‘মানুষের জমানো অর্থও শেষ, তাই প্রয়োজন সরকারি সহায়তা’

1

 

কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব থেকে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা পৌঁছানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে এক সংলাপে। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম গতকাল রবিবার এই ভার্চুয়াল সংলাপ আয়োজন করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপের সদস্য সুলতানা কামাল বলেন, ‘জমানো অর্থ ও খাদ্যদ্রব্য দিয়ে অনেকেই এখন পর্যন্ত টিকে আছেন। আমার মনে হয়, অনেকেরই সেই জমানো অর্থ ও খাদ্যদ্রব্য শেষ হয়ে গেছে। আগামিতে সঙ্কট আরও বাড়বে। তাই সরকারকে জোর প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানাই’।
সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য।
দেবপ্রিয় বলেন, দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য ও নতুন বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে সামগ্রিক ভোগ ব্যয় যেমন কমেছে, তেমনি প্রতিদিনই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাতারে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মুখ আর পরিবার।
বিভিন্ন সমীক্ষার তথ্য উপাত্ত দিয়ে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রথম ধাক্কায় দেশে প্রতি ১০০ পরিবারের ৭৯টিই চরমভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে, যা থেকে উত্তরণ সম্ভব হয়নি।
সিপিডির সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরে দেবপ্রিয় বলেন, ‘প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ খাবার গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে। ৬০ শতাংশ মানুষ ঋণ করে সংসার চালাচ্ছে, ৪৭ শতাংশ মানুষ নিত্যদিনের খাবারে মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন জাতীয় খাবার কমিয়ে দিয়েছে। ১০ শতাংশ মানুষ তিন বেলার বদলে একবেলা খাবার নিচ্ছে’।
তিনি বলেন, ২০২০-২০২১ অর্থবছর সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে আরও বেশি পিছিয়ে দিয়েছে। তাই ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের মতো অনেক অর্থনীতির সূচকগুলো নিম্নগামী ছিল। ফলে কর্মসংস্থানে সৃষ্টিতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এতে সমাজে দরিদ্র মানুষের সংখ্যার সঙ্গে বৈষম্যও বাড়ছে।
সাধারণ মানুষ যেন অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কর্মসূচিতে যুক্ত হতে পারে, তার জন্য প্রান্তিক পর্যায়ে খাদ্য সহায়তা বাড়নোর পরামর্শ দেন তিনি।
মহামারিকাল অর্থনৈতিক ক্ষতি পোষাতে মোট ৩০টি প্রণোদনা প্যাকেজ সরকার ঘোষণা করলেও প্রান্তিক মানুষ তার সুবিধা পায়নি বলে মনে করেন দেবপ্রিয়। ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এবছরের মধ্যে সরকার ১৪ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার যে টার্গেট করেছে, এটাকে ৫৫ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে।
‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২: পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কী থাকছে’ শীর্ষক এই সংলাপে তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের সমন্বয়ক ও ব্র্যাকের সাবেক ভাইস চেয়ারপারসন ড. মোশতাক রাজা চৌধুরী, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন চেয়ারপার্সন শাহীন আনাম এবং সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
সুলতানা কামাল বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারিকালীন দ্বিতীয় বাজেট দেখতে পেলাম আমরা। কিন্তু এই বাজেটেও দেশের মানুষ ও অর্থনীতি ঠিক রাখার জন্য যেসব পদক্ষেপ আমরা দেখতে চেয়েছিলাম সেসব আমরা পাইনি’। খবর বিডিনিউজের
দেশে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ ঝুঁকিতে আছে দাবি করে তাদের কাছে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা পৌঁছাতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিমুক্ত উপায় বের করতে সরকারকে আহ্বান জানান তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কোভিডের কারণে বৈষম্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। কারণে প্রধান খাদ্য দ্রব্য চালের দাম আরও বেড়েছে’। দরিদ্র মানুষের চালের জোগান বাড়ানোর জন্য ওএমএসের চাল ১৬ লাখ টন থেকে বাড়িয়ে ২৪ লাখ টন করার সুপারিশ করেন তিনি।
মোশতাক রাজা চৌধুরী সরকারকে একটি স্বাস্থ্য কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে টিকা এবং টেস্টিংয়ে’।
রাশেদা চৌধুরী বলেন, ‘৫০০ দিনের বেশি হয়ে গেছে স্কুল-কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রথমে সকল শিক্ষককে টিকার আওতায় এনে পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার পাশাপাশি মাস্ক নিশ্চিত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার উপর সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে’।