মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ঈদ উৎসব নয় লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে

18

কোভিড সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ‘কঠোর লকডাউন’ ব্যবস্থার তৃতীয় ধাপ শুরু হতে যাচ্ছে কাল থেকে। তবে এবার কঠোরতার জায়গায় শর্তসমূহে কিছুটা শিথিলতা সুযোগ রাখা হয়েছে। চলমান লকডাউনে ‘কঠোরতা’টি অনেকটা কাগুজেই সীমাবদ্ধ মনে হলেও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তা কিছুটা কার্যকর হয়েছে বলা যায়। তবে এবার ঈদকে সামনে রেখে ঈদের পর পর্যন্ত ১০দিনের এ লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক সিটে নগর ও মফস্বল শহরে অভ্যন্তরীণ গণপরিবহন চালানোর সুযোগ রাখা হয়েছে, কিন্তু আন্তঃজেলায় গণপরিবহনে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়েছে। সরকার মনে করছে, ঈদকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত করলে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। ঈদ উৎসব করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ যেন মৃত্যুঝুঁকিতে না পড়ে, সেদিক বিবেচনা করে জনগণকে সুরক্ষার কৌশল হিসাবে আন্তঃজেলায় গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রাখা হয়েছে। অপরদিকে শপিংমল, মার্কেট, দোকান ও কাঁচাবাজার পূর্বের নিয়মেই খোলা রাখা যাবে। তবে শপিংমল তথা ঈদের মার্কেটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান গ্রহণের কথা বলেছে সরকার। এ জন্য প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি মার্কেটগুলোতে তদারকি টিম গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যথায় মার্কেট বা শপিংমল বন্ধ করে দেয়ার সতর্কতা জারি করা হয়। দেখার বিষয় এবারের ঈদকে সামনে রেখে দেয়া লকডাউন কতটুকু কার্যকর হয়। আমরা লক্ষ্য করে আসছি, সরকারের ঘোষিত বিগত লকডাউনগুলোতে আন্তঃজেলা গণপরিবহন, বাস, ট্রেন ও লঞ্চ বন্ধ থাকলেও ঘরমুখো মানুষগুলোকে থামানো যায়নি। ঢাকা ও চট্টগ্রামের হাজারো মানুষ প্রাইভেট গাড়ি, রিকশা, অটো রিকশা, কার, মাইক্রো, ট্রাক এমনকি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়েও গাঁও-গেরামে বা একজেলা থেকে অন্য জেলায় পাড়ি জমান। এবারের লকডাউনে আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও শহরের নিকটবর্তী জেলাগুলোতে মানুষের যাতায়াত ঠেকানো যাবে বলে মনে হয়না, যদি না শহরের প্রবেশ পথগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান সৃষ্টি করা না হয়।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, মানুষ নিজ থেকে সচেতন না হলে, প্রশাসন কিংবা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ধরে-বেঁধে মানুষকে ঘরে রাখতে পারবে না। মহামারি করোনা যেখানে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর হাতছানি দিয়ে আমাদের ডাকছে, সেই দুঃসময়ে মানুষের এমন আচরণ সত্যিই দুঃখজনক। দেশের অধিকাংশ জায়গায় লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা ভেঙেই গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি মানুষকে রাস্তায় যাতায়াত করতে দেখা যাচ্ছে। এমনকি স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই মাস্ক ছাড়াই ঘোরাফেরা করছে বলে গণমাধ্যমে খবর আসছে। লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে না পারলে সামনে হয়তো মৃত্যুর হার আরো বেশি দেখতে হবে। লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদেরও এখনই সচেতন হতে হবে। মহামারি রূপ নেয়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আগামী কাল ৬ মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত ১০ দিনের জন্য নতুন করে বিধিনিষেধ (লকডাউন) ঘোষণা করেছে সরকার। ৩ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। লকডাউনের মধ্যে পালনের বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। আমরা বুঝতে পারছি, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা সত্ত্বেও পোশাক কারখানা, দোকানপাট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত অর্থনীতির ক্ষতি এড়ানোর উদ্দেশ্যে। কিন্তু এটা কতটা যুক্তিসঙ্গত সেটা ভাবার বিষয়। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের আক্রান্তের দিকে তাকালে তা স্পষ্ট হয়ে উঠে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহের দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশে করোনা মহামারি ভারত ও ইউরোপ-আমেরিকার মতো ব্যাপক সংক্রমণ ও প্রাণঘাতী রূপ নিলে দেশের সামাজিক বাস্তবতা ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভেবে আতঙ্কিত হতে হয়। আমরা বলব এক্ষেত্রে চীনের অভিজ্ঞতা ও পদক্ষেপ থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশকে আরো সতর্ক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিদিন আমরা মৃত্যুর খবর পাচ্ছি। এ মৃত্যুর মিছিল কোথায় গিয়ে শেষ হবে, তা আমরা এ মুহূর্তে বলতে পারব না। জীবন রক্ষা ও অর্থনীতির ক্ষতি ন্যূনতম মাত্রায় রাখাÑ এই উভয় কূল রক্ষার চ্যালেঞ্জে সবাইকে বিচক্ষণতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্র ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, গাড়ি ও কর্মস্থল নিয়মিত পরিষ্কার করা ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা, হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজেশনের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সরবরাহ করাসহ মাস্ক পরার ক্ষেত্রে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।