‘মুদি ও চা দোকানি’ মিলে মানবপাচার চক্র : র‌্যাব

2

একজন ‘মুদি দোকানি’ আর ‘চা দোকানি’ মিলে গড়ে তুলেছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে মানবপাচার এবং চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার এক চক্র; তাদেরসহ সেই চক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এরা হলেন- মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে টুটুল (৩৮), মো. তৈয়ব আলী (৪৫), শাহ মো. জালাল উদ্দিন লিমন (৩৮), মো. মারুফ হাসান (৩৭), মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), মো. পালটু ইসলাম (২৮), মো. আলামিন হোসাইন (৩০) ও মো. আল্লাহ আল মামুন (৫৪)। গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোডে টুটুলের মালিকানাধীন তিনটি অফিসে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক জানান।
গতকাল বুধবার দুপুরে কারওয়ানবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, অভিযানে তাদের গ্রেপ্তারের সময় চারজন ভুক্তভোগীকেও উদ্ধার করা হয়। এ চক্রের হোতা টুটুল, তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন তৈয়ব। এইচএসসি পাশ টুটুল মেহেরপুরের গাংনীর কামদী গ্রামে মুদি দোকানি হিসেবে কাজ করতেন। মাঝে মাঝে ঢাকায় আসতেন। অল্প সময়ে অধিক টাকার মালিক হওয়ার লোভে ধীরে ধীরে মানবপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এবং দালাল হিসেবে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে লোক পাঠানোর কাজ করতে থাকেন।
র‌্যাব বলছে, এক পর্যায়ে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় ‘টুটুল ওভারসিজ’, ‘লিমন ওভারসিজ’ ও ‘লয়্যাল ওভারসিজ’ নামে তিনটি অফিস খোলেন টুটুল।
এসব এজেন্সির মাধ্যমে তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বেকার ও শিক্ষিত বহু মানুষকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানান মোজাম্মেল হক। খবর বিডিনিউজের
তিনি বলেন, টুটুলের সহযোগী তৈয়ব কোনো লেখাপড়া করেননি। তিনি চায়ের দোকানি ছিলেন। টুটুলের প্ররোচনায় মানব পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তৈয়বের বিরুদ্ধে বহু লোককে প্রতারণামূলকভাবে বিদেশে প্রেরণ এবং দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণামূলকভাবে টাকা পয়সা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তৈয়ব নিজেকে একটি এয়ারলাইন্সের ম্যানেজার পরিচয় দিতেন। বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে এবং বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার নামে তিনি মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এবং অনেককে ভুয়া নিয়োগপত্রও দিয়েছেন।
র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে শাহ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন লিমন এবং মারুফ হাসান ওই চক্রের বেতনভুক্ত কর্মচারী। জাহাঙ্গীর আলম, লালটু ইসলাম, আলামিন হোসাইন ও আব্দল্লাহ আল মামুন মাঠ পর্যায়ে কাজ করতেন। তারা পাসপোর্টের ব্যবস্থা করা, কথিত প্রশিক্ষণ দেওয়া, টাকা সংগ্রহ, প্রার্থীর প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ অন্যান্য কাজে সহায়তা করতেন।
র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, পাচারকারী দলের কিছু সদস্য বেকার ও অস্বচ্ছল তরুণ-তরুণীদের সৌদি আরব, জর্ডান ও লেবাননসহ বিভিন্ন দেশে বাসাবাড়িতে লোভনীয় বেতনে কাজ দেওয়ার নামে ঢাকায় এই চক্রের হোতা টুটুল ও তৈয়বের কাছে নিয়ে আসত। টুটুল ও তৈয়ব তাদের ভুয়া রশিদ দিয়ে জনপ্রতি দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে নিতেন। বিশ্বাস স্থাপনের জন্য পাচারকারী চক্রের কয়েকজন সদস্য নিজেদের উচ্চশিক্ষিত হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিদেশ যেতে আগ্রহীদের বাসাবাড়িতে কাজের প্রশিক্ষণও দিতেন।
র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, এই চক্রের কিছু সদস্য পাসপোর্ট অফিসের দালালদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তাদের পাসপোর্ট তৈরি করে দিত। এছাড়া বিদেশে যাওয়ার জন্য লোক দেখানো মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন করা হত।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মানবপাচার চক্রটি কয়েকজনকে বিদেশে পাঠাত। আসলে নারীদের মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাসাবাড়ির কাজের কথা বলে ‘বিক্রি করে দিত’ তারা। আর পুরুষদের অমানবিক কাজে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের জেদ্দা ও রিয়াদ ছাড়াও জর্ডান এবং লেবাননে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হত। পাচারের শিকার ব্যক্তিরা বিদেশে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করতে পারতেন না।
সংবাদ সম্মেলেন বলা হয়, মো. আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি র‌্যাব-৪ এর কাছে অভিযোগের পর তারা এ চক্রের বিষয়ে খোঁজ শুরু করেন।
আশরাফুল অভিযোগ করেন, তার ভাতিজিকে তৈয়ব ও টুটুল গত ৯ জুন জর্ডান পাঠিয়েছেন। যাওয়ার পার এক সপ্তাহ পর্যন্ত যোগাযোগ থাকলেও এখন আর ভাতিজির কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।