মেসির অপূর্ণতা ঘুচানো সর্বশেষ মিশন দেশের ফুটবলারদের এগিয়ে যাবার প্রেরণা

8

বাংলাদেশের অধিকাংশ নাগরিক ফুটবলপ্রেমি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে আন্তর্জাতিক ফুটবলে আমাদের অবস্থান খুবই দুর্বল। একসময় আমরা ক্রিকেটেও দুর্বল ছিলাম। বিশ্ব ক্রিকেটে এক সময়ের দুর্বলরা বর্তমানে দাপটের সাথে খেলছে। ক্রিকেট কুলীনরা এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে অভিজাত দল হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে। এটা আমাদের ক্রিকেটারদের চর্চা, শ্রম, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের ফসল। একসময় দেশের মানুষ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে মাঠে বাংলাদেশের পতাকা উড়–ক তা কামনা করতো। একদিন আকরাম খানরা কঠিন পরিশ্রম ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে জায়গা করে নিয়ে দেশের মানুষের আশা-আখাক্সক্ষা পূরণ করেছিল। বিশ্ব ফুটবলে দেশের ফুটবলাররা বাংলাদেশের পতাকাকে উচ্চকিত করুক এমন আশা সমগ্র দেশবাসীর। প্রথমেই বলেছি, নিঃসন্দেহে এ দেশের মানুষ ফুটবল খেলা দেখার জন্য পাগলপারা।
বিশ্বকাপ ফুটবলে আমাদের অংশগ্রহণের সুযোগ এখনো হয়নি। তাই বলে দেশের মানুষ বিশ্বকাপ ফুটবলে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, জার্মান, ইতালি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, স্পেন ইত্যাদি বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবল টিমকে সমর্থন করে। স্পেনিস, ইংলিশ, ইউরোপীয়ান লীগের খেলা উপভোগ করে। বিশ্বকাপ ফুটবলে এদেশের অধিকাংশ নর-নারী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের ছান্দিক ও নান্দনিক খেলা দেখে এ দু’টি ফুটবল দলকে সমর্থন করে। দেশে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থক সমানে সমান। তাদের হার-জিত নিয়ে এদেশে মারামারি হতে খুনাখুনি পর্যন্ত হতে দেখা যায়। অথচ আমাদের দেশ বিশ্ব ফুটবল আসরের জায়গা করে নিতে পারেনি। বিশ্ব ফুটবল র‌্যাঙ্কিং এ আমাদের অবস্থান প্রায় ৫০ দেশের নিচে। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। দেশের ক্রিকেটাররা অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারলে একই দেশের ফুটবলাররা পারবে না কেন ? এ প্রশ্ন সমগ্র দেশবাসীর। গত ১১ জুলাই অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকার ফুটবল শিরোপা লড়াই দেশের মানুষ দেখেছে। কোপা আমেরিকায় বিশ্বকাপ ফুটবলের দুই পরাশক্তি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা অন্তর্ভুক্ত থাকায় কোপা আমেরিকা কাপকে এদেশের মানুষ খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে থাকে। স্পেনিস লীগের টিম বার্সেলোনায় অধিনায়ক মেসি সমগ্র বিশ্বের প্রেক্ষাপটে একজন শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়। তার ধৈর্য্য, ফুটবল নৈপুণ্য, গোল করার ক্ষমতা এবং গোল করানোর ক্ষমতা অসাধারণ। মেসি বার্সেলোনাকে অনেক উঁচুতে নিয়ে গেছে। মেসি ছয়বার বিশ্বসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার অর্জন করেছে। সে আর্জেন্টিনাসহ বিশ্ব ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতার সম্মানে রয়েছে। অথচ এই মেসির নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা দল বড় কোন ফুটবল আসরের শিরোপা অর্জন করতে সক্ষম হয় নি। ক্লাব ফুটবলে তার জুড়ি এখনো নেই। বিশ্বকাপ ফুটবল ও কোপা আমেরিকা কাপে মেসির ব্যর্থতা ছিল ধারাবাহিক।
আজ থেকে ২৮ বছর পূর্বে আর্জেন্টিনা কোপা আমেরিকা কাপ জিতেছিল। দীর্ঘ খরার পর মেসির নেতৃত্বে আর্জেন্টিনার কোপা আমেরিকা কাপ জয় আমাদের ফুটবলারদের জন্য প্রেরণার উৎস হতে পারে। আমরা এবারের বিজিত দল ব্রাজিল এবং বিজয়ীদল আর্জেন্টিনার সকল খেলোয়াড়কে সুন্দর একটি ফাইনাল খেলা উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই। আর আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়ক মেসি এবং জয়ের নায়ক ডি মারিয়াকে অভিনন্দন জানাই। দীর্ঘ ২৮ বছর পর মেসি বাহিনী বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবল দল ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপার শিরোপা অর্জন করতে পারলে আমাদের দেশের ফুটবলাররা বিশ্ব ফুটবলে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারবে না কেনÑ এমন প্রশ্ন দেশবাসীর। সরকার দেশের ফুটবলারদের উন্নতমানের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে, দেশের খেলোয়াড়রা দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে ফুটবল চর্চা করলে অবশ্যই দেশ একদিন বিশ্ব ফুটবলে নিজেদের যোগ্য দল হিসেবে তুলে ধরতে পারবে এমন আশা দেশবাসীর।