মেরিন ড্রাইভে রূপ নিচ্ছে ‘সুপার ডাইক’

167

মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দীর্ঘতম বেড়িবাঁধ কাম সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বছর দুয়েক আগে ‘সুপার ডাইক’ নামে প্রকল্পটির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রাথমিক কার্যক্রমও শুরু করে সংস্থাটি। বর্তমানে প্রকল্পটি পাউবোর হাতছাড়া হয়েছে। ‘মেরিন ড্রাইভ’ নামেই সড়ক নির্মাণ করে সমুদ্রের ক‚ল ঘেঁষে মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পৌঁছাতে চায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই কাজও চলমান আছে। ২০২১ সালের আগস্টে সমীক্ষা কাজ শেষ হলেই ডিপিপি তৈরি করা হবে। দীর্ঘতম এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির চাকাও সচল হবে। মিরসরাই থেকে উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয়টি উপজেলা ঘেঁষেই প্রকল্পটি কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে যুক্ত হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল ওয়াহেদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পটি হবে দীর্ঘতম একটি সড়ক। এ সড়কটির সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ চলছে। এক বছরব্যাপী চলমান সম্ভাব্যতা যাচাই ২০২১ সালের আগস্ট মাসে শেষ হবে। এ সমীক্ষা শেষ হলেই প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণসহ সকল ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
জানা যায়, মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী এলাকা ও সীতাকুÐ এলাকায় বাঁধ নির্মাণ কাজ চলমান অবস্থায় প্রকল্পটির প্রাথমিক ধারণা পায় পাউবো। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে প্রকল্পটির পরিকল্পনা নেয় পাউবো। নামকরণ করা হয় সুপার ডাইক। প্রকল্পটির ধারণা নিয়ে পাউবো এগুতেই সওজ প্রকল্পটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। মেরিন ড্রাইভ নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এ সরকারি সংস্থাটি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে নিয়োগকৃত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে। প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ সওজ নিলেও সম্ভাব্যতা যাচাই কাজে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজে আছেন পাউবোর কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তা। যারা এই প্রকল্প পরিকল্পনায় শুরুর দিকে যুক্ত ছিলেন। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএমইটি ইন্টারন্যাশনালের কয়েকজন কর্মকর্তা পাউবোর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করে পাউবোর কাছে থাকা এ প্রকল্পের তথ্য চেয়েছেন। ইতোমধ্যে তথ্য সরবরাহের বিষয়ে নমনীয় হয়েছে পাউবো।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী অখিল কুমার বিশ্বাস পূর্বদেশকে বলেন, ‘এ প্রকল্পটির আমরা নাম দিয়েছিলাম সুপার ডাইক। পরে এটিকেই সওজ নাম দিয়েছেন মেরিন ড্রাইভ। আমরা এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম। মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৭০ কিলোমিটার হয়। ইতোমধ্যে সওজ একটি সমীক্ষা শুরু করেছে। অস্ট্রেলিয়ান একটি কোম্পানি এটি নিয়ে স্টাডি করছে। সমীক্ষার কাজে থাকা এমন কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি আমার সাথে দেখাও করেছেন। এ প্রকল্পে অনেক নদী, খাল ক্রস করবে। সেখানে ব্রীজ-কালভার্ট করতে হবে। আবার প্রায় ৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধও করতে হবে। সেগুলো করতে গেলে উভয় দপ্তরের মতামত নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। যে নামেই হোক সওজ ও পাউবো একসাথেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।’
সূত্র জানায়, মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ১৭০ কিলোমিটার সড়ক করার চিন্তাভাবনা করছে সওজ। যেটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভে গিয়ে যুক্ত হবে। সে অংশের ৮০ কিলোমিটারসহ যুক্ত হলে মিরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। এ বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা ও অবকাঠামো ব্যবহার করতে হবে। যে কারণে প্রকল্পে পাউবোর অংশীদারিত্বও থাকবে। মিরসরাই, সীতাকুন্ড, আনোয়ারা, বাঁশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া অংশের ১৭০ কিলোমিটার জায়গার মধ্যে প্রায় ৮০ কিলোমিটার জায়গা পাউবোর বেড়িবাঁধ নির্মাণ জরুরী। এই ৮০ কিলোমিটার এলাকার বাঁধ নির্মাণে পাউবোর প্রয়োজনীয়তা আছে। যে কারণে পাউবো ও সওজ মিলিতভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারে।
সড়কটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে শুধু পর্যটন শিল্প থেকেই বছরে আয় হবে হাজার কোটি টাকা। কাঁচা পণ্যেও ব্যবসা, বøু ইকোনমি ও সামুদ্রিক অর্থনীতির বিকাশে মেরিন ড্রাইভ সড়ক গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে। মেরিন ড্রাইভের কারণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের চেহারা পাল্টে যাবে। সুরক্ষিত হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপক‚ল।