‘মাসোহারা’ দিয়ে চলছে ২ হাজার অবৈধ ট্যাক্সি

158

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও আঞ্চলিক ট্রান্সপোর্ট কমিটির (আরটিসি) অনুমোদন ছাড়াই কর্ণফুলী মইজ্জারটেক মোড় হতে আনোয়ারা বাঁশখালী পর্যন্ত সড়কে দুই হাজারেরও বেশি গ্রাম সিএনজি চালিত ট্যাক্সি চলাচল করছে। এসব ট্রাক্সির চালকদের নেই লাইসেন্স। যেসব গাড়ি চলাচল করছে সবগুলো গ্রাম সিএনজি চালিত ট্যাক্সি। এসব নিয়ন্ত্রণহীন অবৈধ ট্যাক্সির দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় ওই সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
অভিযোগ উঠেছে, শিকলবাহা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের একান্ত সচিব ইমতিয়াজ, সিএনজি চালিত ট্যাক্সি সমিতির সভাপতি মো. হানিফ ও লাইনম্যান ইউছুপের নিয়ন্ত্রণে এসব গাড়ি চলাচল করছে।
চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কর্ণফুলী ব্রিজের পর মইজ্জারটেক মোড়ে এসব গাড়ির অবৈধ স্টেশন গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতি ট্যাক্সিকে দৈনিক ওয়েবিল দিতে হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং মাসিক দিতে হয় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও আনোয়ারা-বাঁশখালী যাওয়ার পথে কয়েকটি স্থানে ১০/২০ টাকা করে দিতে হয় প্রতি ট্যাক্সিকে। সেই হিসেবে প্রতিদিন ২ হাজার ট্যাক্সি থেকে ৫০ টাকা করে ওয়েবিল আদায় করা হয় ১ লাখ টাকা। মাসে আদায় হয় ৩০ লাখ টাকা এবং বছরে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। যা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আদায় করা হয়। এছাড়াও কোনও গাড়ি লাইনে ঢুকালে দিতে হয় এককালীন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর মাসে সমিতির নেতৃবৃন্দকে ম্যানেজ করতে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা দিতে হয়।
ওয়েবিলগুলো কি করা হয় জানতে চাইলে চালক কালাম (ছদ্মনাম) বলেন, গাড়ি চলাচলের বিভিন্ন পর্যায়ে মাসোহারা দিতে হয়। তা না হলে গাড়ি চলতে দেন না তারা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক চালক বলেন, পুরো লাইনের দায়িত্বে আছেন মো. ইউছুপ, শিকলবাহা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের একান্ত সহকারী মো. ইমতিয়াজ এবং সমিতির সভাপতি মো. হানিফ। তবে লাইনম্যান মো. ইউছুপ টাকা আদায় করে বিভিন্ন পর্যায়ে দেন।
তিনি আরও জানান, গাড়ির কাগজপত্র না থাকলেও কোনও সমস্যা হয় না। সব উনারাই ম্যানেজ করেন। উনাদের লাইনে থাকলে পুলিশ বা নেতারা আর বিরক্ত করবে না।
লাইনম্যান মো. ইউছুপের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি পূর্বদেশকে জানান, আমি লাইনের একজন বেতনধারী চাকরিজীবী। টাকা তোলা আমার কাজ। তবে আমি কোনও গাড়ির অনুমোদন বা বাতিল করতে পারি না।
লাইন নিয়ন্ত্রণকারী মো. ইমতিয়াজ মুঠোফোনে জানান, আমি কোনও সিএনজি চালিত ট্যাক্সির সাথে জড়িত নই। যে ড্রাইভার বলছে তাকে বলেন আমার নামে অভিযোগ করতে। আর আপনি আমার সাথে দেখা করতে আসেন।
এ ব্যাপারে জানতে কর্ণফুলীর ট্রাফিক পরিদর্শক মো. জাহেদুল ইসলামকে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
সিএমপি ট্রাফিক বন্দর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার তারেক আহমেদ পূর্বদেশকে বলেন, আমি শুনেছি ওখানে অবৈধ সিএনজি চালিত ট্যাক্সি চলাচলের ক্ষেত্রে লোকাল কিছু লোকজন জড়িত আছে। আমরা প্রতিদিন ওখানে অভিযান চালিয়ে গাড়ি জব্দ করছি। একসাথে তো আর সব গাড়ি জব্দ করা সম্ভব না। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।