মিত্রবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ঢাকার আকাশ!

51

১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর দিনটি ছিল সোমবার। এইদিন চারদিকে উড়তে থাকে বাঙালির বিজয় নিশান। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় শত শত পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে। শুধু ময়ানমতিতেই আত্মসমর্পণ করে ১১৩৪ জন। আর সৈয়দপুরে আত্মসমর্পণ করে ৪৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়কসহ ১০৭ পাকিস্তানি সেনা। খুলনা চট্টগ্রামে হানাদারদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনী ও স্থানীয় মানুষের অবিরাম যুদ্ধ চলে। এইদিন থেকে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্টুডিওতে বসে বার্তা বিভাগীয় প্রধান কামাল লোহানী, আলী যাকের ও আলমগীর কবির ঘন ঘন সংবাদ বুলেটিন পরিবর্তন ও পরিবেশন করেন। প্রতি মুহূর্তে খবর আসছে ঢাকা ছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা মুক্ত। অকুতোভয় তরুণ মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকায় ঢুকে পড়েছে। নিরস্ত্র জনতা রাস্তায় নেমে এসেছে। পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে লড়ছে, মরছে তবুও প্রতিশোধ চাই মা, বাবা ও সন্তান হারানোর প্রতিশোধ। এদিকে আকাশ, জলে, স্থলে সবদিকে হানাদাররা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় জেনারেল নিয়াজি রাওয়ালপিন্ডিতে আরজি পাঠান, ‘আরো সাহায্য চাই।’ যৌথ বাহিনীর অগ্রবর্তী সেনাদল শীতলক্ষা ও বালু নদী অতিক্রম করে ঢাকার ৫-৬ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। বালু নদীর পূর্বদিকে পাকবাহিনী স্বীয় পরিসীমায় এক শক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। বাসাবো ও খিলগাঁও এলাকার চারিদিকে আগে থেকেই পাকিস্তানী বাহিনী ফিল্ড ডিফেন্স বা আক্রমণ প্রতিহত করার জন্যে সর্বাত্মক ব্যবস্থাসহ অবস্থান নিয়েছিল। ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী ঢাকার পতন দ্রুততর করার প্রয়োজনে যুদ্ধের কৌশল পরিবর্তন করে। কেননা ঢাকার পতন হলে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের পরাজয় চূড়ান্ত হবে। ওদিকে পূর্ব ও উত্তর দিক থেকে মিত্রবাহিনী ঢাকার প্রায় ১৫ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। ৫৭ নং ডিভিশনের দুটো বিগ্রেড এগিয়ে আসে পূর্ব দিক থেকে। উত্তর দিক থেকে আসে জেনারেল গন্ধর্ব সিং নাগেরার বিগ্রেড এবং টাঙ্গাইলে নামা ছত্রীসেনারা। পশ্চিমে ৪নং ডিভিশনও মধুমতি পার হয়ে পৌঁছে যায় পদ্মার তীরে। রাত নটায় মেজর জেনারেল নাগেরা টাঙ্গাইলে আসেন। ব্রিগেডিয়ার ক্লের ও ব্রিগেডিয়ার সান সিং সন্ধ্যা থেকে টাঙ্গাইলে অবস্থান করছিলেন। রাত সাড়ে নটায় টাঙ্গাইল ওয়াপদা রেস্ট হাউসে তাঁরা পরবর্তী যুদ্ধ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় বসেন। আলোচনার শুরুতে মেজর জেনারেল নাগেরা মুক্তিবাহিনীর উচ্ছ¡সিত প্রশংসা করে বলেন, “মুক্তিযোদ্ধারা যদি আমাদের বিনা বাধায় এতটা পথ পাড়ি দিতে সাহায্য না করতেন, তাহলে আমাদের বাহিনী দীর্ঘ রাস্তায় যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়তো। রাস্তাতেই আমাদের অনেক শক্তি ক্ষয় হয়ে যেতো।” এদিন লে.