মানুষ সরিয়ে নিয়ে বন জঙ্গলে নিরাপদ করুন

73

ক্যামিকেল গোডাউন ঢাকা শহর থেকে সরানোর দরকার নেই বরং শহরের মানুষগুলো সরিয়ে বনজঙ্গলে নিয়ে যান। আর তাতে মানুষ নিরাপদ হবে; ঝামেলা চুকে যাবে। চকবাজারে যা ঘটেছে সেই ২০১০ সালে নিমতলীতে একই ঘটনা ঘটেছিল। তখন ১২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিলে চকবাজারে পুনরাবৃত্তি হতো না। শত অঙ্গার হওয়া লাশ আর আমাদের দেখতে হতো না। নিমতলির মর্মান্তিক ঘটনার পর ক্যামিকেল গোডাউনগুলো সরানোর দাবি ওঠে। সরকারও নড়েচড়ে বসে। শোক শেষ হলে বেমালুম ভুলে যায় সবাই। গোডাউন সরেনি বরং ফুলে ফেঁপে গোডাউনের সংখ্যা বেড়েছে। লাইসেন্স দেয়া হয়েছে নুুনদের। তাই যা হবার তাই হয়েছে। ফের আঙ্গার হয়েছে মানুষ। মানুষের পোড়া হাঁড়, মাংসের গন্ধে গোটা বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় দুমড়েমুচড়ে দিয়েছে। এবারের ঘটনাও সবাই ভুলে যাবে।
ভোলারাম বাঙালি বলে কথা! মানুষ শোক ভুলবে; সরকার কতব্য করতে ভুলবে। আবারও পাশের কোন গোডাউনে আগুন লাগবে। আবারও মানুষ মরে কয়লা-কাবাব হবে। মানুষের জীবনের কি আর দাম আছে? থাকলে ব্যস্ত এলাকা থেকে কবেই গোডাউনগুলো সরে যেত। নিমতলী ট্রাজেডির পর গোডাউন সরানোর প্রকল্প বাস্তবায়নে ১০ বছর সময় লাগতো না। এভাবে আবার মানুষ অঙ্গার হতো না। প্রকৃতপক্ষে এ দায় কার? এর সঠিক উত্তর কেউ দিতে পারবে না। ব্যস্ত শহর থেকে ক্যামিকেল গোডাউন যখন সরানো যাচ্ছে না তখন বুদ্ধি একটা আছে। ক্যামিকেল গোডাউনগুলো যখন সরানো হচ্ছে না তা হলে না হয় শহরের মানুস গুলো সরিয়ে শহরের বাইরে কোন জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হউক। মানুষগুলোর জীবন নিরাপদ হবে। তাতে আগুন লাগলে ক্যামিকেল পুরবে মানুষতো আর পুড়ে কয়লা হবে না। আসলে আমরা নির্লজ্জ অসভ্য জাতি। আমাদের বোধউদয় হয় না কখনো। দায়িত্বশীলরা দ্বায়িত্ব পালন করে না কখনো। তাই আমরা লাশ হই রাস্তা ঘাটে, বসত ঘরে কর্মস্থলে। কোথাও এক দন্ড নিরাপত্তা নেই আমাদের। সেই ২০১০ সালে নিমতলীতে একই ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনায় ১২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিলে চকবাজারে পুনরাবৃত্তি হতো না মোটেও।
কেরানীগঞ্জ বিসিক কেমিক্যাল পল্লীর কি খবর? পত্রিকান্তে জানলাম, আট বছরেও মেলেনি জমি। নিমতলী ট্র্যাজেডির পর প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া হয় ২০১০ সালে কিন্তু অনুমোদন ২০১৮ সালে। আমাদের দূরভাগ্য বলতে হয়। ১০ বছরে প্রকল্প অনুমোদন আর বাস্তবায়ন কোনটাই হয়নি। পুরান ঢাকায় ছড়িয়ে আছে ৪ হাজার কেমিক্যাল গুদাম ও কারখানা। গিঞ্জি পুরনো ঢাকার শহরটাতে ক্যামিকেল কারখানা ভাবা কি যায়? এটা বাংলাদেশেই সম্ভব। কেরানীগঞ্জে কেমিক্যাল পল্লী স্থাপনের জন্য আট বছরেও জমি অধিগ্রহণ হয়নি। ২০১৮ সালে একনেকে অনুমোদনের পর গত জানুয়ারিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে প্রকল্প পরিচালক। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না দেয়ায় এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। বরাদ্দ পেলে জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)। আল্লাহ জানে গোডাউনগুলো সরানোর কাজ কবে শেষ হবে। আগে মানুষ কয়লা হয়েছে ১২৪ জন এবার শতাধিক ছাড়াবে। এর পর কিছু না ঘটুক। ঘটলে হয়তো প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে পারে।
