মার্কিন রিপোর্টে দুর্বলতা থাকলেও বিশ্লেষণ করা হবে

14

পূর্বদেশ ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত মানবাধিকার রিপোর্টে মৌলিক দুর্বলতা এবং ভুল আছে। ওই দেশের সরকারের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। গতকাল মঙ্গলবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রিপোর্টের বিষয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমরা বিশ্লেষণ করে দেখবো এগুলোতে আদৌ আমলে নেওয়ার কোনও বিষয় আছে কিনা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের যে যোগাযোগের মাত্রা, সে প্রেক্ষাপট থেকে আমাদের যে আপত্তিগুলো আছে, সামনের দিনগুলোতে উচ্চ পর্যায়ের যে সফর হবে বা অন্য বৈঠকে এ রিপোর্টের দুর্বলতাগুলো তুলে ধরবো, যাতে সামনের বছরের রিপোর্টে এগুলো না থাকে। খবর বাংলা ট্রিবিউন।
মৌলিক কিছু দুর্বলতা আছে মন্তব্য করে তিনি জানান, একটি বন্ধুরাষ্ট্র নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। আমরা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বলে থাকি এ ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার আগে আমাদের আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় এবং বরাবরের মতো এবারও প্রতিশ্রæতি রক্ষা করা হয়নি। আমি মনে করি, এটি একটি বড় ধরনের দুর্বলতা।
দ্বিতীয় দুর্বলতা হলো, উন্মুক্ত সূত্র থেকে উপাত্তগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। এটিতে স্ববিরোধী অবস্থান প্রকাশ পায়। অনেক সময় তাদের পক্ষ থেকে বলা হয় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে, বাকস্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে। কিন্তু এ রিপোর্টে ওপেন সোর্সের অনেক উদাহরণ আছে এবং এতে এটি প্রমাণিত হয় যে খবর তৈরিতে সরকার বাধা প্রদান করে না বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, তৃতীয় পর্যবেক্ষণ হচ্ছে এ প্রতিবেদনে কিছু এনজিও, আইএনজিও এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনের রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অধিকার। আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, অধিকারের বর্তমানে কাজ করার কোনও বৈধ কাগজ বা লাইসেন্স নেই। তারা তাদের লাইসেন্স নবায়নের জন্য যে আবেদন করেছিল সেটি বাতিল করা হয়েছে। তারা যে আপিল করেছিল, আপিল কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। এবং সম্ভবত এটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, পরিষ্কার ভাষায় বলছি, যেকোনও নাগরিক সমাজের সংগঠন বা বেসরকারি সাহায্য সংস্থা, যার একটি রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে, রাজনৈতিক পরিচয় আছে—তাদের নিরপেক্ষতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার কোনও সুযোগ নেই। এ ধরনের দুর্বলতা যদি অব্যাহত থাকে তবে এ প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে যায়।
২০২১ এবং ২০২২-এর রিপোর্টের মধ্যে গুণগত তফাত নেই জানিয়ে তিনি বলেন, কোথাও কোথাও আমাদের প্রশংসা করা হয়েছে এবং সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে বিভিন্ন জায়গায় আমরা উন্নতি করেছি তার প্রতিফলন এই প্রতিবেদনে রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা প্রসঙ্গে
বাংলাদেশ অবশ্যই একটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আমাদের যাত্রাপথ যে কত কণ্টকাকীর্ণ ছিল বা এখনও আছে সেটি যেকোনও রাষ্ট্র বোঝে বা জানে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, একজন প্রধানমন্ত্রীর যতটুকু ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন ততটুকুই আছে। এটির ডিগ্রি অব অ্যাপ্লিকেশন বা অন্য কিছু নিয়ে একটি বন্ধুরাষ্ট্রের সংশয় প্রকাশ কিংবা প্রশ্ন তোলার কোনও নৈতিক অধিকার নেই। এটি বলতে গেলে আরও অনেক কিছু বলতে হবে, যেটি অস্বস্তিকর হয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী সংক্রান্ত মন্তব্য দুঃখজনক কিনা এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে কিছু জানাবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, অবশ্যই বলবো।’ তিনি জানান যে একটি প্রেসিডেন্টশিয়ালভিত্তিক সরকারে তার নির্দেশে অনেক কিছু হতে পারে। এটি সংবিধানের অংশ এবং এভাবেই তাদের সরকার পরিচালিত হয়। তাহলে কি আমরা বলবো যে ওই দেশে প্রেসিডেন্টই একমাত্র ক্ষমতাধর ব্যক্তি। কিন্তু বিষয়টি সেরকম নয়।
প্রতিবেদনে ভুল
ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবেদনে কিছু ভুল পেয়েছে। শাহরিয়ার আলম বলেন, গুমের সংখ্যা এখানে ৮১ উল্লেখ করা হয়েছে। আপনারা জানেন এ সংখ্যা হবে ৭৬। এক্ষেত্রে ৭৬-এর বিষয়ে খুব অস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশ ১০ জনকে চিহ্নিত করার দাবি করেছে। বিষয়টি এমনভাবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে এর কোনও সুরাহা হয়নি। কিন্তু এখানে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, জাতিসংঘ ওই ১০ জনের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পর তারা নিজেরাই যাচাই-বাছাই করেছে এবং ইতোমধ্যে ওই ৭৬-এর তালিকা থেকে ১০ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কাজেই বিষয়টি এমন নয় যে বাংলাদেশ ওই বিষয়টি নিয়ে দাবি করছে।
অনিবন্ধিত সংগঠন
যেসব সংগঠন নিবন্ধিত নয়, তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা বেআইনি বা নিয়মসিদ্ধ নয়। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনাদের অনুরোধ জানাবো শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, অন্যান্য রাষ্ট্রও এসব সংস্থা থেকে যেন দূরে থাকে এবং আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী যাকে যেভাবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকি সেগুলো আমলে নিয়ে যেনও সামনের দিনগুলোতে কার্যক্রম পরিচালনা করে।