মীর শওকত আলী

8

 

মীর শওকত আলী, বাংলাদেশের একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে তিনি শ্রম ও খাদ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ৫ নং সেক্টরে নেতৃত্বে দিয়েছিলেন। তিনি ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সেনাবহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে অবসরে যান। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে কর্মজীবনের সর্বত্র জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন তিনি। ঢাকা নগরীর মহাখালি থেকে গুলশান এভিনিউ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি তার নামে নামাঙ্কিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে।
তার জন্ম ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জানুয়ারী পুরনো ঢাকার নাজিরা বাজারের আগাসাদেক রোডে। তিনি মাহুতটুলী প্রি-প্রাইমারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন ; আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় চার বিষয়ে লেটার মার্কসসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়। এরপর এইচএসসি পাস করেন ঢাকা কলেজ থেকে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন পেয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বেঙ্গল রেজিমেন্টে মেজর পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে ৫নং সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও মীর শওকত আলী কয়েকটি সেক্টরে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালনের জন্য স্বাধীনতা লাভের পর তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পুনর্গঠনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড গঠন করে এর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের মধ্যে চিফ অব জেনারেল স্টাফ, ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি), রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে অবসর নেন।
সেনাবহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পরপরই তাকে বিদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তিনি জার্মানি, গ্রেট ব্রিটেন, মিসর, অস্ট্রিয়া, পর্তুগাল ও সুদান ইত্যাদি দেশসমূহে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসাবে ক‚টনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন।
জিয়াউর রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিতে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে তিনি বিএনপি সরকারে প্রথমে শ্রম এবং পরে খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় পরিষদের সহসভাপতি ছাড়াও ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা মহানগর বিএনপি সভাপতি ছিলেন। দীর্ঘদিন বিএনপির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পরবর্তীকালে দলের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে তার। বিএনপির সহসভাপতির পদ ছাড়ার কথা জানিয়ে পদত্যাগপত্রও পাঠিয়েছিলেন তিনি, যদিও খালেদা জিয়া তা গ্রহণ করেননি। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে লালবাগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানমন্ডি থেকে নির্বাচন করে হেরেছিলেন। শেষ জীবনের বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব রেখে চললেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে কয়েক বছর আগে গড়ে ওঠা সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন মীর শওকত আলী।
২০ নভেম্বর ২০১০ তারিখ শনিবার ঢাকায় স্বীয় বাসভবন “মার্শাল হাউজে” অবস্থানকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। ২১ নভেম্বর ২০১০ অপরাহ্নে তাকে বনানীর সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় ও সামরিক মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। সকালে লালবাগ শাহী মসজিদ, নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে, সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এবং সর্বশেষ সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে মরহুমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সূত্র : উইকিপিডিয়া