মুক্তিযোদ্ধা মীর রমজান আলী ওমর আলী ফয়সল

44

সমাজে কিছু কিছু ক্ষণজন্মা থাকেন যাদের কোন টাইটেলে আবদ্ধ রাখা যায় না। তারা নিজ পরিবারের গÐির বাইরেও তাদের মায়া ছড়িয়ে যান। মুক্তিযোদ্ধা লায়ন মীর রমজান আলীও তেমন একজন ক্ষণজন্মা ছিলেন। আজ ৪ মার্চ। ২০১২ সালের এই দিনে এই মহৎপ্রাণ শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দেশের জন্য জীবনবাজী রেখে তিনি যুদ্ধ করেছেন। এজন্য আজীবন শ্রদ্ধার পাত্র। ছিলেন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী। কিন্তু সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন।
নিজের চরিত্র, জীবনদর্শন ও কর্মগুণে এক অনন্য সাধারণ ও অসাধারণ ব্যক্তিত্ব মরহুম মীর রমজান আলী। ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি ব্যবসায়ী হলেও অসংখ্য সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় নিয়মিত লেখক ছিলেন। আজকের সূর্যোদয়ের নিয়মিত কলামিস্ট ছিলেন। ১৯৪৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পবিত্র রমজান মাসে তাঁর জন্ম। বাবা-মা মরহুম মীর আহসান আলী ও মরহুমা আয়জুন্নেসা খাতুন তখন তাঁদের সদ্যোজাত পুত্রের নাম রেখেছিলেন রমজান। বৃহত্তর ঢাকার অধুনা মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত ঐতিহ্যবাহী বিক্রমপুর অঞ্চলের শ্রীনগর থানার বিশ্ববিশ্রুত বাঙালি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু খ্যাত রাডিখাল ইউনিয়নভুক্ত দামলা গ্রামের অভিজাত, ঐতিহ্যবাহী ‘মীর বাড়ি’র ধারা মেনে ‘রমজান’ এর আগে যুক্ত ‘মীর’ এবং সম্ভবত পিতৃ নামের অনুসরণে শেষাংশে যুক্ত হল আলী, যার ফলে তার পুরো নামটি হয়ে দাঁড়ালÑ মীর রমজান আলী।
রমজান সাহেব ঢাকার অধুনালুপ্ত, স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পোগোজ স্কুল থেকে মেট্রিক, চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে আইএ এবং নারায়নগঞ্জের তোলারাম কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৭৪ সালের ২৮ এপ্রিল ২৬ বছর বয়সে তিনি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানার যশোলদিয়া জমিদার বাড়ির ডা. গাজী আবুল কাশেম (চুন্নু গাজি)’র দ্বিতীয় কন্যা ডা. রওশন আরা আক্তার (নাজমা)’র সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।বিয়ের ২১ বছরের মাথায় ১৯৯৫ সালের ২১সেপ্টেম্বর সামান্য একটি টিউমার অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগে ভুলের কারণে তার সহধর্মিণীর অকালমৃত্যু ঘটে। ১৯৭৮ সালে লায়ন্স ক্লাবের মাধ্যমে সামাজিক কর্মকাÐে প্রবেশ করেছিলেন। মীর রমজান আলীর এক কন্যা ফেরদৌস জাহান (রিমা) ও একমাত্র পুত্র মীর নাজমুল আহসান রবিন। রবিন রোটারি আন্তর্জাতিক জেলা ৩২৮২ এর সাবেক ডেপুটি গভর্নর।
মীর রমজান আলীর দুটি গ্রন্থও গ্রকাশিত হয়েছে। যার মধ্যে প্রবন্ধটি ১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধু হত্যাকাÐকে ঘিরে স্মৃতিচারণ বই ‘স্মৃতির দুয়ারে তুমি’ (প্রকাশ কাল ১৯৯১) এবং দ্বিতীয় বই তার প্রয়াত স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্মৃতিচারণমুলক গ্রন্থ ‘কেমন আছো জানতে ইচ্ছে করে’ (প্রকাশকাল ১৯৯৭) প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়াও মাইজভান্ডার শরীফ : ঐশ প্রেক্ষিত নামে একটি বইয়ের প্রকাশক ছিলেন।
মীর রমজান আলী ’৭১ এর আগে ও পরে দীর্ঘদিন তিনি ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। ব্যক্তি জীবনে অসা¤প্রদায়িক চেতনার মানুষ হলেও পীর মুরশিদের মাজারের প্রতি আকর্ষণ ছিল তার আমৃত্যু। মীর রমজান আলী ইউনেস্কো ক্লাবস ও লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি হিসেবে জার্মানি, থাইল্যান্ড, ভারত প্রভৃতি দেশ সফর করেছেন। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার নির্ভীক কর্মী ছিলেন মীর রমজান আলী। হিংসা হানা-হানি, ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে যদি আমরা সুখী, সমৃদ্ধ উন্নত দেশ গড়তে পারি তবেই তাঁর আত্মা শান্তি পাবে।
লেখক: সাবেক ডেপুটি গভর্নর, রোটারি আন্তর্জাতিক জেলা ৩২৮২, বাংলাদেশ