মানুষ অসহায় বিপন্ন : জাসদ

29

অসৎ রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও পুলিশ-প্রশাসনের অসৎ কর্মকর্তাদের অশুভ যোগসাজশে গড়ে ওঠা ‘অপরাধী সিন্ডিকেট’ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।
গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে ‘সুশাসনের জন্য রাজনৈতিক চুক্তি বিষয়ে জাসদের প্রস্তাব ও দুর্নীতি বিরোধী শুদ্ধি অভিযানের সমর্থনে এবং সমসাময়িক বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জাসদ।
লিখিত বক্তব্যে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, আপনারা জানেন জনগণের সমর্থনে ও সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপে দেশে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-সহিংসতা-অন্তর্ঘাত-নাশকতা-আগুনসন্ত্রাস-অশান্তির রাজনীতি কোণঠাসা হয়েছে। দেশ শান্তি-স্থিতিশীলতা-উন্নয়ন-উৎপাদনের পথে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু দেশ ও জাতির অর্জিত এ অগ্রগতি-অগ্রযাত্রার সাফল্য ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছে দুর্নীতিবাজ-লুটেরা-ক্ষমতার অপব্যবহারকারী গোষ্ঠী। দেশে দুর্নীতি-লুটপাট-দলবাজি-দখলবাজি-ক্ষমতার অপব্যবহার, গুন্ডামি, অত্যাচার, নির্যাতন, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণসহ সামাজিক অনাচার-অবিচার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। খবর বিডিনিউজের
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে বহুক্ষেত্রেই এই চিহ্নিত অপরাধীদের সাথে অসৎ রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও পুলিশ-প্রশাসনের অসৎ কর্মকর্তাদের অশুভ যোগসাজশে অপরাধী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ক্যাসিনো ঘটনার সূত্র ধরে অপরাধী সিন্ডিকেটের কাজ-কারবারের সামান্য কিছুটা জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়েছে। এই অপরাধী সিন্ডিকেট সরকারের গায়ে কালিমালিপ্ত করছে, সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলছে।
দেশের সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছে সেবার পরিবর্তে হয়রানি ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে দাবি করে শিরিন আখতার বলেন, লুটপাট ও দুর্নীতির পাশাপাশি দেশের সাধারণ জনগণ সরকারি অফিস-আদালতে, হাসপাতালে তাদের স্বীকৃত নাগরিক অধিকার ও নাগরিক সেবা পাবার বদলে অপমান-অসম্মান-হয়রানির শিকার হচ্ছে। অপরাধের শিকার সাধারণ মানুষ পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার ও প্রতিকার পাবার পরিবর্তে অপমান, অসম্মান, হয়রানি, বৈষম্য, বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। সাধারণ মানুষ অসহায়-বিপন্ন বোধ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাঙ্গনগুলোতেও রাজনৈতিক মদদপুষ্ট হয়ে প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অত্যাচারী ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী গড়ে উঠেছে। এদের অত্যাচার-নির্যাতনে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের হল হোস্টেলে ভীতি ও আতঙ্কের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। বুয়েটে পৈশাচিকভাবে আবরার হত্যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভীতি-আতঙ্কের করুণ পরিস্থিতি উন্মোচন করেছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ প্রশাসন চরমভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, দুর্নীতিবাজরা দলের কলঙ্ক। দুর্নীতিবাজদের গায়ে যে জার্সিই থাকুক না কেন তাদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
তিনি বলেন, চিহ্নিত অপরাধী, অসৎ রাজনৈতিক নেতৃত্ব, পুলিশ-প্রশাসনের অসৎ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ত্রিমুখী শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। সুশাসনের জন্য আন্দোলন ও শুদ্ধি অভিযানের টার্গেটই হবে অপরাধী সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধ করে সুশাসন নিশ্চিত করতে বেশকিছু পরামর্শ তুলে ধরা হয় জাসদের পক্ষ থেকে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- মুখ না দেখে, দল না দেখে শুদ্ধি অভিযান ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখা। মাঠ পর্যায়সহ সকল স্তরে পুলিশ ও জনপ্রশাসনকে সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার ও প্রতিকার পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার ও নাগরিক সেবা প্রদানের ব্যাপারে জন্য সংবেদনশীল করতে হবে। পুলিশসহ জনপ্রশাসনের নিরপেক্ষ ও কার্যকর ভ‚মিকা নিশ্চিত করতে হবে। অসৎ রাজনীতিক-পুলিশ ও জনপ্রশাসনের অসৎ কর্মকর্তা-দুর্নীতিবাজ-লুটেরাদের যোগসাজশে গড়ে উঠা অপরাধী সিন্ডিকেট ধ্বংস করে দিতে হবে। এই সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য মাঠ পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত পুলিশ ও জনপ্রশাসনে ব্যাপক রদবদল করতে হবে। কোনো অপরাধীই যেন রাজনৈতিক-প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতিবাজ-লুটেরাদের অবৈধভাবে অর্জিত সকল অর্থ-সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। বেদখলকৃত নদী-খাল-জলাভ‚মিসহ সরকারি জমি পুনরুদ্ধারের অভিযান কঠোরভাবে অব্যাহত রাখতে হবে। সরকারি জমিতে স্থাপিত রাজনৈতিক দল বা অন্য কোনো সংগঠনের অফিস বা স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হল-হোস্টেল থেকে ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী বিতাড়ন ও টর্চার সেল ধ্বংস করতে হবে। গেস্টরুম ও গণরুমের নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ভিসিসহ প্রশাসনে বদল আনতে হবে। দুদককে আরো শক্তিশালী করতে হবে। ন্যায়পাল নিয়োগ করতে হবে। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়নে, অর্থ বরাদ্দে, ব্যয়ে যেন দুর্নীতি-অপচয়ের কোনো ফাক-ফোকর-সুযোগ না থাকে তার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। সরকারি টেন্ডারে অংশগ্রহণসহ ব্যবসায়-বাণিজ্যকে প্রতিযোগিতামূলক করার ক্ষেত্রে সকল বাধা দূর করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জাসদের কার্যকরী সভাপতি রবিউল আলম, স্থায়ী কমিটির সদস্য হাবিবুর রহমান শওকত, নুরুল আখতার, সহ-সভাপতি আফরোজা হক রীনা, ফজলুর রহমান বাবুল, সফি উদ্দিন মোল্লা, শহীদুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চুন্নু, নইমুল আহসান জুয়েল, শওকত রায়হান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।