ত কেউ এ ঘটনার দায়িত্ব স্বীকার করেনি। তবে ইসলামপন্থী গোষ্ঠী আল-শাবাব রাজধানীতে প্রায়ই এ ধরণের আক্রমণ চালিয়ে থাকে।
যেখানে বিস্ফোরণটি ঘটে তার কাছেই ছিলেন জাকারিয়া আবদুকাদির। তিনি জানান, ‘আমি দেখেছি চারদিকে বহু মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। অনেকের দেহ এমনভাবে পুড়ে গেছে যে চেনার কোনো উপায় নেই’।
মোহামেদ আবদিরিজাক নামে একজন সোমালি এমপি বলেছেন, ওই আক্রমণে নিহতের সংখ্যা ৯০ এরও বেশি- কিন্তু তার দেয়া এ সংখ্যা নিরপেক্ষ সূত্র থেকে নিশ্চিত করা যায়নি। মোগাদিসুতে এখন যে সরকার রয়েছে তা জাতিসংঘ এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন-কর্তৃক স্বীকৃত, তবে গত ১০ বছর ধরেই আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠী আল-শাবাব এ সরকারকে উৎখাত করার জন্য সশস্ত্র বিদ্রোহী তৎপরতা চালিয়ে আসছে। তাদেরকে ২০১১ সালে রাজধানী মোগাদিসু থেকে উৎখাত করা হয়, তবে এখনো সোমালিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এ মাসেই মোগাদিসুতে রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের কাছে জনপ্রিয় এমন একটি হোটেলে আক্রমণ চালিয়েছিল আল-শাবাব- যাতে ৫ জন লোক নিহত হয়। আল-শাবাব এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় আক্রমণটি চালিয়েছিল ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে। মোগাদিসুতে একটি বিস্ফোরক-ভর্তি ট্রাক দিয়ে চালানো আক্রমণে প্রায় ৬০০ লোক নিহত হয়েছিল। অতীতে দেখা গেছে, যেসব আক্রমণে জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল সেসব ক্ষেত্রে আল-শাবাব আক্রমণের দায়িত্ব স্বীকার করেনি- যেমন ২০০৯ সালে মেডিকেল ছাত্রদের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আত্মঘাতী হামলা।
সোমালিয়া ছাড়াও কেনিয়া ও উগান্ডার মতো পূর্ব আফ্রিকার অন্যান্য দেশেও আল-শাবাব হামলা চালিয়েছে। সোমালিয়ায় ১৯৯১ সালে স্বৈরশাসক সিয়াদ বারে-কে উৎখাত করে বিভিন্ন গোষ্ঠীর সশস্ত্র সমরনায়করা, তবে এর পর থেকে তাদের নিজেদের মধ্যেই সংঘাত চলছে।
একটি উগ্র যুব-সংগঠন হিসেবে আল-শাবাবের উত্থান হয় ২০০৬ সালে, এবং তারা সৌদি-অনুপ্রাণিত ওয়াহাবি ইসলামের সমর্থক। অন্যদিকে সোমালিয়ার অধিকাংশ লোকই সুফি-মতাদর্শ অনুপ্রাণিত। আল-শাবাবের বর্তমানে সাত থেকে নয় হাজার যোদ্ধা আছে বলে মনে করা হয়। তারা তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় শরিয়া আইনের এক কঠোর সংস্করণ বাস্তবায়ন করে- যাতে ব্যভিচারের অভিযোগে মহিলাদের পাথর নিক্ষেপে হত্যা এবং চুরির দায়ে হাত কেটে দেবার কথা বলা হয়। তাদের নেতার নাম আহমদ উমর, যাকে আবু-উবায়দা নামেও ডাকা হয়। তাকে ধরিয়ে দেবার জন্য তথ্য দেবার বিনিময়ে ৬০ লক্ষ ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিভিন্ন সময় খবর বেরিয়েছে যে আল-শাবাবকে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিদেশি জিহাদিরা সোমালিয়ায় গেছে। আল-শাবাবের সাথে আফ্রিকার অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ আছে বলেও খবর পাওয়া গেছে- যার মধ্যে আছে নাইজেরিয়ার বোকো হারাম এবং সাহারা মরুভূমিতে সক্রিয় ‘আল-কায়েদা ইন দি ইসলামিক মাগরেব’। খবর বিবিসি বাংলার