মুহাম্মদ হাবিবর রহমান (১৯২৩-১৯৭১)

10

মুহাম্মদ হাবিবর রহমান, শিক্ষাবিদ, শহীদ বুদ্ধিজীবী। জন্ম ১৯২৩ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলার বালিয়াধর গ্রামে। তিনি ১৯৩৮ সালে স্থানীয় দত্তপাড়া হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪০ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে আই.এস-সি পাস করেন।
১৯৪৩ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গণিতে বি.এস-সি অনার্স এবং ১৯৪৬ সালে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে এম.এস-সি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি ঢাকা কলেজে গণিতের অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ঢাকা কলেজে অধ্যাপনাকালে তিনি সরকারি বৃত্তি লাভ করে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯৫১ সালে ইংল্যান্ড যান এবং ১৯৫৩ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে ট্রাইপজ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ ও ইসলামিয়া কলেজেও কিছুকাল অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে অধ্যাপনায় যোগ দেন এবং ১৯৫৮ সালে রীডার পদে উন্নীত হন। ১৯৬২ সালে তিনি ফলিত গণিতে উচ্চতর বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আমীর আলী হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৭১ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত পুনরায় তিনি বিভাগীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
কলকাতায় অবস্থানকালে হাবিবর রহমান র‌্যাডিক্যাল হিউম্যানিস্ট দলের সদস্য ছিলেন। ১৯৪০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ঢাকা র‌্যাশনালিস্ট ক্লাবের পক্ষ থেকে মুক্তি নামে একটি বাংলা মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। হাবিবর রহমান এ পত্রিকার প্রকাশক ছিলেন। গণিতশাস্ত্রে হাবিবর রহমানের অগাধ পান্ডিত্য ছিল। তাঁর রচিত বহু প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে যোগাশ্রয়ী বীজগণিত, নতুন বীজগণিত, পাটিগণিত, On Pells Equation।
ষাটের দশকের বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। ১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিল পাকিস্তানি সৈন্যরা তাঁকে ধরে নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি ভবনে আটকে রাখে। পরে তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। সূত্র : বাংলাপিডিয়া