মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ অবিতর্কিত রাখা জরুরি

17

চিকিৎসা ক্ষেত্রে দেশ পূর্বের তুলনায় অনেক দূর এগিয়েছে। সুস্থ সবল জনশক্তি তৈরিতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর অর্থ এই নয় যে, যেনতেন প্রকারের কিছু শিক্ষার্থীকে এম বি বি এস সার্টিফিকেট প্রদান। চিকিৎসা একটি স্পর্শকাতর পেশা। মেধাহীন নিছক হাজার হাজার ডাক্তার তৈরির ব্যবস্থা জাতির জন্য সুখকর হবে না। অধ্যাবসায়ী, মেধাবী, পরিশ্রমি শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা শাস্ত্রে অধ্যয়ন করে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে সক্ষম। চিকিৎসা সেক্টরে আমাদের দেশ উন্নত বিশে^র চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে অনেক দূর পিছিয়ে রয়েছে। বর্তমানে প্রচলিত শিক্ষার মতো বিশেষায়িত শিক্ষা ও বাণিজ্যিক প্রবাহ সৃষ্টি হওয়ার কারণে অর্থের বিনিময়ে এম বি বি এস সার্টিফিকেট প্রাপ্তি সহজতর করে তুলেছে। যার ফলে দেশে অসংখ্য ডাক্তার বের হলেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে তারা মানসম্মত ভূমিকা রাখতে পারছে না।
আমাদের দেশের অভিভাবকরা বিজ্ঞান বিভাগে পড়লেই সন্তানদের ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানানোর আশা পোষণ করেন। এতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু একথাও তো সত্য যে, অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী সন্তানকে ডাক্তার বানানোর প্রবল ইচ্ছায় অভিভাবকরা প্রাইভেট মেডিকেলের দ্বারস্থ হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে প্রাইভেট মেডিকেলগুলো শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট দেয়ার ব্যবস্থা করে রেখেছে। বলাবাহুল্য যে, বহু প্রাইভেট মেডিকেল বিশেষায়িত এই শিক্ষা ব্যবস্থার সহায়ক অনেক যন্ত্রপাতি ও পরিবেশ নেই। আমরা দেশের সকল শিক্ষার্থীকে ডাক্তার বানানোর ঘোরে রেখেছি। অথচ অনেক শিক্ষার্থী প্রাইভেট মেডিকেল হতে পাস করার পর মান সম্পন্ন চিকিৎসা সেবা করার যোগ্যতা অর্জন করছে না। ফলে দেশের চিকিৎসা সেক্টরে সরকারি বেসরকারি চিকিৎসকদের মধ্যে মান সম্মত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষায়িত শিক্ষায় মান সম্পন্ন শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেয়া জরুরি।
প্রাইভেট মেডিকেলের সংখ্যা অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় ডাক্তারির মতো বিশেষায়িত শিক্ষার মান দেশে নি¤œমুখী হয়ে পড়েছে। সরকার তথা স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর চিকিৎসা শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তাতে বি পি এম সি এ’র স্বার্থ তথা ব্যবসায় ভাটা পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাতে তারা পূর্বের নিয়মে পাস করা সকল শিক্ষার্থীকে মেডিকেলে আবেদনের যোগ্য ঘোষণা, কামনা করছে। দেশে কত ডাক্তার বের হচ্ছে তার তুলনায় কতজন মান সম্মত ডাক্তার বের হচ্ছে তার উপর জোর দেয়া সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় থাকা প্রয়োজন।
আমরা ডাক্তারি শিক্ষার মতো বিশেষায়িত শিক্ষাকে বাণিজ্যিক আবহে ছেড়ে দেয়ার পক্ষে নই। ব্যবসা করার বহু সেক্টর দেশে রয়েছে। ব্যবসায়ীরা শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য করা থেকে ফিরে আসুক এমন প্রত্যাশা সকল বিবেকবান নাগরিকের। দেশে বিশেষায়িত শিক্ষায় ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। সবাই ডাক্তার হলে রোগী হবে কে ? দেশের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারসহ বিশেষায়িত শিক্ষার মান দিন দিন নি¤œ মুখী হয়ে পড়ছে। বিশেষায়িত শিক্ষার মান রক্ষায় প্রাইভেট তথা বাণিজ্যিক বিশেষায়িত শিক্ষার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরো কঠোর নির্দেশনা প্রদান জরুরি। মানহীন কোন শিক্ষাই দেশের কল্যাণ বয়ে আনবে না। সার্টিফিকেট নির্ভর শিক্ষার ভয়াল থাবা হতে দেশের সাধারণ শিক্ষা ও বিশেষায়িত শিক্ষাকে রক্ষা করা সময়ের দাবি।
দেশে যে পরিমাণ শিক্ষিতের হার বাড়ছে সে পরিমাণ মানসম্মত শিক্ষিত নাগরিক সৃষ্টি হচ্ছে না। যার কারণে দেশে সুশিক্ষিত নাগরিক তৈরি হচ্ছে না। শিক্ষাকে নিছক সার্টিফিকেট নির্ভর তথা পাস নির্ভর না রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহকে মানসম্মত শিক্ষার উপযোগী করে গড়ে তুলা প্রয়োজন। পরীক্ষা পাস ভিত্তিক বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় পাসের প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদের ঠেলে না দিয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহকে পরিবেশ সম্মত করে গড়ে তুলার ব্যাপারে শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। নয় তো দেশে সাধারণ অথবা বিশেষায়িত শিক্ষা হতে মানসম্মত সুশিক্ষিত নাগরিক আশা করা কল্পনা প্রসূত হবে।