কর্নেল শফিউল্লাহর ‘এস’ফোর্স ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে ঢাকার উপকণ্ঠ ডেমরা পৌঁছায়। সমুদ্রপথে শত্রূদের পালানোর সুযোগ কমে যাওয়ায় ঢাকায় পাকিস্তানি হানাদারদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ঢাকা চূড়ান্ত লড়াইয়ের স্থল বলে চিহ্নিত হতে থাকায় সম্ভাব্য নিয়তির আশঙ্কাও দ্রুত বাড়তে থাকে। ৪র্থ বেঙ্গল চট্টগ্রামের দিকে এগুনোর পথে নাজিরহাটে হানাদাররা বাধা দেয়। এখানে ২৪তম ফ্রন্টিয়ার ফোর্স তাদের তিন কোম্পানি এবং বেশকিছু ইপিসিএএফসহ অবস্থান নিয়েছিল। এখানে ব্যাপক যুদ্ধের পর পালিয়ে যায় হানাদাররা। এদিকে বাংলাদেশের নিয়মিত বাহিনীর সর্বপ্রথম ইউনিট হিসেবে ২০-ইবি ঢাকার শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড় মুড়াপাড়ায় পৌঁছায়। উত্তরাঞ্চলে যৌথবাহিনী দুপুরে গোবিন্দগঞ্জ থেকে ঢাকা মহাসড়ক ধরে বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বগুড়ায় তখন শত্রূবাহিনীর একটি রেজিমেন্ট কামান ও ট্যাংকসহ অবস্থান করছিল। হিলি রক্ষাব্যূহ ছেড়ে আগেই পাকসৈন্যরা বগুরায় চলে এসে গড়ে তুলেছিল শক্তিশালী প্রতিরোধ। রাতে যৌথ বাহিনী চারদিক থেকে বগুড়া শহর ঘিরে ফেলে। মধ্যরাতে যৌথ বাহিনীর তিনটি ব্যাটেলিয়ান উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব-উত্তর দিক থেকে শত্রূর ওপর আঘাত হানে। টাঙ্গাইল থেকে ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট মিত্র বাহিনীর চাপে পিছু হটে ঢাকার দিকে পালিয়ে আসছিল। নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর গেরিলা ইউনিট এই রেজিমেন্টকে সাভারের নিকটে বাধা দেন এবং ফলে সেখানে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিফৌজের গেরিলা ইউনিটটির পুরো শক্তি কাজে লাগানো হয় এবং ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়। এইদিন পাঞ্জাব রেজিমেন্টের প্রায় শতাধিক সৈন্য নিহত হয় এবং একজন পাকিস্তানী সুবেদার মেজর আত্মসমর্পণ না করে আত্মহত্যা করে। এদিকে কাদের সিদ্দিকীর গেরিলা বাহিনী টাঙ্গাইল শত্রূমুক্ত করার পর ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। কারণ ঢাকা গেরিলাদের সহায়তা ছাড়া মুক্ত করা কঠিন ছিল। গেরিলারা পাকিস্তানিদের মনোবল ভেঙ্গে দিয়েছিলো এবং বুঝিয়ে দিয়েছিল যে তাদের পতন আসন্ন। ঢাকার আকাশ ভারতীয় বিমানবাহিনীর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে থাকায় তারা পাকিস্তানি সামরিক অবস্থানের ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। ঢাকার সর্বত্র অগণিত মুক্তিযোদ্ধা ও জনতা ছিল সুযোগের অপেক্ষায়। পাকিস্তানি সেনা নায়কদের মনোবল উঁচু রাখার সামান্যতম অবলম্বন কোথাও ছিল না। তাদের একমাত্র ভরসা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ। এইদিন নিয়াজীকে জানানো হয়, পাকবাহিনীর সহায়তার জন্য ‘মিত্রদের’ এসে পৌঁছানোর যে কথা ছিল, তা আটচল্লিশ ঘণ্টার জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর বিজয়ের পূর্বাভাষ পেয়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘের যেসব কর্মী, কূটনৈতিক, প্রতিনিধি ও বিদেশি নাগরিক নিরাপদে সরে আসতে চান বাংলাদেশ সরকার তাদের সম্ভাব্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেবে।’ পাকিস্তানের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব চীনকে সামরিক হস্তক্ষেপের ব্যাপারে রাজী করানোর কাজে ইসলামাবাদে সারাদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যায়। পিকিং-এ পাকিস্তানী দূতাবাসকেও দেখা যায় কর্মতৎপর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের এই মিলিত প্রচেষ্টার ফলে সিকিম-ভুটান সীমান্তে মোতায়েন চীনা সৈন্যবাহিনীকে কিছুটা তৎপর হতে দেখা যায়, কিন্তু তা ভারতে বিশেষ উদ্বেগের সঞ্চার করেছিল এমন