মাসজুড়ে থাকবে বৃষ্টি ও শীত

21

তুষার দেব

জেট স্ট্রিম কিংবা পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসজুড়েই দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সাথে শীতের তীব্রতা অব্যাহত থাকার আভাস মিলেছে। বাংলা বর্ষপঞ্জিকার হিসেব ধরে সপ্তাহখানেক পর শীত কাগজে-কলমে বিদায় নিয়ে বসন্ত ঋতুর যাত্রা শুরুর সময় হলেও এবার শীতকালের স্থায়ীত্ব খানিকটা দীর্ঘ হতে পারে। আগামী মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের আগে শীতের তীব্রতা তেমন কমবে না বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়া পূর্বাভাসের গ্লোবাল বা আমেরিকান মডেল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মডেলের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে গতকাল সোমবার পূর্বদেশকে এ তথ্য জানিয়েছেন আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ। ভিনদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষক আরও জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলে অন্তত আরও চার দিন হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া আগামী ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি উত্তরাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল এবং রাজশাহী জেলায় সর্বনিম্ন ১০ থেকে ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার আলামত বিদ্যমান রয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসের গ্লোবাল বা আমেরিকান মডেল অনুযায়ী, চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের আগামী ১৮ থকে ২০ তারিখ পর্যন্ত আবারও বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর মধ্যে ১৮ ফেব্রুয়ারি রংপুর বিভাগে এবং ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। এসময় বৃষ্টিপাতের পরিমাণও তুলনামূলক বেশি হতে পারে।
দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হামিদ মিয়া পূর্বদেশকে জানান, বর্তমানে চট্টগ্রামের সমুদ্র উপক‚লবর্তী সীতাকুন্ড উপজেলা, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ জেলাসহ রংপুর বিভাগের বিভিন্ন এলাকার উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা কোনও কোনও জায়গা থেকে প্রশমিত হয়ে আসতে পারে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। পরবর্তী দু’দিন বা আটচল্লিশ ঘণ্টার আবহাওয়ার অবস্থায় বৃষ্টিপাতের আলামত এবং বর্ধিত পাঁচদিনের আবহাওয়ায় রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ বলছে, এবারের শীতকাল যথাসময়ে পথচলা শুরু করলেও গোড়া থেকেই ব্যতিক্রমী আচরণ করছে। বিদায়ী বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে হিমেল হাওয়া আর কুয়াশার চাদরে ভর করে শীতকালের যাত্রা শুরু হয়। এ মাসে দেশে অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রায় ৮০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে আবহাওয়া ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে শুষ্ক। ডিসেম্বরে ঠিক তার উল্টো চক্র ধরা দিয়েছে। ওই মাসে সারা দেশে গড়পড়তায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। কিন্তু এবার হয়েছে তার চেয়ে পাঁচ গুণেরও বেশি। এই সময়ের মধ্যে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার কথা ছিল দুই থেকে চারটি। বয়ে গেছে মাত্র একটি। তবে চলতি জানুয়ারি মাসে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ছয় জেলায় শৈত্যপ্রবাহকে সঙ্গী করেই খ্রীস্টাব্দের নতুন বছরের পথচলা শুরু হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিকে (পৌষ ও মাঘ) শীতকাল হিসেবে গণনা করা হয়। এই পুরো সময় দেশের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়। অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস বর্ষার শেষ ও শীত শুরুর অন্তর্বর্তীকাল। এ সময় আকাশ বেশি মেঘলা থাকে বলে বাতাসে আর্দ্রতাও বেশি থাকে। সে হিসাবে কিছুটা ঠান্ডা অনুভূত হলেও একে ঠিক শীতকাল বলা যাবে না। এ সময় পুরোপুরি শীত না পড়ার আরেকটি কারণ হলো বায়ুপ্রবাহ স্থির না থাকা। অর্থাৎ এ সময়ে উত্তর-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আসে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তরফে দেশে এবারের শীত মৌসুমের স্থায়িত্ব ও তীব্রতা নিকট অতীতের কয়েক বছরের তুলনায় তীব্র হতে পারে; যা ডিসেম্বরের শেষার্ধ থেকে শুরু হয়ে মার্চ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিগত ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি পূর্ববর্তী পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসের পাতা পাল্টে দিয়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এখন পর্যন্ত সেটাই দেশের শীত মৌসুমের ইতিহাসে রেকর্ডকৃত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলে দুই দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। আবহাওয়াবিদরা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে সেটাকে ‘মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ’ এবং আট ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে হলে তাকে ‘মৃদু শৈত্যপ্রবাহ’ বলেন। আর সর্বনি¤œ তাপমাত্রার পারদ ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর পেরিয়ে নিচের দিকে নামলে তাকে ‘তীব্র শৈত্যপ্রবাহ’ বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।