মিতু হত্যায় মুছা, গায়ত্রী ও নারাজি ‘জটিলতা’

29

সবুর শুভ

কিলার কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুছা সিকদার, সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের প্রেমিকা গায়ত্রী ও প্রথম মামলার নারাজি (বাদী বাবুল আক্তার) আবেদন এ মামলার বিচারকাজকে ‘জটিল’ করে তুলেছে। মুছা সিকদার ও গায়ত্রীর সন্ধান মিললে মামলায় অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলতো। আলোচিত এ মামলার বিচারকাজও সহজ হতো বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। আর বাবুল আক্তার বাদী হয়ে করা মামলার নারাজি এ মামলার স্বাভাবিক গতিকে খানিকটা ব্যাহত করেছে বলেও তাদের মত। এ অবস্থায় আজ বুধবার মহানগর হাকিম আদালতে নারাজি পিটিশনের উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এ শুনানির উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন কারান্তরীণ বাবুল আক্তারের আইনজীবী এডভোকেট আজমুল হুদা।
তথ্য মতে, যে ভারতীয় নারী গায়ত্রী অমর সিংয়ের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে বাবুল আক্তার স্ত্রী মিতুকে হত্যার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলে পিবিআই দাবি করে আসছে, সেই গায়ত্রী এখনো অন্তরালে। কিলিং মিশনে নেতৃত্ব দেওয়া কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুছাসহ এ মামলার একাধিক আসামি পুলিশের খাতায় এখনো পলাতক। কিন্তু ক্রসফায়ারে মুছা মারা গেছেন বলে তার পরিবারের সদস্য ও হাইকোর্টে একটি মামলার শুনানিতে উঠে এসেছে। শুধু তাই নয়, ঘটনার পর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণের বিষয়ে আদালতের কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া না গেলেও এ বিষয়ে আজ বুধবার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
আলোচিত এ হত্যাকান্ডের পর দায়ের হওয়া প্রথম মামলা আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই আরেক মামলা নিয়ে পিবিআইয়ের তৎপরতা ঘটনায় জড়িতদের সাজা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কতটুকু গতি পায় তা দেখার বিষয় বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
পুলিশের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দুটি বইয়ের একাধিক পৃষ্ঠায় গায়ত্রী ও বাবুল আক্তারের ‘প্রেমালাপ’ লেখা হয়েছিল বলে মিতুর বাবার করা মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। সেখানে হাতের লেখাগুলো গায়ত্রী কিংবা বাবুল আক্তারের কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে চায় পিবিআই। গায়ত্রী অমর সিং যেহেতু জাতিসংঘের শরণার্থী-বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) কক্সবাজার কার্যালয়ে চাকরি করতেন, সেহেতু এ সংস্থায় তার লেখা নথি চেয়ে চিঠি দেয় পিবিআই। কিন্তু পিবিআইয়ের দেওয়া সেই চিঠির এখনো সদুত্তর দেয়নি ইউএনএইচসিআর। গায়ত্রী-বাবুলের হাতের লেখা পাওয়ার পর সেগুলো মিলিয়ে দেখার জন্য সিআইডির ল্যাবে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে মামলার তদন্তে বেশ কয়েকটি জটিলতায় পড়তে হচ্ছে তদন্ত সংস্থা পিবিআইকে। ক্লুলেস ও চ্যালেঞ্জিং বিভিন্ন মামলার জট খুলে ইতোমধ্যেই প্রশংসিত হয়েছে এ সংস্থাটি। তবে মিতু হত্যার ঘটনা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে রায় বিচারিক কার্যক্রম পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া এখন সংস্থাটির জন্য চ্যালেঞ্জের। এ মামলায় পুলিশেরই একজন সাবেক এসপি প্রধান আসামি হিসেবে ইতোমধ্যেই আলোচনায়।
প্রথম মামলার বাদী বাবুল আক্তারের উপস্থিতিতে নারাজি আবেদনের উপর শুনানি উপলক্ষে গতকাল বিকেলে তাকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রিয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়। বিশেষ নিরাপত্তার মাধ্যমে তাকে আজ আদালতে হাজির করার কথা জানান সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম খান।
এ বিষয়ে বাবুল আক্তারের আইনজীবী আজমুল হুদা জানান, আমরা আজ নারাজি শুনানিতে অংশ নিয়ে আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করব। যদি আদালত আমাদের আবেদন অর্থাৎ নারাজি গ্রহণ না করেন তাহলে বাবুল আক্তারের পরামর্শ সাপেক্ষে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।
পিবিআই সূত্রে জানা যায়, মিতু হত্যায় দায়ের হওয়া দ্বিতীয় মামলার আসামি ভোলা ও কয়েকজন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রথম মামলায়ও কয়েকজন আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। গত ২৩ অক্টোবর মহানগর হাকিম আদালতে দেয়া ভোলার জবানবন্দিতে উঠে আসে বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় খুন হন মিতু। অস্ত্র সরবরাহ করেন এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা। ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ মিতু হত্যাকাÐে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া মুছা। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হয় বলে অভিযোগ তার পরিবারের।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে ও, আর, নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর নগরীতে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয়দের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার প্রায় পাঁচ বছর পর গত ১২ মে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। বাবুল আক্তারের করা মামলায় স্ত্রী হত্যাকাÐে তারই সম্পৃক্ততা পায় পিবিআই। গত ১২ মে আগের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। বাবুল আক্তার ছাড়াও ওই মামলার বাকি সাত আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুছা (৪০), এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা (৪১), মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম (২৭), মো. আনোয়ার হোসেন (২৮), মো. খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু (২৮), সাইদুল ইসলাম সিকদার (৪৫) ও শাহজাহান মিয়া (২৮)।
এদিকে বাবুল আক্তারের করা মামলাটির চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদনকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে নারাজি প্রতিবেদন দাখিল করা হয় তার আইনজীবীর মাধ্যমে।