নিমতলী থেকে চকবাজারের চুড়িহাট্টার ট্র্যাজেডি পর্যন্ত কয়েক বছরে মন্ত্রী, মেয়র, সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা দফায় দফায় গুদাম সরানোর ঘোষণা, আশ্বাস ও নির্দেশ দেন। সব নির্দেশ অকার্যকর ছিলো। পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে থাকা ৪ হাজার কেমিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলো ছিলো বহাল তবিয়তে। নিমতলির ঘটনার পর তৎকালীন বাণিজ্য মন্ত্রী ক্যামিকেল গোডাউনগুলো শহর থেকে সরিয়ে নেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন। নিমতলীর ঘটনার সময় আওয়ামী লীগের নেুৃত্বাধীন সরকারে শিল্পমন্ত্রী ছিলেন দিলীপ বড়ুয়া। সে সময় তিনি অবৈধ রাসায়নিক ব্যবসার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো এবং এসব স্থানান্তরের কথা বললেও বাস্তবায়ন করতে পারেননি। কিন্তু তিনি ব্যর্থতার দায় নিতে রাজি নন। তখনকার বাণিজ্যমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া দুসছেন বিগত সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে। পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে না নেওয়ার জন্য সদ্য সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে দোষারোপ করে ২৩ ফেব্রুয়ারী আওয়ামী লীগ নেুৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া সাংবাদিকদের তাঁর এমন ক্ষেভ প্রকাশ করেন। মহাজোট সরকারের সাবেক এই শিল্পমন্ত্রী বলেছেন, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু গুরুত্বের সঙ্গে নিলে হয়তো এতদিনে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গোডাউন সরানো সহজ হতো।
আসলে দোষাদুষির বাংলাদেশ। সবাই সবার দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে শান্তি পায়। দিলিপ বড়ুয়া যেমন আমির হোসেন আমুর উপর দোষ চাপিয়ে বেশ বাহবা নিচ্ছেন। আসলে সবাই বড় বড় কথা বলেন কাজ করেন না। যে কাজে কেবল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরবহ হন সেটাই বাস্তবায়ন হয় মাত্র। দেশকে মাদক মুক্ত করতে তাঁকে হুঙ্কার দিকে হয়। ভেজালের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীকেই কথা বলতে হয়। তাহলে অন্যরা কি করেন?
আমরা সোচ্চার নই, প্রশাসন কঠোর নয় বলেই বারবার মর্মান্তিক ঘটনা দেশবাসীকে অবলোকন করতে হচ্ছে। ঢাকাকে বাসযোগ্য ও নিরাপদ করতে সোশ্যাল করপোরেট রেসপনসিবিলিটি যেভাবে গড়ে ওঠার কথা, তা সেভাবে হয়নি। আর যারা স্টেক হোল্ডার আছেন, তারাও সরকারকে বাধ্য করতে পারেননি। ভবন মালিকদেরও দায় আছে। তারা বেশি ভাড়া পাওয়ার জন্য গোডাউন (রাসায়নিকের জন্য) ভাড়া দেয় এবং ব্যাপারটি লুকিয়ে রাখে। রাসায়নিকের মজুতের সনদ দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সিটি করপোরেশনকেও আরও কঠোর হওয়া উচিত।
পুরান ঢাকার চকবাজারে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, পুরান ঢাকায় আগুনে ভয়াবহ প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি থামানো যাচ্ছে না কেন? ৯ বছর আগে ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিক কারখানায় একই ধরনের অগ্নিকান্ড প্রাণ হারিয়েছিলেন শতাধিক মানুষ। সেই ভয়াবহ ঘটনার কথা পুরান ঢাকার মানুষ এখনও ভুলতে পারেননি। ওই অগ্নিকান্ডের পর পুরান ঢাকা থেকে বিপজ্জনক রাসায়নিক কারখানা এবং গুদাম সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হলেও আজ পর্যন্ত তা হয়নি। এ কারণে তাদের আবার পড়তে হলো আরেকটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে। স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন ওঠেছে পুরান ঢাকার এমন ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের মরণঝুঁকি কমছে না কেন? এর দায়ইবা কার ওপর বর্তায়। সরকার, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো এমনকি স্থানীয় মানুষ-কেউই এমন পরিস্থিতির দায় এড়াতে পারে না। গত কয়েক দিনের পত্রিকাগুলোর প্রতিবেদনে যেসব তথ্য পেলাম তাই এখানে উল্লেখ করছি। আমি