মুনাফালোভীদের হাত থেকে পতেঙ্গা সৈকত রক্ষা করতে হবে

13

 

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, সর্বজনের উন্মুক্ত স্থান পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের একাংশ উন্নয়নের নামে ইজারাদান ও টিকেট ধার্য করলে সর্বজনের স্বীকৃত প্রবেশাধিকার হরণ হবে, প্রাকৃতিক সৈকতের বিকৃতি ঘটবে, একই সৈকতে দুই ধরনের বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা সৃষ্টি হবে। আমার কাছে চট্টগ্রাম ছিল শ্বাস নেবার শহর, প্রাণবৈচিত্র, ভূমিবৈচিত্র্য আর পাহাড় সমতলের অপূর্ব সমন্বয়। গত কয় বছরে এই শহর ক্রমে বিভীষিকায় পরিণত হয়েছে, ঢাকার মতো এক অসুস্থ নগরীতে পরিণত হয়েছে। উন্নয়নের নামে চট্টগ্রামে একের পর এক প্রকল্প নেয়া হচ্ছে যাচাই বাছাই, পরিণতি বিবেচনা, পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই। এ ধরনের সর্বনাশা উন্নয়ন প্রকল্পের একটি হলো সিআরবিতে বাণিজ্যিক হাসপাতাল নির্মাণ, আরেকটি হলো পতেঙ্গা সৈকত বেসরকারি কোম্পানিকে ইজারা। উন্নয়ন মানে আনন্দ, সর্বজনের সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা, সুস্থতা। যা দেশকে, জনপদকে বিপন্ন করে মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর মুনাফা ও সমৃদ্ধি ঘটায়, তাকে কখনোই উন্নয়ন বলা যায় না। চট্টগ্রামের মতো সারাদেশেই আজ সর্বজনের সম্পদের উপর এ মুনাফালোভী গোষ্ঠীর আগ্রাসন চলছে। এ বিভীষিকার হাত থেকে চট্টগ্রামকে-দেশকে বাঁচাতে কন্ঠ সোচ্চার, কলম-তুলি সক্রিয় এবং সংগঠিত প্রতিরোধের বিকল্প নেই।
তিনি গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে বাসদ (মার্কসবাদী) আয়োজিত একটি সেমিনারে বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে ‘সর্বজনের অধিকার : পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বেসরকারীকরণ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা আহবায়ক কমরেড মানস নন্দীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সিআরবি রক্ষা মঞ্চের সমন্বয়ক ডা. মাহফুজুর রহমান, পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া। মূল আলোচকদের বক্তব্যের পর উন্মুক্ত আলোচনার পর্বে মতামত রাখেন গণমুক্তি ইউনিয়নের সভাপতি রাজা মিঞা, সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর প্রমুখ। সেমিনার সঞ্চালনা করেন দলের জেলা সদস্যসচিব শফি উদ্দিন কবির আবিদ। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দলের জেলা সদস্য ইন্দ্রানী ভট্টাচার্য সোমা।
সেমিনারে সাংবাদিক ও কবি আবুল মোমেন বলেন, চট্টগ্রামে ১৯৬১ সালে প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানে প্রচুর পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়েছিল। কিন্তু এরপর থেকে ‘উন্নয়ন’ এর যে ধাক্কা শুরু হলো, তাতে এ পরিকল্পনার তোয়াক্কা কেউ করেনি, চট্টগ্রামের বিশেষ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্যের কথা কেউ বিবেচনায় রাখেনি। নগরের নানা প্রকল্প নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিশ্ব জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রভাব বিবেচনায় রাখা হয় না। তার ফলাফল হলো চট্টগ্রামের আজকের এ ধ্বংসস্তূপের রূপ। তাই আজ ‘পতেঙ্গা সৈকত বাঁচাও’, সর্বোপরি ‘চট্টগ্রাম বাঁচাও’ আন্দোলন করতে হবে।
ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, লুটপাটকারী মাফিয়া গোষ্ঠীর লোলুপ দৃষ্টি এখন সিআরবির পর পড়েছে পতেঙ্গা সৈকতের উপর। নগর উন্নয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সিডিএ’র কোন মালিকানা ও অধিকার নেই উন্মুক্ত সৈকতকে ইজারা দেয়ার। বিজ্ঞপ্তি