মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীন মুহাম্মদ আবু মুছা কাদেরী

12

সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্থ অথচ আলোকিত মননের অসাধারণ মানুষ আলহাজ্ব মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীন। অতুলনীয় মানবিক গুণাবলী, সমাজনিবিষ্ঠ কর্মযজ্ঞ, ধর্মপরায়ণতা, সততার আদর্শে সমুজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ছিলেন মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীন। বরমা গ্রামটি একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। গ্রামটিতে উপমহাদেশের বহু গুণী ব্যক্তিত্ব জন্মগ্রহণ করেন। বিশেষত বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রপথিক, সমাজ সংস্কারক, সাংবাদিকতার পথিকৃৎ, সাহিত্যিক, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম, অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব যাত্রামোহন সেনগুপ্ত, কলকাতা কর্পোরেশনের প্রাক্তন মেয়র দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তসহ যশস্বী মনীষীদের জন্মস্থান বরমা গ্রামে। উল্লেখিত মহান মনীষীদের পদাঙ্ক অনুসরণে স্বকীয় মেধা ও কর্মে উদ্ভাসিত মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীন একজন আলোকিত মানুষের প্রতিচ্ছবি। তিনি ১৯৫৪ সালের ২০ জুন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বরমা-কেশুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম হাজী মকবুল আহমদ এবং মাতার নাম মরহুম জুরামন খাতুন। শৈশব কৈশোর থেকেই তিনি উন্নত ও সৎ চরিত্রের অধিকারী। মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীন স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পাস এবং বোয়ালখালীস্থ কানুনগোপাড়া নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭১ সালে এসএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে কর্ম জীবনে পদার্পণ করেন। অতঃপর মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীন অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে নিয়োজিত হন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতার মাধ্যমে সফলকাম হয়ে উঠেন।
তাঁর অদম্য প্রচেষ্টায় কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট ‘নাজিম এন্ড কোং’ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। ধাপে ধাপে তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের মাধ্যমে সফলতার শীর্ষে আরোহণ করেন। ধর্নাঢ্য ব্যক্তি হলেও আত্মঅহমিকাবোধে আচ্ছন্ন ছিলেন না। অর্থনৈতিক সক্ষমতা প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে তিনি অকাতরে দান করতেন প্রতিনিয়ত। বিদ্যোৎসাহী এই ব্যক্তিত্ব স্বীয় স্বজন, গরিব-দুঃখী অসহায় মানুষের পাশে থাকতেন উদারচিত্তে। সামাজিক অনুষ্ঠানাদি, অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের বিয়ে শাদিতে সহায়তা, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার জন্য সহযোগিতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে তিনি এগিয়ে আসতেন প্রবলভাবে। অতিথিপরায়ণতায় তিনি ছিলেন মহান ও অনন্য। দ্বীন ও মানুষের জন্য আলহাজ্ব মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীনের খেদমত অবিস্মরণীয় অধ্যায়। বিশেষত ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া আলিয়া মাদ্রাসা, গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ’র সকল প্রয়াসে অংশগ্রহণ করতেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। ব্যক্তি জীবনে পরহেজগার এই মানুষ ২০০৫ সালে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে নিজ গ্রামের মসজিদটি পুনঃনির্মাণ করেন। আলহাজ্ব মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীন বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। তিনি ২০১০ সালে কেশুয়া খানকায়ে মজিদিয়া মাদ্রাসা, হেফজ ও এতিমখানা পরিচালনা কমিটি’র সহ সভাপতি হিসেবে সুচারুরূপে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আমৃত্যু তাঁর আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা বিরাজমান ছিল উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানের সমৃদ্ধিতে। একজন অভিভাবকের সফলতার অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে সন্তানকে প্রকৃত ও আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারার সক্ষমতা। তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি একমাত্র পুত্র মুহাম্মদ মঈন উদ্দীন রূপন বর্তমানে পিতার আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে অগ্রসরমান। তারুণ্যদীপ্ত মুহাম্মদ মঈন উদ্দীন রূপন পিতার অসমাপ্ত কাজ সম্পাদনে একাগ্রতার সহিত প্রাগ্রসর। পিতার মত ধর্মীয় সামাজিক, মানবিক কর্মপ্রয়াসে উল্লেখ্যযোগ্য অবদান রেখে চলছেন কর্ম উদ্যমী ও মেধা-সততার উজ্জ¦ল প্রতীক মুহাম্মদ মঈন উদ্দীন রূপন। আলহাজ্ব মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীন আউলিয়া কেরাম, পীরে কামেল, আলেম সমাজের প্রতি অবিচল শ্রদ্ধা পোষণ করতেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি আওলাদে রাসুল (দ.) হুজুর কেবলা হযরত আলহাজ্ব আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মা.জি.আ.) হাতে বায়াত গ্রহণ করেছিলেন ২০০১ সালে।
লেখক : সম্পাদক, বার আউলিয়া চট্টগ্রাম।