মাস্তানি-গডফাদারগিরি করে নেতা হওয়ার দিন শেষ

65

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘কেউ যদি মনে করেন একটা ধাক্কা দিলেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। বিএনপির বিষোদগারে আওয়ামী লীগের পতন হবে না। চক্রান্ত করে টেমস নদীর ওপার থেকে নাশকতার নির্দেশ নিয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে, আদালত অঙ্গনকে রণাঙ্গন বানিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন কেউ দেখবেন না, সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে রূপান্তরিত হবে।’
গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর লালদিঘি মাঠে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কথায় কথায় পতন চান, কথায় কথায় পদত্যাগ চান। কার পদত্যাগ আপনারা চান? আপনারাই পদত্যাগ করুন।
১০ বছরে ১০ মিনিটও রাস্তায় আন্দোলন করতে পারেননি। দুই বছর খালেদা জিয়া কারাগারে, দুই মিনিটও রাস্তায় দাঁড়াতে পারেননি। আপনারা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পতনের স্বপ্ন দেখলে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কি ঘরে বসে আঙ্গুল চুষবে? ক্ষমতা যদি চান, আরেকটা নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। নির্বাচনই পারে ক্ষমতার পালাবদল ঘটাতে। গণতন্ত্রের জন্য শক্তিশালী বিরোধীদল চাই। তবে বিরোধিতার নামে নাশকতা করলে সেটা সহ্য করব না।’
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি স্লোগান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘স্লোগান দিয়ে নেতা বানানো যাবে না। বিলবোর্ডে বড় বড় ছবি দিয়ে, পোস্টারে ঝকঝকে ছবি দিয়ে নেতা হওয়া যাবে না। মাস্তানি-গডফাদারগিরি করে নেতা হওয়ার দিন শেষ। নেতা হবেন দলের ত্যাগীরা, যারা দলের দুঃসময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সুখে-দুঃখে যারা দলের সঙ্গে ছিলেন, তারাই হবেন নেতা। দলের নেতৃত্বে সুবিধাবাদী আসলে আওয়ামী লীগ টিকে থাকবে না। আমরা সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত আওয়ামী লীগ চাই। বিশৃঙ্খলা চাই না। অনেক কর্মী দীর্ঘদিন দল করে, কিন্তু কমিটিতে পদ পায় না। কাউন্সিলরদের কাছে গ্রহণযোগ্য, জনগণের কাছে জনপ্রিয় ব্যক্তিকে নেতা বানাতে হবে।
পদ না পেলে হতাশ না হওয়ার আহব্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কমিটিতে একজন প্রেসিডেন্ট, একজন সেক্রেটারি হবেন। অনেক প্রার্থী আছেন, যারা হতে পারবেন না, তারা হতাশ হবেন না। আওয়ামী লীগে কারও অবমূল্যায়ন হয় না। ২-১ জন আমাকে টেলিফোন করে বলেছেন, এবার যদি পদ না পান, তাহলে নাকি আত্মহত্যা করবেন। আত্মহত্যা করে কাপুরুষরা। রাজনীতি করে কালপুরুষরা। কাপুরুষরা রাজনীতিতে কখনো সফল হতে পারে না।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল মতিন খসরু খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার আমরা ২১ বছর পাইনি। যে আদালতে গেছি, সেই আদালত বিব্রতবোধ করেছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে আমাদের ৪৩ বছর লেগেছে। আমরা তো আদালতে ভাঙচুর করিনি। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের তো আমরা চাইলে গুলি করে মারতে পারতাম, আমরা তো সেটা করিনি। আসলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, বিএনপি সেটা সহ্য করতে পারছে না। কারণ ১০ বছর সাজা খেটে বেরিয়ে আসার পর খালেদা জিয়ার আর প্রধানমন্ত্রী হওয়া হবে না।’
সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আবেগাপ্লুতভাবে বলেন, ‘ এটা আমার জীবনের শেষ সম্মেলন হতে পারে। আমার সহকর্মীরা এখন কেউ বেঁচে নেই। উত্তর জেলা অত্যন্ত সুসংগঠিত। কমিটিতে পদ পেলে চাঁদাবাজি করবে, এমন লোক আমরা চাই না। আমরা চাই পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদরা যেন কমিটিতে আসে, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মামলায় হাজিরার জন্য বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা প্রায় ১০৮ বার সময় নিয়েছেন। তারা যদি ১০০ বার সময় নিতে পারেন, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁশুলি মাত্র একবার সময় নেওয়ার পরই তারা আদালতে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাচ্ছেন। মাত্র এক সপ্তাহ জামিন শুনানি পিছিয়েছে, তাতেই তারা এত ক্ষুব্ধ হয়ে গেছেন? এতে প্রমাণ হয় বিএনপির আইন-আদালতের প্রতি কোনো শ্রদ্ধাবোধ নেই। আশা করি আদালত এবং আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।’
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার জামিন চাইতে গিয়ে বিএনপির আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির বেঞ্চে যেভাবে হাঙ্গামা করেছে, দেশের ইতিহাসে কখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। জামিন শুনানি এক সপ্তাহ পেছানোর কারণে তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাহলে খালেদা জিয়ার জামিন হলে তারা আরও কি কি ঘটাবেন তা অনুমেয়।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘বিএনপি এখন মিডিয়াভিত্তিক দলে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন পল্টনে বসে ক্যামেরার সামনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কটূক্তি করা ছাড়া বিএনপি নেতাদের আর কোনো কাজ নেই। তাদের নেতা তারেক রহমান ক্ষমতায় থাকার সময় ১০ ট্রাক অস্ত্র এনেছিল আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতকে অস্থিতিশীল করার জন্য। বাংলাদেশের মাটিতে আমরা আর এই তারেক রহমানকে দেখতে চাই না। তাকে বাংলাদেশের মাটিতে অবাঞ্ছিত করেছে জনগণ। তারেক রহমান বাংলাদেশে ফিরতে চাইলে চট্টগ্রামের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করবে।’
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালামের পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মো. মাঈনুদ্দিন ও শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দপ্তর সম্পাদক মহিউদ্দিন বাবলু।