মেট্রোরেল : চট্টগ্রামে স্বপ্নযাত্রা তথ্যমন্ত্রীর হাত ধরে

33

তুষার দেব

রাজধানী ঢাকার পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরী চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্পের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন অনেকেই। তবে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে এ নিয়ে দেন-দরবারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান ড. হাছান মাহমুদ। তিনি নিজেই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরের যোগাযোগ অবকাঠানোর বর্তমান চিত্র ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা বিবেচনায় মেট্রোরেলের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্পর্কে সরকারের শীর্ষমহলে বোঝাতে সক্ষম হন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই হাতের মুঠোয় ধরা দিয়েছে মেট্রোরেলের স্বপ্ন। ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে যার সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম শুরু করেছে কোরীয় কোম্পানি।
নগরীর পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন বøু বে ভিউতে গত ৩১ জানুয়ারি আয়োজিত আরবান ট্রান্সপোর্টেশন মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং মেট্রোরেলের প্রাকসম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম শুরুর অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ তার বক্তব্যে নিজেই উল্লেখ করেন, চট্টগ্রামের মানুষও ভাবেননি চট্টগ্রামে মেট্রোরেল হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিশেষভাবে নিবেদন করেছি চট্টগ্রামে মেট্রোরেল করার জন্য। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন মেট্রোরেল করার জন্য। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী তাতে সায় দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, পাহাড় কাটার কারণে চট্টগ্রামের যে নান্দনিকতা নষ্ট হয়েছে মেট্রোরেল নির্মিত হলে তার অনেকটা ফিরে আসবে।
চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কার্যক্রম গ্রহণকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ উল্লেখ করে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্টিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম তালুকদার পূর্বদেশকে বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার হচ্ছে চট্টগ্রাম। অর্থনীতির লাইফলাইনের উন্নয়ন মানেই সারাদেশের উন্নয়ন। বঙ্গবন্ধু টানেলসহ যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নতির কারণে নিকট আগামীতে চট্টগ্রাম আরও অনেক বেশি ব্যস্ত শহরে পরিণত হতে যাচ্ছে। এমন সময়ে এখানে মেট্রোরেল ব্যবস্থাসহ যোগাযোগ মহাপরিকল্পনা গ্রহণের পদক্ষেপ নিঃসেন্দেহে সময়োপযোগী ও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই পদক্ষেপের জন্য তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট সকলকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, চট্টগ্রামে মেট্রোরেল হবে। এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। দেশের আমদানি-রপ্তানির বেশির ভাগ হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। চট্টগ্রাম দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের তরুণ ও ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বপ্নের ‘ড্রিম প্রজেক্ট’ এমআরটি। ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল বা এমআরটির মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজের সূচনা হয়েছে।
চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ চট্টগ্রামে মেট্রোরেল করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) চট্টগ্রামে মেট্রোরেল করার উদ্যোগ নিয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তত্ত¡াবধানে এই কাজ হবে।
এর আগে গত বছরের ২২ নভেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চট্টগ্রামে মেট্রোরেল চালু করার আগে প্রাথমিক সমীক্ষা পরিচালনার জন্য ৭০ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান এন্ড প্রিলিমিনারি ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর আরবান মেট্রোরেল ট্রানজিট কনস্ট্রাকশন ফর চিটাগাং মেট্রোপলিটন এরিয়া’ শীর্ষক এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটি শুরুর সময় ধরা হয়েছে বিদায়ী ২০২২ সালের অক্টোবর, যা শেষ হবে ২০২৫ সালের মার্চে। ৭০ কোটি টাকার এই প্রকল্পে কোরিয়ার সাহায্য সংস্থা কইকা দেবে ৫৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটির আওতায় প্রাথমিক সমীক্ষা করার উদ্দেশ্য হলো, চট্টগ্রাম শহর এলাকার জন্য পরিবহন ব্যবস্থার একটি মহাপরিকল্পনা করা, মেট্রো সিস্টেম চালু করা ও ট্রাফিক ব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ অপেক্ষার পর গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেল যুগে পা রাখে বাংলাদেশ। ওইদিন সকাল ১১টায় দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর রাজধানীর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে দুপুরে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী মেট্রোরেল যাত্রা শুরু করে। পরদিন তা জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, মেট্রোরেল পুরোপুরি চালু হলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার এবং দিনে পাঁচ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। ছয়টি কোচসংবলিত প্রতিটি একমুখী মেট্রো ট্রেন প্রতিবারে সর্বোচ্চ দুই হাজার তিনশ’ আটজন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। মেট্রোরেলে অল্প সময়ে অধিক সংখ্যায় যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হয়। প্রথম ধাপে চলবে ১০ সেট ট্রেন। প্রস্তুত থাকবে আরও দুই সেট ট্রেন। মাঝের চার কোচের প্রতিটিতে যাত্রী ধারণক্ষমতা তিনশ’ ৯০ জন। দুই পাশের ট্রেইলার কোচের (ইঞ্জিন) প্রতিটিতে সর্বোচ্চ যাত্রী ধারণক্ষমতা তিনশ’ ৭৪ জন। নারী যাত্রীদের জন্য রয়েছে আলাদা কোচের ব্যবস্থা। পরিবহন বিশেষজ্ঞদের অভিমত, মেট্রোরেল চালু হওয়ায় ছোট যানবাহনের ব্যবহার কমবে। জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানির ব্যবহার বহুলাংশে কমে যাবে। ঢাকা মহানগরীর যাতায়াত ব্যবস্থায় ভিন্ন মাত্রা ও গতি যোগ হবে। মহানগরবাসীর কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হবে। যানজট বহুলাংশে কমবে। যানজটের কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে তা সাশ্রয় হবে।