নয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী সদরদপ্তরে বাংলাদেশকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার এক ব্যর্থ প্রয়াস ঠিক একই সময়ে পরিলক্ষিত হয়। ১২-১৩ই ডিসেম্বরে নিউইয়র্কের মধ্যরাত্রির আগে সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে চীনের সম্মতি আদায় সাপেক্ষে সপ্তম নৌবহরকে নিশ্চল করা এবং নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক মুলতবি করার ব্যবস্থা চলছিল, ঠিক সেই সময় কলকাতায় (১৩ই ডিসেম্বর) সকালে পররাষ্ট্র সচিবের পদ থেকে প্রায় মাসাধিককাল যাবত অব্যাহতিপ্রাপ্ত মাহবুব আলম চাষী যুদ্ধবিরতির এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর সংগ্রহের উদ্দেশ্যে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন। এই প্রস্তাবিত বিবৃতির মূলবিষয় ছিল: বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্পর্কে রাজনৈতিক মীমাংসায় পৌঁছার উদ্দেশ্য নিয়ে যদি শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়া হয়, তবে তৎক্ষণাৎ বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করবেন। বাংলাদেশ তখন ভারতের সঙ্গে যৌথ কমান্ডব্যবস্থায় আবদ্ধ, কাজেই বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি যদি একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতেন, তবে ভারতীয় বাহিনীর পক্ষে এককভাবে ঢাকার দিকে এগিয়ে যাওয়া নীতিগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হত। সম্ভবত এই বিবেচনা থেকেই সৈয়দ নজরুল উক্ত বিবৃতিতে স্বাক্ষর দানে বিরত থাকেন এবং সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের গোচরে আনেন। নিরাপত্তা পরিষদের মুলতবি বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব তৃতীয় সোভিয়েত ভেটোর মুখে যথারীতি বাতিল হয়ে যায়। যে কারণেই হোক সামরিক হস্তক্ষেপের প্রশ্নে চীনের সম্মতির সম্ভাবনাকে তখনও যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণ বাতিল করে উঠতে পারেনি। কাজেই সেই ভরসায় চব্বিশ ঘণ্টা নিশ্চল রাখার পর সপ্তম নৌবহরকে পুনরায় সচল করা হয় বঙ্গোপসাগরের দিকে। ইসলামাবাদে বার বার সাহায্যের করুন আবেদন জানাচ্ছিল পাকিস্তানীরা। ইসলামাবাদ থেকে সামরিক কর্তারা ঢাকায় অবস্থানরত ঘাতকদের এই বলে আশ্বস্ত করে, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, আরও কয়েকটা দিন অপেক্ষা কর। পশ্চিম খন্ডে ভারতীয় বাহিনীকে এমন মার দেয়া হবে যে তারা নতজানু হয়ে ক্ষমা চাইবে ও যুদ্ধ থেমে যাবে। কিন্তু পাকবাহিনীর জন্য সেদিন আর আসেনি। শান্তি কমিটি, ডা.মালিক মন্ত্রিসভা ও স্বাধীনতা বিরোধী দালালরা বেশিরভাগই অবস্থা বেগতিক দেখে গা-ডাকা দেয়। কিন্তু এর মধ্যেও ঘাতক আলবদর চক্র সক্রিয় ছিল। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে দেশের সব চেয়ে কৃতি সন্তানদের পরিকল্পিত হত্যাকান্ডে। এইদিন সাংবাদিক সেলিনা পারভীনকে তার সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় কিছু আল বদর কর্মী । বৃটেনের স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ সেক্রেটারি স্যার এলেক্স ডগলাস হাউজ অফ কমনসে বলেন, ভারতীয় বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের অনেক ভেতর পর্যন্ত প্রবেশ করেছে, যশোর শহর পুরোটা দখল করে নিয়েছে এবং রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে ফেলেছে। বিবিসির খবরে বলা হয়, ভারতীয়রা বলছে তাদের বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকার দিকে যাচ্ছে এবং আরো