মানুষের মতো পরিবার প্রথায় অভ্যস্ত ‘উল্লুক’ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে

8

নিজস্ব প্রতিবেদক

চার দশক আগেও বাংলাদেশের বনে বসবাসকারী উল্লুকের সংখ্যা ছিল প্রায় তিন হাজার। কিন্তু সেখান থেকে এখন এ প্রাণী মাত্র কয়েকশো-এ এসে ঠেকেছে। মানুষের মতো পরিবার প্রথায় অভ্যস্ত এই প্রাণীটি বিশ্বজুড়েই বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা আইইউসিএনের বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা প্রাণীদের লাল তালিকায়ও রয়েছে এই প্রাণীটি। বনাঞ্চলে বড় বড় গাছ কেটে ফেলা, খাদ্য সংকট, অবৈধভাবে উল্লুক শিকারের কারণে বনগুলো থেকে এই প্রাণীর সংখ্যা কমছে।
চুনতি বনাঞ্চল থেকে ‘পশ্চিমা উল্লুক’ ধরে বিক্রির জন্য নেওয়ার সময় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে লোহাগাড়া থানা পুলিশ। গতকাল সকালে লোহাগাড়ার চুনতি অভয়ারণ্যের বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মার্শা পরিবহনের একটি বাস থেকে উল্লুকসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার দু’জন হলেন, মো. মুবিন (৩০) এবং মো. মাজহারুল (৩৫)। তাদের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। তবে তারা নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারের ‘নাইস বার্ড গার্ডেন’ নামের একটি দোকানের কর্মচারী। এটি বিদেশি পাখি বিক্রির দোকান বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, বাংলাদেশের বনগুলোতে থাকা উল্লুক এখন বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে অনেকটা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়েছে। দেশে গত চার দশকে ওয়েস্টার্ন হোলক গিবন বা পশ্চিমা উল্লুকের সংখ্যা আশি শতাংশ কমে গেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং প্রধান গবেষক হাবিবুন নাহার সংবাদমাধ্যমে বলছেন, ‘এর আগে উল্লুক ছিল এরকম উখিয়া, সাজেক ভ্যালি, চুনাতির মতো কয়েকটি বন থেকে এই প্রাণীটি হারিয়ে গেছে।’

মানুষের মতো পরিবার উল্লুকের
গবেষকরা বলছেন, মানুষের জীবনাচরণের সঙ্গে এদের বেশ মিল রয়েছে। ওদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ওরা মানুষের মতোই একত্রে পরিবার তৈরি করে থাকে। এদেরকে অনেক সময় আমরা ছোট বনমানুষ বলি। এই প্রাণীটি যদি একবার জোড়া বাঁধে, সেটি সারা জীবনের জন্য জোড়া তৈরি করে। এমনকি তাদের একটি যদি মারা যায়, তাহলে অন্যটি আর কারও সঙ্গে নতুন করে জোড়া তৈরি করে না। মানুষের মতোই উল্লুকগুলো ছোট ছোট পরিবার তৈরি করে। স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে তারা ছোট ছোট পরিবার আকারে বাস করে। বনের লম্বা গাছের উপরের দিকের ডালে এসব প্রাণী বাস করে। উল্লুকের একবারে একেকটি বাচ্চা হয়। সাধারণত একেকটি উল্লুকের বাচ্চা হতে ৬/৭ মাস সময় লাগে। পাঁচ-ছয় বছরের দিকে একেকটি বাচ্চা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠলে পরিবার থেকে বেরিয়ে যেতে হয়। বাচ্চাটি পুরুষ হলে বড় হওয়ার পর বাবা তাকে তাড়িয়ে দেয়। আবার মেয়ে বাচ্চা প্রাপ্তবয়স্ক হলে মা তাকে তাড়িয়ে দেয়। প্রাপ্তবয়স্ক এসব উল্লুক তখন পরিবার থেকে বেরিয়ে আরেকটি নারী বা পুরুষ উল্লুকের সঙ্গে জোড়া তৈরি করে নতুন পরিবার তৈরি করে। উল্লুক পরিবার আলাদা আলাদা গাছে থাকে। একটি পরিবার যে এলাকায় থাকে, সেটাকে নিজের বলে মনে করে। সেই এলাকায় অন্য উল্লুকের প্রবেশ তারা সহ্য করে না। বাইরের উল্লুক ঢুকলে তারা চিৎকার করতে শুরু করে।