মুক্তিযোদ্ধা আহসানুল্লাহ চৌধুরী

16

অধ্যাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী

স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে লাখ লাখ শহীদের রক্ত, লাখো মা-বোনের ইজ্জত এবং অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে সংগ্রামী চেতনা দীর্ঘদিন লালিত করে নির্ভেজাল দেশপ্রেম ও অত্যন্ত সাহসিকতার মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে সচেতনভাবে অংশগ্রহণ করে যারা স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছেন তাদের মধ্যে আহসান উল্লাহ চৌধুরী অন্যতম। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সদা প্রতিবাদ মুখর আহসান উল্লাহ চৌধুরী ছাত্রাবস্থায় রাজনীতিতে যোগদান করায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও বিভিন্ন নির্যাতন সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন ।গহিরা কলেজ ছাত্র সংসদের জি এস থাকার কারণে এবং অনেক আগেই দেশপ্রেমের দীক্ষা প্রাপ্ত আহসান উল্লাহ চৌধুরী যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গী সাথীদের নিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে গমন করেন। ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে এসে তিনি কমান্ডার হিসেবে অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসার সময় গুইমারায় পাকসেনা কর্তৃক আক্রান্ত হলে অত্যন্ত সাহসিকতার মাধ্যমে তারা পাকসেনাদের পরাজিত করে দেশে ফিরে আসেন। দেশে এসে রাউজানের ছাত্র-যুবকদের ট্রেনিং দিয়ে বিভিন্ন গ্রæপে বিভক্ত করে নোয়াপাড়া, সত্তারঘাট ও কাগতিয়াসহ অনেক সফল অপারেশন করে রাজাকার আলবদর বাহিনীর জন্য ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হন। এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বে মদুনাঘাট পাওয়ার হাউজ ধ্বংসে অংশগ্রহণ করেন। তাদের সঙ্গে এ সমস্ত অপারেশনের অংশগ্রহণ করেন ফেরদৌস হাফিজ খান রুমু, সাবেক সিভিল সার্জন ডাক্তার সরফরাজ খাঁন চৌধুরী, সাংবাদিক নওশের আলী খান, হাসান চৌধুরী, ইউসুফ আলী খান ও আলো জ্যোতি বড়–য়াসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা। আহসান উল্লাহ চৌধুরী ১৯৫৩ সালে রাউজান থানার গহিরা ইউনিয়নের মোবারকখীল গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম আব্দুল গফুর চৌধুরী সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পিতার কঠোর শাসনেও দুরন্ত আহসানুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রায় অসম্ভব হলেও ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাÐে এবং লেখাপড়ায় তার অবহেলা ছিলনা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক ও ফুটবল টুর্নামেন্ট সহ বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োাজন করে তিনি রাউজানের রাজনীতির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। যুদ্ধের আগে ১৯৭০ সালে তিনি এসএসসি ও ১৯৭২ সালে এইচএসসি পাস করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু রাজনৈতিক ও অন্যান্য সমস্যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি তার কপালে জোটেনি। তৎসময়ে ক্ষমতাসীন দলের সাথে মতবিরোধের কারণে জাসদ প্রতিষ্ঠা হলে তিনি রাউজান সহ উত্তর চট্টগ্রামে জাসদ গঠনের ভূমিকা রাখেন।