মায়ের কষ্ট মুছতে চাকরিতে গিয়ে লাশ হলেন হাফেজ রেজা

171

হাফেজ মোহাম্মদ আহমদ রেজা প্রকাশ মিনহাম (১৮)। বাবা মরহুম মাওলানা আবু সিদ্দিক। অনেক দুঃখ-কষ্টের সংসার তাদের। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ অবস্থা পরিবারের। রেজারা তিন ভাই, তিন বোন। তিন ভাইয়ের মধ্যে রেজা সবার ছোট। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে।
করোনা মহামারিতে আর্থিক অনটনে দিশেহারা পুরো পরিবার। শত অভাব অনটনের মাঝে কোন রকমে সংসারকে আগলে রেখেছেন মা নুরাইন জান্নাত। জায়গা-সম্পত্তিও তেমন নেই। অন্য ভাইয়েরা বেকার। সংসারের অভাব সামাল দিতে যোগ দিয়েছিলেন এস আলমের বিদ্যুৎ প্রকল্পে। মায়ের দুঃখ লাঘবই ছিল চাকরি নেয়ার মূল টার্গেট। মাত্র এক সাপ্তাহ হল তার কাজের বয়স। কিন্তু গতকাল শনিবার তার বুকের পাজরের ডানদিক দিয়ে ঢুকা পুলিশের বুলেট যেন সবকিছুকে ওলটপালট করে দিয়ে গেছে। বুকের পাজরের বাম পাশ দিয়ে গুলিটি ঠিকই বের হয়েছে। কিন্তু সাথে করে বের করে নিয়েছে রেজার প্রাণ পাখিটিও।
হাসপাতালের বেডে নিথর নিস্তব্দ রেজা। প্রকল্প এলাকায় পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হওয়ার পর বাঁশখালী থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা যে হয়নি তা নয়। কিন্তু চিরনিদ্রার দেশে একবার গেলে কি আর ফিরে আসা যায়? গর্ভধারিনী মা, রক্তের বন্ধনের ভাই-বোনের মন কি তা বুঝে? বুঝে না বলেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিরব নিস্তব্দ রেজার মুখটি দু’হাতে বুকের সাথে জড়িয়ে সান্ত্বনা খুঁজেন মা। মায়ের কোলে খানিকক্ষণ ঘুম পাড়িয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন তিনি। যেভাবে ছোট বেলা বড্ড আদর করে রেজাকে ঘুম পাড়াতেন। বড় ভাইটি তার মুখের সাথে মুখ লাগিয়ে রেজাকে শেষবারের মতো আদর করলেন। দুই চোখের অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আর্থিক স্বচ্ছলতার যে স্বপ্ন নিয়ে প্রকল্পে গিয়েছিল রেজা, তার সেই স্বপ্ন মৃত্যুতেই মিলিয়ে গেল।
বাঁশখালী থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহাজারি করে মা নুরাইন জান্নাত বলছিলেন, প্রয়োজনে না খেয়ে থাকতাম। কেন তুই ওখানে কাজ করতে গেলি। আমার বুকের ধনকে কে ফিরিয়ে দেবে? যারা আমার মানিককে আমার বুক থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে, তাদের বিচার চাই।
প্রসঙ্গত, বেতনসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল শ্রমিকদের উপর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটায় পুলিশ। এতে ৫ জনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন অনেকে। প্রকল্প ছেড়ে গেছেন শ্রমিকরা।
রেজার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় তার খালা উম্মে হাবিবা জানান, অভাব অনটনের সংসারে মায়ের কষ্টের দিকে তাকিয়ে রেজা প্রকল্পে কাজ নেয়। তাও মাত্র এক সাপ্তাহ আগে। কিন্তু লাশ হয়ে ফিরতে হল। কিভাবে চলবে তাদের এ সংসার? তথ্য মতে, রেজাদের বাড়ি গন্ডামারার পূর্ব বড়ঘোনা ৮ নং ওয়ার্ড এলাকায়।