মান্না

16

সৈয়দ মোহাম্মদ আসলাম তালুকদার (মঞ্চনাম মান্না), একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা ও প্রযোজক। মান্না চব্বিশ বছরের কর্মজীবনে তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত আম্মাজান চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। তিনি বীর সৈনিক চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং আম্মাজান চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসাবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন।
এছাড়াও তিনি তিনবার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন এবং বেশ কয়েকবার বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে দাঙ্গা, কাসেম মালার প্রেম, আম্মাজান, শান্ত কেন মাস্তান, কষ্ট, বীর সৈনিক, অবুঝ শিশু, সাজঘর, উত্তরের খেপ ও কাবুলিওয়ালা ইত্যাদি অন্যতম।
মান্না ১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় সৈয়দ মোহাম্মদ আসলাম তালুকদার হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা নুরুল ইসলাম তালুকদার ও মাতা হাসিনা ইসলাম। মান্না উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে ঢাকা কলেজে স্নাতকে ভর্তি হন।
ব্যক্তিগত জীবনে মান্না তার কর্মজীবনের শুরুর দিকের সহ-অভিনেত্রী শেলী কাদেরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির সিয়াম ইলতিমাস মান্না নামে এক পুত্র সন্তান রয়েছে।
মান্না ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা (এফডিসি) আয়োজিত নতুন মুখের সন্ধানে কার্যক্রমে নির্বাচিত হন। ১৯৮৫ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত পাগলী চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র শিল্পে অভিষেক ঘটে। যদিও তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র তওবা। এরপর তিনি নিপা মোনালিসার বিপরীতে শিমুল পারুল (১৯৮৫), রেহানা জলির বিপরীতে নিষ্পাপ (১৯৮৬), কবিতার বিপরীতে বাপ বেটা ৪২০ (১৯৮৮), চম্পার বিপরীতে ভাই (১৯৮৮), আমার জান (১৯৮৮), সুনেত্রার বিপরীতে বাদশা ভাই (১৯৮৯), কোবরা (১৯৮৯), চম্পার বিপরীতে গরীবের বন্ধু (১৯৯০), আম্মা (১৯৯০), রানীর বিপরীতে অবুঝ সন্তান (১৯৯০), ছোট বউ (১৯৯০), পালকী (১৯৯০), দুখী মা (১৯৯০) চলচ্চিত্রগুলোতে অভিনয় করেন। মান্না ১৯৯১ সালে মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত কাসেম মালার প্রেম চলচ্চিত্রে প্রথম একক নায়ক হিসেবে চম্পার বিপরীতে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি ব্যবসায়িকভাবে সফল হলে, তিনি কয়েকটি চলচ্চিত্রে কাজ করারও সুযোগ পান।
এরপর ১৯৯২ সালে কাজী হায়াতের দাঙ্গা ও ত্রাস চলচ্চিত্রেও একক অভিনেতা হিসাবে সফলতা পান তিনি। একই বছর তার অভিনীত মোস্তফা আনোয়ারের অন্ধ প্রেম, মনতাজুর রহমান আকবরের প্রেম দিওয়ানা ও ডিস্কো ড্যান্সার, কাজী হায়াতের দেশদ্রোহী, মনতাজুর রহমান আকবরের বাবার আদেশ, অশোক ঘোষের শাদী মোবারক, বুলবুল আহমেদের গরম হাওয়া, সাইফুল আজম কাশেমের সাক্ষাৎ, কামাল আহমেদের অবুঝ সন্তান, দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর গরীবের বন্ধু চলচ্চিত্রগুলো মুক্তি পায়।
১৯৯৩ সালে তিনি কাজী হায়াতের চাঁদাবাজ, সিপাহী, দেশপ্রেমিক, দেশদ্রোহী, ধর, তেজী ও সমাজ কে বদলে দাও, নুর হোসেন বলাইর ওরা তিনজন ও শেষ খেলা, নাদিম মাহমুদের আন্দোলন, রুটি ও রাজপথের রাজা, এম এ মালেকের দুর্নীতিবাজ, এফ আই মানিক পরিচালিত বিশাল আক্রমন মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর চিরঋণী, এ জে রানা পরিচালিত মানুষ, বেলাল আহমেদ পরিচালিত সাক্ষী প্রমাণ এবং মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ডিস্কো ড্যান্সার ও বশিরা ইত্যাদি চলচ্চিত্রগুলোতে অভিনয় করেন।
মান্না অভিনয়ের পাশাপাশি কয়েকটি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন। তিনি কৃতাঞ্জলী চলচ্চিত্র নামে একটি প্রযোজনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি লুটতারাজ, স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ, দুই বধু এক স্বামী, আমি জেল থেকে বলছি, পিতা মাতার আমানতসহ মোট আটটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন।
তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।
মান্না ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রæয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে ৪৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। সূত্র : উইকিপিডিয়া