মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশাবলী পেশ করে আ.লীগ

20

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাঙালির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ অর্জন মহান মুক্তিযুদ্ধে ঊনিশ শ’ একাত্তরের এইদিনে সরকারি ও আধা সরকারি সংস্থার প্রতি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাজউদ্দিন আহমেদ বিভিন্ন নির্দেশাবলী দেন। এরপর থেকে প্রতিদিনই পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টাতে থাকে।
ইতিহাস অনুযায়ী, এম. এ. হান্নান সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশমত বেতারে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার বাণী ও মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশাবলী ঘোষণার জন্য চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা আওয়ামী লীগ অফিস থেকে আতাউর রহমান খান কায়সারের জীপে করে আগ্রাবাদ বেতার কেন্দ্রে যান। তার সঙ্গে ছিলেন আতাউর রহমান কায়সার, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন প্রমুখ। আগ্রাবাদ বেতার কেন্দ্র ওইদিন কর্মীরা সকাল থেকে বন্ধ রাখে। পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, আগ্রাবাদ থেকে ঘোষণা দিলে নেভাল বেইস থেকে বোমা ছুড়তে পারে। সেজন্য চান্দগাঁওয়ে অবস্থিত কালুরঘাট ট্রান্সমিটার কেন্দ্র থেকে ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে আগ্রাবাদ কলোনি থেকে বেতার প্রকৌশলী সোবহানকে সঙ্গে নিয়ে একটি জীপ ও একটি ভক্স ওয়াগন গাড়ি করে পথে কাপাসগোলা থেকে আরেক বেতার প্রকৌশলী দেলওয়ারকে নিয়ে কালুরঘাট ট্রান্সমিটিং সেন্টারে পৌঁছেন বেলা দেড়টায় এবং পৌনে দু’টায় এম. এ. হান্নানের সঙ্গে অপর যে গাড়ি কালুরঘাট যায় তার মালিক-চালক ছিলেন আগ্রবাদ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা চাঁদপুরের মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। এম. এ. হান্নান যখন বেতার ভাষণ দেন তখন সেখানে বেতারকর্মী ছাড়া অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আতাউর রহমান কায়সার, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ডা. মান্নান, ইউনুস খান, মাহফুজুল আনান চৌধুরী, শাহজাহান মেডিক্যাল ছাত্র মাহফুজ এবং রাখাল চন্দ্র বণিক। বেতার ভাষণটি ছিল সংক্ষিপ্ত, মাত্র পাঁচ মিনিটের।
ভাষণে এম. এ. হান্নান নিজের নাম উল্লেখ করে বলেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। যার যা আছে তাই এমনকি লাঠি-সোটা, দা, কাঁচি, মরিচের গুঁড়া ইত্যাদি নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে। তিনি আরও বলেছিলেন যে, চট্টগ্রামে স্বাধীন বাংলা বেতারের পরবর্তী নির্দেশ প্রচারিত হবে। উল্লেখ্য, সকাল থেকে চট্টগ্রাম বেতার বন্ধ থাকায় ওই কেন্দ্র না ধরার কারণে অনেকে এ ঘোষণা শুনতে পান নি। তবে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে পুনঃপ্রচারিত সে ভাষণ শুনতে পেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সাইক্লোস্টাইল করা কাগজ একাত্তরের ২৬ মার্চ আগ্রাবাদ কলোনিতে নিয়ে যায় আওয়ামী লীগ কর্মী বরিশালের এম. এ. মালেক ও রেশন দোকানের মালিক গোলাম মাওলা। এগুলো বাংলায় সাইক্লোস্টাইল করেন এম. এ. হালিম, সফিউদ্দিন আহম্মদ ও মোজাম্মেল হক এবং প্রথমে মসজিদের মাইকে ও পরে বেবিট্যাক্সিযোগে শহরে ঘোষণা করা হয়। শহরের অন্যান্য স্থানেও আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ কর্মীরা এ ধরনের উদ্যোগ নেন এবং সকালের মধ্যে গোটা শহরবাসী মাইকে জানতে পারে যে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন।