মার্চ

14

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে অনবদ্য ভমিকা রয়েছে চট্টগ্রামের। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশের পরিপ্রেক্ষতে চট্টগ্রামে যা কিছু সম্ভব করণীয়, তা পালনের এক পর্যায়ে ২৫ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ জহুর আহম্মদ চৌধুরীর বাসভবনে স্ট্র্যাটেজি ঠিক করার লক্ষ্যে আলোচনায় মিলিত হন। এ সময় টিএন্ডটি বিভাগের একজন কর্মচারি জহুর আহম্মদ চৌধুরীর কাছে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি দেন টেলিগ্রাম আকারে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রটি বাংলায় অনুবাদসহ ইংরেজিতে বাংলায় সাইক্লোস্টাইল করে বিলি করার জন্য এমএ হান্নান, এমএ মান্নান, আতাউর রহমান কায়সার প্রমুখ আন্দরকিল্লা আওয়ামী লীগ অফিসে যান। ঘোষণাপত্রটির সাইক্লোস্টাইল করা কপি রাতেই সারা শহরে বিতরণ করা হয়। একই রাতে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাইকযোগে প্রচার করা হয় যে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। শত্রুকে প্রতিরোধ করার জন্য জনগণকে অনুরোধ জানানো হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার বার্তা ব্যাপক প্রচার ছাড়াও ২৫ মার্চ শেষরাত থেকেই
আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নান, এমএ মান্নান ও আতাউর রহমান খান কায়সার মেজর জিয়ার খোঁজে বেরিয়ে পড়েন এবং সকাল ৮-৯টায় করলডেঙ্গা গ্রামে গিয়ে মেজর জিয়ার সঙ্গে অবস্থানরত মেজর মীর শওকত, ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান, লেফটেন্যান্ট মাহফুজ, লেফটেন্যান্ট ওয়ালী এবং লেফটেন্যান্ট শমশের মবিন চৌধুরীর সাক্ষাৎ পান। তাদের অনুরোধ করা হয়, শহরে ফিরে এসে প্রতিরোধ জোরদার করার জন্য।
মেজর জিয়া তখন জানান যে, তারা ক্লান্ত। স্ট্র্যাটেজি ঠিক না করে কিছু করবেন না। মেজর জিয়া অবশ্য বলেছিলেন যে, ওইদিনের (২৬ মার্চ) মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। বস্তুত মেজর জিয়া করলডেঙ্গায় অবস্থান নেয়ার পরে আর চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করেননি। অবশ্য মূল শহর থেকে বাইরে কালুরঘাট ট্রান্সমিটিং সেন্টারে পাহারার জন্য বেতারকর্মী বেলাল মোহাম্মদ নিজে করলডেঙ্গা গিয়ে জিয়াকে নিয়ে এসেছিলেন ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় ট্রান্সমিটিং সেন্টারে। মেজর মীর শওকত আলী ২৭ মার্চ একটি জিপে করে চট্টগ্রাম শহরে আসেন এবং পুনরায় করলডেঙ্গা ফিরে যান। ২৬ মার্চ পটিয়ায় মেজর জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পরে বেলা ১১টার দিকে শহরে ফিরে এসে এমএ হান্নান গেলেন চট্টগ্রাম রেস্ট হাউসে এবং এমএ মান্নান গেলেন ফিরীঙ্গিবাজার আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এমপির ‘জুপিটার হাউস’ বাসভবনে, যেখানে মিটিং বসেছিল সংগ্রাম পরিষদের।
উল্লেখ্য, পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এমআর সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক এমএ হান্নান ও তৎকালীন শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি জহুর আহাম্মদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এমএ মান্নান এবং অধ্যাপক খালেদ। স্টেশনে রোড রেস্ট হাউস (পরবর্তীতে মোটেল সৈকত) আন্দরকিল্লা আওয়ামী লীগ অফিস, দামপাড়া জহুর আহাম্মদ চৌধুরী বাসভবন, এমআর সিদ্দিকীর লালখান বাজারস্থ বাসভবন এবং পাথরঘাটায় আখতারুজ্জামান বাবুর বাসভবনই ছিল সংগ্রাম পরিষদের আলোচনার স্থান। রেস্ট হাউস ব্যবহৃত হয়েছিল অপারেশন হেড কোয়ার্টার হিসেবে।