মিরসরাই শিল্পনগরে ৩০ লাখ মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে কতটুকু প্রস্তুত চট্টগ্রামবাসী!

65

বর্তমান সরকারের আমলে চট্টগ্রামের সামগ্রিক উন্নয়নের যে গতিধারা শুরু হয়েছিল, তা প্রবাহমান স্রোতের ন্যায় আরো বড় আকার নিয়ে অভীষ্টে পাড়ি দিচ্ছে। সড়ক, মহাসড়ক, উড়াল সড়ক, টানেল, রিংরোড, রেল, মেট্রোরেল, সড়ক ও রেল সেতু, শিল্পাঞ্চল, পানি শোধানাগার, কয়লা বিদ্যুৎ, গভীর সমুদ্র বন্দর, বে-টানেল, পর্যটন কেন্দ্র, শেখ কামাল আইটি ও ইকিউভেশন পার্ক ও শিক্ষা অবকাঠামো ইত্যাদি নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়নের উৎসব চলছে পুরো বৃহত্তর চট্টগ্রামজুড়ে। কিন্তু এ উন্নয়ন কার্যক্রমে ও বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহের আউটপুট গ্রহণ করতে চট্টগ্রামবাসী কতটুকু প্রস্তুত- তা এখন ভাববার বিষয়। বেশ কয়েকবছর আগে চট্টগ্রাম আমিরাবাদের একটি বেসরকারি মহিলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্যেশ্যে পুরো চট্টগ্রামের উন্নয়নযজ্ঞ, শিল্পাঞ্চল ও সোনাদিয়ায় প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দর এর কথা তুলে ধরে বলেন, এ উন্নয়নের অংশীদার চট্টগ্রামবাসী, সুতরাং উন্নয়নের এ কার্যক্রমে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে যে প্রস্তুতি দরকার, আমাদের কি তা আছে? তিনি মূলত শিক্ষা, যোগ্যতা ও দক্ষ নাগরিক গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তাকে নির্দেশ করেছিলেন। তাঁর ভাষায় আগামী প্রজন্ম তথা যুবক ও তরুণদের দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে হলে কারিগরি ও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। না হয়, এসব উন্নয়ন চট্টগ্রামবাসী দেখেই শুধু চোখ জুড়াবে, কিন্তু ফল খাবে অন্যরা। অতীতেও আমরা তাই দেখেছি। চট্টগ্রাম বন্দর, রাষ্ট্রীয় আয়ের বিশাল অংশ যে বন্দর যোগান দিচ্ছে, সেই বন্দরের চাকুরিতে চট্টগ্রামবাসীর সংখ্যা হাতেগোণা। এর কারণ অবশ্যই বন্দর নয়, কারণ চট্টগ্রামবাসী নিজেরা ব্যবসা করেছে বটে, বন্দর পরিচালনায় নিজেদের উপযুক্ত নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে পারে নি, বা সেই মানসিকতা লালন করে নি। বন্দর প্রতিষ্ঠার কয়েকশত বছর পরে এসেও আমাদের উন্নয়নের নতুন অভিযাত্রায় সম্পৃক্ততা নিয়ে সন্দেহ ও সংশয় পোষণ করতে হচ্ছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিয়ে যখন রাজনীতিকদের মধ্যে নানা মতভেদ, মান-অভিমান দৃশ্যমান হয় তখন এ উন্নয়নের সুফল ভোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, চট্টগ্রামের উন্নয়ন হলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে। চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে আন্তরিক। কিভাবে চট্টগ্রামের আরও উন্নয়ন করা যায়, তা নিয়ে সকলের কাজ করা উচিত। দেশের উন্নয়নের স্বার্থেই চট্টগ্রামের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থা, লজিস্টিক ও অন্যান্য সুবিধাসমূহ কাজে লাগাতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য বিবেচনা করে উন্নয়ন যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
গত শনিবার সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চিটাগাং চেম্বারের উদ্যোগে আয়োজিত ‘চট্টগ্রামের উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, মিরসরাই শিল্পনগরে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। কক্সবাজার থেকে কর্ণফুলী টানেল হয়ে মিরসরাই পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করা হলে তা পর্যটনসহ লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ৩০ লাখ কর্মসংস্থানের জন্য আগামী প্রজন্ম তথা যুবক ও তরুণ সমাজকে প্রস্তুতি নিতে হবে। এর জন্য চট্টগ্রামে কারিগরি, ফ্যাশন ডিজাইন, আইটি , বিজ্ঞান ও ব্যবসায়িক শিক্ষার প্রতি জোর দিতে হবে। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত শিক্ষা কারিকুলামে মাধ্যমিক পর্যায় থেকে এসব বিষয় বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যা ২০২২ সাল থেক কার্যকর হবে। আমরা মনে করি, সরকারের এ সিদ্ধান্ত যথার্থ তবে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কারিগরি বোর্ডের সহযোগিতায় এখন থেকে তাদের পরিচালিত উচ্চ মাধ্যমিক কলেজগুলোতে এসব বিষয় অন্তভুক্ত করতে পারে। সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে চসিককে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন শিক্ষা উপ-মন্ত্রী। আমরা মনে করি, বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বর্ণদুয়ারে নিয়ে যেতে হলে চট্টগ্রামের সামগ্রিক উন্নয়ন যেমন প্রয়োজন, তেমনি চট্টগ্রামে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও দক্ষ সম্পদ হিসেবে তৈরি করার উদ্যোগ প্রয়োজন। এ জন্য সরকার, সিটি কর্পোরেশন, বিজিএমই ও চেম্বার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারে। এতে প্রকৃতপক্ষে চট্টগ্রাম ও নাগরিকসমাজ লাভবান হবে।