প্যারাট্রুপ্স নামানো হচ্ছে। সর্বশেষ রিপোর্টে জানা যায় ভারতীয় বাহিনী ঢাকা থেকে বিশ মাইলের কম দূরে অবস্থান করছে। অল-ইন্ডিয়া রেডিও বলছে তারা দ্রূত এগোচ্ছে। কিন্তু ভারতীয়রা বলেছে যেসকল প্যারাট্রুপ্স রবিবার নেমেছে তারা বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে। বিবিসি আরো জানায়, ভারতীয় সেনাদল ঢাকা অবরুদ্ধ করার প্রাক্বালে পাকিস্তান বাহিনীর প্রধান (জেনারেল নিয়াজী) তার সৈন্যদের বলেছেন শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে। আর তিনি ভারতীয় বাহিনী প্রধান (জেনারেল স্যাম মানেকশ) এর আত্মসমর্পণ করার অনুরোধ অস্বীকার করেছেন। ভারতীয়রা বলেছে দুটি সাঁজোয়া কলাম সামনে নিয়ে ঢাকার উত্তর পশ্চিমে টাঙ্গাইল থেকে প্যারাট্রুপ্স এগিয়ে যাচ্ছে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নরসিংদী থেকে এগোচ্ছে। কিছু আগাম ইউনিট ঢাকার আর্মি বেইজ এর উত্তরে সেখান থেকে রাজধানীর সংবাদদাতা জানান শহরের ৯ মাইল দক্ষিণে ধর্মঘাঁট নদীর কাছে ভারতীয় সৈন্য অবস্থান করছে। ভারত বলছে এখনও খুলনার কাছে দৌলতপুর সেনা ঘাঁটিতে যুদ্ধ চলছে। এবং সৈনিকরা দক্ষিণের চালনা বন্দরে শক্ত প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে। নয়া দিল্লি থেকে একজন মুখপাত্র বলেছেন ভারতীয় বাহিনী নদীর নেটওয়ার্কের কারণে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এইদিন যুক্তরাষ্ট্রের এনবিসি টেলিভিশনের সাথে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তাকে প্রশ্ন করা হয় পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানকে স্বীকৃতি দিবে যে এটি এখন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, এই শর্তে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা? উত্তরে শরণ সিং বলেন আমি একে এভাবে দেখব না, যদিও আমরা (ভারত) বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছি এবং প্রকৃতপক্ষে বাস্তবতা উপলব্দি করতে পশ্চিম পাকিস্তান কিছু সময় নিবে। কিন্তু এটি একটি দারুন অগ্রগতি হবে যদি পশ্চিম পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ-সামরিক শাসন-এবং রাজনীতিবিদগন এই বাস্তবতা স্বীকার করে। শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা এটি পরিষ্কারভাবে বলেছি যে, শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি একটি অবস্থা যা খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশের পরিস্থিতির স্থিতাবস্থা নিয়ে আসবে এবং এই স্থিতাবস্থা খুব জরুরী। যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কেও প্রশ্নে বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছে, এবং আমরা আরও বুঝতে পারছি যে এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের অভিগমন নিরপেক্ষ নয়, এবং, তাই, আমরা এই আচরনে খুশি নই। কিন্তু আমরা আমাদের মত এগিয়ে যাব। প্রশ্ন করা হয়, যদি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন পাকিস্তানকে, সেন্ট্রাল ট্রিটি অর্গানাইজেশন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ট্রিটি অর্গানাইজেশন-এর আওতায় সামরিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখে, তাহলে কি ঘটতে পারে? উত্তরে মি.শিং বলেন পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী কিংবা অন্যদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া যেকোন সাহায্য যা পাকিস্তানকে আরও আপসবিমুখ করে তুলবে, তা পাকিস্তানের লাভ হওয়ার সম্ভাবনা নেই এবং এই অঞ্চলের শান্তির স্বার্থেও না।