মুজিববর্ষের উদ্বোধন

34

পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালির রাষ্ট্র গঠনের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে বছরব্যাপী আয়োজনের পর্দা উঠল। মঙ্গলবার সন্ধ্যার আকাশে আতশবাজির বর্ণিল আলোকচ্ছটায় স্বাধীনতার স্থপতিকে স্মরণের মাধ্যমে শুরু হয় মুজিববর্ষের উদ্বোধনী আয়োজন। মুজিব শতবর্ষের দিনে সারা দেশে নানা আয়োজন-অনুষ্ঠান এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে পিতার প্রতি শ্রদ্ধাবনত হয়েছে পুরো জাতি।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভকে ঘিরে রাত ঠিক আটটায় লেজার শো ও আতশবাজির মধ্যে দিয়ে শুরু হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংসদ আসাদুজ্জামান নূরের কণ্ঠে ধারণ করা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে জাতির বিনম্র অভিভাবন জানানোর মধ্যে দিয়ে শুরু হয় এই অনুষ্ঠান। এরপর ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে…বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ’ গানের সুরে শুরু হয় লেজার শো ও আতশবাজি। অল্প কিছু সময় ধরে চলে এই অনুষ্ঠান। আতশবাজির গুচ্ছ আলোয় উদ্ভাসিত হয় পুরো এলাকা।
নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাইরের সব অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে এরপর টেলিভিশনে ধারণ করা অনুষ্ঠানে সীমিত করা হয় উদ্বোধন অনুষ্ঠান।
বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণের সঙ্গে মিল রেখে রাত ৮টায় ‘মুক্তির মহানায়ক’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে একযোগে শুরু হয় আতশবাজি প্রদর্শনী।
এরপর জাতীয় সঙ্গীত শেষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার আদর্শ আমাদের চিরন্তন প্রেরণার উৎস। তার নীতি ও আদর্শ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়ুক, গড়ে উঠুক সাহসী, ত্যাগী ও আদর্শবাদী নেতৃত্ব, এ প্রত্যাশা করি।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের শত শিশু কণ্ঠে আসে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে রচিত ‘ধন্য মুজিব ধন্য’ গানটি।
এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসেন জাতির উদ্দেশে ভাষণ নিয়ে।
সবাইকে মুজিববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই তার স্বপ্নের সোনার বাংলার পথে এগিয়ে চলছে দেশ।
তিনি বলেন, আমরা জেগে রইব তোমার আদর্শ বুকে নিয়ে। জেগে থাকবে এদেশের মানুষ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম, তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে। তোমার দেওয়া পতাকা সমুন্নত থাকবে চিরদিন।
এরপর মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতীয় সংসদ ভবনের আলোকসজ্জা উদ্বোধন করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২৬ মার্চ পর্যন্ত সংসদ ভবন আলোয় আলোকিত থাকবে।
এরপর দেশের প্রখ্যাত শিল্পীদের সঙ্গে একটি গানে কণ্ঠ মেলান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা।
মুজিববর্ষের এই উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অনেক রাষ্ট্রনেতার থাকার কথা থাকলেও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে সেই আয়োজন সীমিত করার কথা ভাষণে উল্লেখ করে আসতে না পারা সেই রাষ্ট্রনেতার ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নমগেয়েল ওয়াংচুক, নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারি, জাতিসংঘের মহাসচিব এন্টিনিও গুতেরাস এবং ওআইসির মহাসচিব ড. ইউসুফ আল ওথাইমিনের ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয় অনুষ্ঠানে।
বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনে ১৭ মার্চ থেকে এক বছর ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১০ জানুয়ারি তেজগাঁওয়ে পুরাতন বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের ক্ষণগণনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুজিববর্ষের লোগো উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনা ভাইরাসের কারণে পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মূল অনুষ্ঠানস্থলে ছিল না কোনো আনুষ্ঠানিকতা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার। মূল অনুষ্ঠানস্থলে নির্ধারিত লোক ছাড়া বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে অসংখ্য মানুষ কিছু দূরে থেকে এই অনুষ্ঠান দেখেছেন। যখন মূল অনুষ্ঠান শেষ হয়, তখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অসংখ্য মানুষকে ঢুকতে দেখা যায়।