মায়ের কাছে কন্যার চিঠি

43

সষ্টিকা চৌধুরী সামা

মা, তোমায় কিছু বলব মনে করে আজো তোমায় কিছু বলতে পারিনি। বলবোইবা কি করে মা, আমি যে নীরবে তোমার চোখের জল দেখে বোবা হয়ে গিয়েছি। তুমি চেয়েছিলে আমায় তুমি তোমার মতো মানুষ করতে। তোমার যত না পাওয়া কষ্ট আছে তা আমার মাঝে দেখতে চেয়েছ মা। চেয়েছ তোমার সংসার নামক জীবন সংগ্রামের মাঝে, তোমার হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন আমার চোখে দেখতে চেয়েছ, একটু বাঁচার আশায়। আমি জানি আমি প্রথম ধাপে ব্যর্থ হয়ে ফিরেছি তোমার কাছে, দিনের পর দিন আমি তোমায় চাঁদের আলো দেখিয়েছি, কিন্তু কখনো সেই আলো তোমার ঘরে আনতে পারিনি।
মা, আমার মনে আছে, আমি তখন ক্লাস ফোরে, শহরের একটি নামকরা স্কুলে ভর্তির জন্য তুমি কতো যুদ্ধ করেছিলে, বাবার তখন বেতন ছিল খুব সামান্য। তুমি তোমার ডায়াবেটিস আর প্রেশারের ঔষধ না কিনে সেই টাকা দিয়ে আমার জন্য ফর্ম কিনে এনেছিলে। কিন্তু আমি তোমায় নিরাশ করে দিয়েছিলাম। আমার ব্যর্থতায় তোমার বুকে আসে বর্ষাকালের কালো মেঘের গর্জন।
আমার জন্য তোমার মাথা নিচু হয়ে গিয়েছিল সবার সামনে। মা, আমি যখন রাতে ঘুমাতে যেতাম, তখন তোমাকে পেতাম না। দরজার চৌকাট পেরিয়ে দেখেছি সোফায় শুয়ে তোমার কষ্টে ভরা চোখের জল। এরপরও তুমি আমাকে সাহস দিয়েছ, সময় দিয়েছ আবার উঠে দাঁড়াবার। তোমার চেষ্টায় আজ আমি ডাক্তার। তুমি আমাদের ছোটবেলায় দেবীদের বিবরণ, শিখিয়েছিলে। ছোটবেলায় ঈশ্বরের পায়ে অঞ্জলি দিতে শিখিয়েছ। কিন্তু মা বাস্তবে দেখেছি আমার চোখে আসল দেবীতো তুমি। আমি যে তোমার পায়ে অঞ্জলি দিতে চাই মা। একবার আমায় সুযোগ দেবে মা তোমার পায়ে অঞ্জলি দেয়ার? আমি অপেক্ষায় রইলাম মা। ভালো থেকো মা।