বাড়িওয়ালা, আমার আয় কম। আপনি আমাকে ৫ লাখ টাকা আগাম দিচ্ছেন। আমিও টাকার লোভে তা নিচ্ছি। উপরতলায় আমি বাড়িওয়ালা থাকছি, আমার ফ্যামিলি আছে। দোতলায় একটা জুতার কারখানা আর নিচে জুতা তৈরির জন্য আঠার গোডাউন। এটা ঝুঁকি। একটা সিগারেট ধরিয়ে দিলেই তো আগুন লেগে যাবে। পুরান ঢাকার পুরোটা চিত্রই এ রকম। সরকার বা প্রশাসন থেকে এখানে আইন প্রয়োগ না করলে আগুনে পুড়ে মরার আশঙ্কা কমবে না। চকবাজারে নিমতলীর ভয়াবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তিটা মেনে নিতে পারছেন না পুরান ঢাকার মানুষ।
প্রশ্ন হলো, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই কি সব উদ্যোগ ব্যর্থ হচ্ছে? নিমতলীর ভয়াবহ ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ে সরকার চাপের মুখে পড়েছিল। সেই প্রেক্ষাপটে তখন পুরান ঢাকায় ৮০০ এর বেশি অবৈধ রাসায়নিক গুদাম এবং কারখানা চিহ্নিত করে সেগুলো কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি এবং পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়। পরিবেশ নিয়ে আন্দোলনকারী আবু নাসের খান বলছিলেন, পুরান ঢাকায় যত্রতত্র রাসায়নিক দ্রব্যের কয়েক হাজার গুদাম, কারখানা বা দোকানের বেশির ভাগের নিবন্ধন বা লাইসেন্সসহ কোনো কাগজপত্র নেই। এসব ব্যবসায়ী এবং তাদের সহায়তাকারী স্থানীয় লোকজনের ভোটব্যাংক রয়েছে এবং তাদের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কর্তৃপক্ষ কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেয় না বলে তিনি মনে করেন। তারা অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিভাবেও শক্তিশালী এবং এই এলাকার ভোটব্যাংক হিসাবে নানাদিকে প্রভাব বিস্তার করে। যার ফলে রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা যায় না। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ বা পরিবেশ অধিদফতর তারাও সেভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা এসব ব্যবসার লাইসেন্স দেয় বা তদারকি করে, তারাও সেটা সঠিকভাবে করেনি। এরা আসলে দায়ী।
২০১০ সালে নিমতলী ট্রাজেডির পর আরবান ল্যান্ড রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্পও সরকার হতে নেয়। সেই প্রকল্পের কি খবর? নিমতলী ট্র্যাজেডিসহ পুরান ঢাকায় যখন একের পর এক অগ্নিকান্ড ও ভবনধসের ঘটনা ঘটে চলছিল, এরই প্রেক্ষাপটে আরবান ল্যান্ড রিডেভেলপমেন্ট (ভ‚মি পুনঃউন্নয়ন) পদ্ধতির মাধ্যমে পুরান ঢাকাকে বদলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ল্যান্ড রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক দৌড়ঝাঁপও করেছিলেন তারা। পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে অনেক মতবিনিময়ও হয়েছে। রাজউক তাদের বোঝাতে চেষ্টা করেছিল, সিঙ্গাপুর-জাপান-কোরিয়াসহ উন্নত অনেক দেশ এভাবেই ঘিঞ্জি এলাকাকে আধুনিকভাবে সজ্জিত করেছে। তার পরও এলাকাবাসীর অনীহা আর রাজউকের দুর্বলচিত্তের কারণে ভেস্তে গেছে পুরান ঢাকার ল্যান্ড রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের কার্যক্রম। ফলে পুরান ঢাকাকে আধুনিকভাবে সজ্জিত করার উদ্যোগও থেমে গেছে। ঘিঞ্জি, সরু রাস্তাঘাট আগের মতোই বিদ্যমান। যে কোনো দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস বা অ্যাম্বুলেন্স চলাচলও কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে ঘটে চলেছে একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ‘ল্যান্ড রিডেভেলপমেন্টের শর্ত হলো, যারা জমির মালিক তাদের মধ্যে একজন আপত্তি করলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় না। রাজউক পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের বোঝানোর চেষ্টা করেও তাদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করতে পারেনি। অনেকেই মনে করেছেন, উন্নয়নের দায়িত্ব রাজউকের হাতে ছেড়ে দিলে ওই জমিই হয়তো ভবিষ্যতে ফেরত পাবেন না তারা। এ ছাড়া পুরান ঢাকায় অনেক জমি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা আছে। এসব জমি যাদের দখলে আছে, তারা মনে করেছেন রিডেভেলপমেন্ট হলে দখল ফিরে পাবেন না। এ জন্যই এলাকাবাসী বাধা দিয়েছেন। কিন্তু পুরান ঢাকাকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে হলে ল্যান্ড রিডেভেলপমেন্টের কোনো বিকল্প নেই, যেভাবে কোরিয়া, জাপান, তাইওয়ানের অনেক জায়গার পুনঃউন্নয়ন করা হয়েছে।
২০১০ সালে নিমতলী ট্র্যাজেডির পর এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে নগর পরিকল্পনাবিদ, নগর বিশেষজ্ঞ, স্থপতিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে পুরান ঢাকাকে আধুনিকভাবে ঢেলে সাজানোর জন্য ল্যান্ড রিডেভেলপমেন্টের উদ্যোগ নেয় রাজউক। প্রাথমিকভাবে বকশীবাজার, চাঁদনীঘাট, চকবাজার, মৌলভীবাজার, পুরাতন জেলখানা এলাকা, ইসলামবাগ, রহমতগঞ্জ ও বাবুবাজার এলাকায় তা বাস্তবায়নের চিন্তা করে। মাঠ পর্যায়ে জরিপ চালানোর পর ২০১৬ সালে পাইলট প্রকল্প হিসেবে বংশালের দুটি এলাকাকে রিডেভেলপমেন্ট করার সিদ্ধান্ত হয়। শুরু হয় ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে মতবিনিময়। রাজউক এলাকাবাসীকে রিডেভেলপমেন্টের বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করে। অনেকে এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান। কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করেন। পরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের মতামত প্রত্যাশা করে রাজউক। ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর রাজউক চেয়ারম্যানের নেুৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রকল্পের যৌক্তিকতা তুলে ধরে। মেয়রও এ উদ্যোগের ভ‚য়সী প্রশংসা করেন। তবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে সভা করে এলাকাবাসীর মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পরে আরমানিটোলায় পুরান ঢাকার বাসিন্দা, স্থানীয় পাঁচটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও রাজউকের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সভা হয়। সভায় কিছু বাসিন্দা রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের বিষয়ে রাজউকের ওপর আস্থাহীনুার কথা ব্যক্ত করেন। কেউ কেউ যেভাবে আছেন, সেভাবেই থাকতে চান। এলাকাবাসীর বেশিরভাগ মতামত রাজউকের বিরুদ্ধে গেলে স্থগিত হয়ে যায় রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের কার্যক্রম। এ জন্য দায়টা কিন্তু স্থানীয়দেরও আছে। স্থানীয়দেও মধ্যে অর্থ আর সম্পদেও লোভ কাজ করে। তাঁদের বোঝানো না গেলে বাধ্য করতে হবে। মানুষের জীবন বলে কথা। শহরকে নিরাপদ করতে হলে যা যা দরকার তাই করা উচিৎ। চকবাজারের অগ্নিকান্ডের পর একটা অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া যায়নি। দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। আগুন নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায়নি। ল্যান্ড রিডেভেলপমেন্ট করলে রাস্তাও প্রশস্ত হতো, আগুন নেভানোর পানিও পাওয়া যেত। অ্যাম্বুলেন্সও দাঁড়াতে পারত। মুষ্টিমেয় কিছু লোকের কারণে এটি বাস্তবায়ন করা যায়নি। অথচ রিডেভেলপমেন্ট ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতেই হবে। আমরা আর কোন অস্বাভাবিক মৃত্যু চাই না। সরকার আমাদের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি দিক।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট, গবেষক