মানুষকে ঘরে রাখতে তৎপর জেলা প্রশাসন

61

করোনা সংক্রমণ রোধে আরো বেশি তৎপর হয়েছে জেলা প্রশাসন। মানুষকে ঘরে রাখতে শহরের বিভিন্ন স্পটে সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে আটটি টিম। প্রশাসনের চাপাচাপিতে শহরের পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তন হলেও গ্রামের চিত্র পাল্টায়নি। গ্রামের অলিগলি, বাজার, খেলার মাঠে মানুষ আর মানুষ। উপজেলাগুলোতে ত্রাণ নিয়ে প্রশাসনের ব্যস্ততার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে গামের অসচেতন মানুষগুলো।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন জানান, ‘মানুষ যেন ঘর থেকে বের না হয় সেজন্য সেনাবাহিনী মাঠে আছে। প্রশাসনের পক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও তাদের সাথে থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। তবে সবকিছুর পরেও মানুষকে সচেতন হতে হবে। মানুষ ঘরে থাকলে করোনা কাউকে আক্রান্ত করতে পারবে না’।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, খুলশী, সদরঘাট, কোতোয়ালি, চকবাজার, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, হালিশহর, আকবরশাহ, ডবলমুরিং, বন্দর, ইপিজেড, পতেঙ্গায় চারজন ম্যজিস্ট্রেট মাঠে ছিল। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুজন চন্দ্র রায়, তাহমিনা সারমিন, মো. উমর ফারুক, গালিব চৌধুরী দিনভর এসব এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। তারা দোকান খোলা রাখায়, লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো, অপ্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার অপরাধে এসব অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় তিনজনের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়। পরে বিভিন্ন বাজার পরিদর্শন করে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে মাইকিং করেন। একই সাথে বাজারে যেন নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে সাধারণ মানুষ বাজার করেন সেজন্য সচেতনতা করা হয়। সবমিলিয়ে গতকাল ৪০ হাজার ৫৬০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা শারমিন বলেন, ‘কাঁচা বাজার পরিদর্শন ও সমাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে নগরবাসীকে ব্যাপকভাবে সচেতন করা হয়। এসময় রিয়াজ উদ্দিন বাজার, চকবাজার বায়েজিদ সুপার মার্কেটের কয়েকটি দোকানকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়। এছাড়াও যৌক্তিক কারণ ব্যতীত যাত্রীদের রিক্সা-বাইকে চলাচলকারীদের মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়। বিকাল পাঁচটার পর ফার্মেসি ব্যতীত কোনো দোকান যাতে খোলা না থাকে সেজন্য মাইকিং করা হয়’।
এদিকে জেলা প্রশাসনের তৎপরতার মধ্যেও অনেক এলাকায় অহেতুক মানুষ বাইরে ঘোরাফেরা করছে। কিছু কিছু অলিগলিতে স্থানীয়ভাবে পুরো এলাকা লকডাউন করে রাখা হয়েছে।
শহরের এমন কড়াকড়িতে ভিন্ন চিত্র গ্রামে। ১৫ টি উপজেলার সবাই এখন ব্যস্ত ত্রাণ নিয়ে। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে এসব উপজেলায় তিন ধাপে ৫০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব চাল সাধারণ মানুষের মধ্যে পৌঁছে দিতে হিমশিম খাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে দুস্থদের তালিকা সংগ্রহ করে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এসব ত্রাণ বিতরণে
শৃঙ্খলা ধরে রাখতে গিয়ে উপজেলা প্রশাসন সক্রিয় থাকায় সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে সাধারণ মানুষ। কেউ ত্রাণের জন্য, আবার কেউ যৌক্তিক কারণ ছাড়াই বাইরে ঘোরাফেরা করছে। বাজার, অলিগলি, খেলার মাঠ সবখানে মানুষ আর মানুষ।
বাঁশখালী থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, ‘প্রথমদিকে মানবিক দিক বিবেচনা করে মানুষকে বোঝানো হয়েছিল। গত দু’দিন ধরে আমরা হার্ডলাইনে আছি। যেখানে মানুষ জড়ো হয়েছে খবর পেয়েছি সেখানেই ফোর্স পাঠিয়েছি। গাড়ি চলাচল বন্ধে কঠোর হয়েছি। কিন্তু মানুষ রোগী, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করছে। এরকম বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে ক্লিয়ার ম্যাসেজ দিয়েছি। অযৌক্তিক কারণে বাইরে কেউ ঘোরাফেরা করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।