মা আমার সুখের কারিগর

10

রুমানা নাওয়ার

পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধ আর সুন্দর ঘ্রাণ পাই মা ‘র শরীরে। এ ঘ্রাণ যেন বেহেশত হতে আসা কোন মূল্যবান সুগন্ধি। কোটি টাকায় মিলবে না।এ এক অদ্ভুত অনুভব অনুভূতির জায়গা মা।হাসিটা মুখটা পুরো শরীরটা আল্লাহর ঐশ্বরিক দান। যতই দেখি তিয়াস মিটেনা।আমার মা যাকে আমি আম্মা ডাকি। তিনি এক অতুলনীয় নারী। সবার সেরা।পৃথিবীতে আমার মায়ের মতো এত সুন্দর নারী এত সুন্দর মুখ আর দ্বিতীয় টি দেখিনি। টিকালো নাক পানপাতার মতো মুখ আর দীর্ঘাঙী দেহের অধিকারী আমার মা আসলেই সুন্দরী ছিলেন তখন যেমন এখনও। আমরা আম্মার মতো দেখতে না হলেও তাঁর স্বভাব চরিত্র পেয়েছি। আম্মার বিশালাকার মনটা পেয়েছি। আমার তিনভাই ই আম্মার গড়ন। চেহারায়, শরীরে। আমি ঝুমা আব্বার ছাচের।আমার মেজো বোনকে ও অনেকে বলেন- মরজিয়ানার মতো। অকাল প্রয়াত আমাদের আরেক বোন রিবন আপাও নাকি হুবুহু আম্মার কপি ছিলেন।আমার বোধের জায়গা বিকাশ হওয়ার আগেই আপু চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে। তাঁর জন্য কি কান্না আমরা দেখেছি। আমার দুঃখিনী মা সন্তান হারানোর বেদনা নিয়ে দিনেরপর দিন কি অপরিসীম কান্না করেন আমরা সব ভাইবোন আব্বা স্বাক্ষী।এত এত চোখের জল কিভাবে আমার মা ধারণ করে আছেন বিস্মিত হই আমরা। তারপর অনেককাল পরে হারালো আব্বা। আম্মার পরমজন, নির্ভরতার আশ্রয়। আব্বাকে আম্মা আপনি বলে সম্বোধন করতেন।এত সুন্দর লাগতো সে ডাক। আমি শুনতাম আর শুনতাম। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা কতোটা প্রকট হলে এমন ডাকে সম্বোধন করা যায়। তা আব্বা আম্মাকে দেখে বুঝতাম। প্রচÐ দাপুটে আমার বাবা। সারাক্ষণ ইবাদত ঘর বাহির আর চাকরী সংসার এসব নিয়েই মশগুল থাকতেন। আট সন্তানকে পরিপূর্ণ শিক্ষায় মানুষ করার মুল মন্ত্র নিয়ে সারাজীবন লড়াই করেছেন জীবনযুদ্ধে। আম্মাও সে পথের সারথি।
আব্বার সহযোদ্ধা হয়ে তাঁর প্রত্যেকটা কাজে অকুণ্ঠ সহযোগী তা করেছেন, সমর্থন দিয়ে সাহস যুগিয়েছেন। দু’জন দু’পরিবার থেকে এসে এক হয়েছিলেন।ভালোবেসেছিলেন। সুখ দুঃখ ভাগ করে নিয়েছিলেন। আব্বাকে হারিয়ে আম্মার দিশেহারা অবস্থা। প্রায়ই সময় বলেন তোর বাবার প্রতি ঠিকঠাকমত দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। না হয় উনি কেন আমার আগে, চলে যাবেন।আমাকে একা রেখে। আব্বা চলে গেলো- আর আম্মার বৈধব্যবেশ শুরু যেন। নাকফুল গেল হাতের চুড়ি গেলো চওড়া সিথি চোখের আর দেহের যাবতীয় রঙিন স্বপ্ন রঙিন বেশ। আম্মাটা কেমন যেন হয়ে গেলো।দিনরাত বাবার জন্য শোক আর কান্না।ঘুমুতে গেলেও চোখজুড়ে আব্বার স্বপ্ন। আব্বা প্রতিদিনই আসেন। আমার আম্মা প্রতিটি মানুষকে আপনার মনে করেন। তাদের নিয়ে ভাবেন। আমার মা নতুন শাড়ী পড়লে কি এক অদ্ভুত সুন্দর লাগে। এ সুন্দর শান্ত স্নিগ্ধ মায়াময়। খালি তাকিয়ে দেখি। প্রতিটি সন্তানের কাছেই মনে হয় তার মা সেরা সুন্দর। পৃথিবীর কোন কদর্যতা মাদের স্পর্শ করতে পারেনা। মায়েরা আলোর মতো ফুলের মতো জোৎস্নার মতো কলকল বয়ে চলা নদীটির মতো কিংবা পাহাড় বেয়ে বেয়ে চলা পাথুরে ঝর্ণা। প্রতিটি সন্তানের সুখ এবংশখের কারিগর মা।মাকে অবহেলা করে কোন সন্তানই সুখী হতে পারেনা। আমরা বুঝিনি। কিন্ত যখন বুঝি তখন মা নামের পরশপাথর টি কে হারিয়ে ফেলি জীবন থেকে। আমার মা সহ পৃথিবীর সকল মা সুখে থাক। সন্তানের মায়ায় ছায়ায় ঘেরা থাক প্রতিটি মায়ের জীবন।
লেখক : প্রাবন্ধিক