মাহবুব তালুকদারের ‘ভুল’ ধরিয়ে দিলেন ইসি সচিব

69

বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) দায়িত্ব পালন করছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। এক সময় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহকারী প্রেস সেক্রেটারি ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে (যেটা পরে আর হয়নি) বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যও লিখে দিয়েছিলেন। স্মৃতি চারণ করে মাহবুব তালুকদারের দেওয়া একটি বক্তব্যে ‘ভুল’ ধরিয়ে দিলেন ইসি সচিব মো. আলমগীর। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রোববার (১৮ আগস্ট) বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের অডিটারিয়ামে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে ভারপ্রাপ্ত সিইসির ‘ভুল’ ধরিয়ে দেন ইসি সচিব।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার স্মৃতি চারণ করে বলেন, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আমি বঙ্গভবনে যাই। খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়েছেন।
আমাকে ভাষণ লিখে দেওয়ার জন্য বলা হয়। গিয়ে দেখি মোশতাকের মন্ত্রীসভায় যোগদানের জন্য বসে আছেন আমার সাবেক বস, রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। তার সঙ্গে আরও অনেকে যারা মন্ত্রীসভায় যোগ দিতে বসে আছেন, সকলেই আওয়ামী লীগের লোকজন। আমি ভাবতে পারি না, কী করে তারা এটা করতে পারছেন! তাদের কারও চোখে পানি নেই।
‘এক দিয়ে আমি ভাগ্যবান। আরেক দিক দিয়ে আমি দুর্ভাগা। ভাগ্যবান এইজন্য যে, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। আর দুর্ভাগা এজন্য যে, তাঁকে এইভাবে হারিয়েছি। তিনি বেঁচে থাকলে আজকের বাংলাদেশ সত্যি সোনার বাংলা হয়ে যেত।’মাহবুব তালুকদারের এ বক্তব্যে ‘ভুল’ ধরিয়ে দেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. আলমগীর। তিনি বঙ্গবন্ধু এ সহকারী প্রেস সেক্রেটারির উদ্দেশে বলেন, ‘স্যার, তারা ছিল আঁতাতকারী। এজন্যই তারা মন্ত্রীসভায় যোগ দিতে পেরেছেন। তারা আঁতাতকারী ছিল বলেই তাদের চোখে পানি ছিল না। অনেকেই বলেন-একদল বিপথগামী সেনা সদস্য এ কাজ করেছে। কী করে এটা সম্ভব! তাদের দিয়ে করানো হয়েছে এ জঘন্য কাজ। তাদের পেছনে ছিল অন্য কেউ। সে সময়কার সিএসপি (সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান) অফিসারদের অনেকেই আঁতাত করেছেন।’
বুক ফুলিয়ে বাঁচিফাইল ছবিবিশেষ অতিথির বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্য আজকে বুক ফুলিয়ে বাঁচি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতার কেবিনেট সেক্রেটারি করার জন্য কোনো কর্মকর্তা পাচ্ছিলেন না। উপ-সচিবকে তখন কেবিনেট সেক্রেটারি বানাতে হয়েছিল। কেননা, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের বৈষ্যমের মধ্যে রেখেছিল। বঙ্গবন্ধু না থাকলে দেশে স্বাধীন হতো না। আর দেশ স্বাধীন না হলে আজ আমি নির্বাচন কমিশনার হতে পারতাম না। পাকিস্তানের অধীনে থাকলে আমি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হতে পারতাম কিনা সন্দেহ হয়।
নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, বাংলাদেশের অস্তিত্ব সুদৃঢ় করার সুযোগ তাকে দেওয়া হয়নি। বিশ্ববাসী যেখানে তাকে স্বীকৃতি দেয়, বাংলাদেশ তাকে নিয়ে দ্বিধা-বিভক্ত! আমরা কী তাকে ধারণ করতে পেরেছি? আমরা অকৃতজ্ঞ জাতি! তিনি বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুক অনন্য স্থান পেত। আমাদের শিশুদের জানাতে হবে প্রকৃত নেতা কে? প্রকৃত ইতিহাস তাদের মধ্যে বিলি করে দিতে হবে। অন্যথায় আগামীর পথ মসৃণ হবে না।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, একজন মিলিটারি লিডার হিসেবে বলছি, বঙ্গবন্ধু ছিলেন ক্যারিশম্যাটিক লিডার। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি একাধারে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলে যুদ্ধের নির্দেশনা দিয়েছেন। আবার একই ভাষণে অবরোধের ডাক দিয়ে বলেছেন, গরিব-দুঃখীদের যেন সমস্যা না হয়, সেজন্য রিকশা চলবে। কাজেই তিনি সবকিছু নিয়ে ভাবতেন। তিনি শুধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিই নন, তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনে ১৩ বছর জেল খেটেছেন। কত ত্যাগ তিতিক্ষা করছেন। কারণ স্বাধীনতা তার স্বপ্ন ছিল।