‘মানসিক আর অর্থ কষ্টে সব শিল্পীরা চলে যাচ্ছে এক এক করে’

209

শিল্পাঙ্গনে চলছে অস্থিরতা। নাজেহাল অবস্থায় সংগীতাঙ্গন। চরম প্রতিকূল পরিস্থিতি আর অসহায়-অনিশ্চয়তা মধ্যে শিল্পী-জীবন। শিল্পী সমাজের এই দুর্দশা নিয়ে বিশেষ একটি লেখায় নিজের সবিনয় আক্ষেপ প্রকাশ করলেন সংগীতশিল্পী ফাহমিদা নবী। বিশেষ সেই লেখাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন ফাহমিদা নবী। বাংলানিউজ পাঠকদের তা তুলে ধরা হলো- আমাদের শিল্পাঙ্গনের সবার জন্য জন্য আমার এই লেখা । কারো মন্তব্য করতেই হবে, এমন নয়। কোনো অভিযোগ নয়। অভিমান নয়। সহজ অনুধাবন বাঁচার জন্য, যতোদিন বেঁচে আছি। নতুন বছরে নতুন কিছু করো। শিল্পীরা তো কিছু চাইতে পারে না। তাইতো দুস্থ শিল্পীর খাতায় নাম লেখা হয়ে যায়! শিল্পীর জীবন বড় বিচিত্র। তার চিন্তা-চেতনা, অভিমান, ভালোবাসা, সাহস, স্বপ্ন কোনটাই সাধারণ আর দশজনের মতো হবে না, হয় না। তার চিন্তার গতি কখনো ধীর, কখনো খুব দ্রæত। কখনো অনেক শান্ত, সঠিক, কখনো কঠিন। তার মনের ভেতর যে অস্থিরতা, চঞ্চলতা, সৃষ্টিশীলতা তাকে নিয়ে চলার যে জীবনধারন, তা কিন্তু সাধারণ হবার নয়! শিল্পীকে ভাবতে হয়, সবাই তো সৃষ্টিশীল হতে পারে না। শিল্পী যে আনন্দ দান করে, মানুষের হৃদয় তা দিয়ে প্রানশক্তি ফিরে পায়। তাই তাকে আর দশজন মানুষের মতো জীবনধারনের স্বাভাবিক নিয়ম-কানুনে চলার মতো আশা করাটা ভুল। আমাদের এতো এতো শিল্পী সব চলে যাচ্ছে কেন? কারন, তারা মেনে নিতে পারছে না- সংস্কৃতি অঙ্গনে সৃষ্টিশীলতার মূল্য কমে গেছে। মূল্য নাই আমাদের শিল্পীদের! বোঝতে চেষ্টা করো প্রিয় শিল্পীরা! আর হবে না ভালো কিছু। বর্তমানে গান হচ্ছে মানে হৈচৈ টুকটাক।
পৃথিবীতে টুকটাক বলে কিছু নাই! মানুষ বোঝতে পারে না। এই মূল্যবোধহীনতা বোঝতে চেষ্টা করো প্রিয় শিল্পভূবন! নিজের সম্মান নিয়ে চলতে চেষ্টা করো। আর বিদেশ থেকে শিল্পী এসে দেশের শিল্পকে সমৃদ্ধ করবে, মেনে নাও। তারাই তো সুর বোঝে, গান গাইতে পারে। দর্শক-শ্রোতা তাদেরই গান শোনে! দেশে কী আর শিল্পী আছে? দেশে যে গান হয়, তা কী আর কোনো গান? কে শোনে তাদের গান? সব লোকাল শিল্পী! লোকাল দিয়ে কী অনুষ্ঠান জমে? মানুষ এখন গান শোনে না, মিউজিকের দাপটে ফুর্তিই মূল লক্ষ্য। গান শোনার মতো সময় নাই কারো! যদি শুনতে হয়, তাহলে বিদেশ থেকে সম্মান দিয়ে, প্রচুর অর্থ দিয়ে শিল্পীদের এনে দেশের মান সমৃদ্ধ করতে হবে তাই না! মন্দ কী? মোটেই রাগ করে বলছি না। আমি তো চাই, আরও আরও বাইরের শিল্পীরা এসে আমাদের সম্মান স্ট্যাটাস বাডিয়ে দিক। আমি পরাজয় মেনে নিয়েছি। মেনে নিয়েছি অল্প অল্প গান হয়তো হবে। কিন্তু সৃষ্টিশীলতা নিয়ে দেশের শিল্পীদের আর কোনো সম্মান সেই অর্থে নেই, সত্যি অর্থে মেনে নিয়েছি। কিন্তু সবাই তো আমি না! আর তাই তো মানসিক আর অর্থ কষ্টে সব শিল্পীরা চলে যাচ্ছে এক এক করে…!
পৃথ্বীরাজের চলে যাওয়া হজম করতে পারছি না! তার মধ্যে বাসুদার (বাসুদেব ঘোষ) হঠাৎ চলে যাওয়া! বুকের ভেতর বাঁজ পড়ার মতো আঘাত করলো শুনে! প্রকৃত শিল্পী গান পাগল মানুষটা গান করার জন্য ছটফট করতো, যন্ত্রনায় ছিলো। কাজ নাই, অনিশ্চিত বেঁচে থাকা, কাজের জন্য ছুঁটে বেডানো, উফ্ কোন কাজ নাই, কী করে সংসার চলবে? কি ভয়ানক জীবন-যাপনের চিত্র! কার সঙ্গে বলতে না পারার এক বুক চাপা কষ্টের হাসি! শিল্পীরাই তো এমন হাসিমুখে বেদনায় গান বানায়, গান গায়, গান লেখে….! যার আয়ু যতোটুকু, যতোখানি, ততোদিনই পৃথিবীতে থাকবে। জানি না কার কখন যেতে হবে! প্রস্তুত থাকতে হবে। তবে অকালে চলে যাওয়ার ক্ষতটা অসহনীয় যন্ত্রনায় অস্থির করে রাখছে। জানি না কি বলবো! বাসুদার আত্মার শান্তি কামনা করি।
প্রবীন একদিন নবীন ছিলো। নবীন একদিন প্রবীন হবে। সবারই চলে যেতে হবে, তবে এতো ধুঁকে ধুঁকে নয়, কে বলবে? প্রকৃত শিল্পীরা এতো বৈষয়িক হতে পারে না কে বোঝবে? কে বলবে শিল্পীর কথা। সবসময় শিল্পীর যতœ করতে হয়? কে ভালোবাসবে? কে বোঝবে তাকে সৃষ্টিকর্ম করার সুযোগ করে দিতে হবে? কে বলবে ? তোমার আর দশজনের মতো সাধারন ডালচালের চিন্তা করার দরকার নাই! প্রিয় শিল্পী ভাইবোনেরা তরুণ-প্রবীন সবাইকে বলছি সাবধান হও। ভালো থাকো, নিজের দিকে খেয়াল করো, প্লিজ। নিজেরা নিজেদের ভালোবাসতে পারছি না বলেই অন্যকে এতো সম্মানিত মনে হয়! কে বলবে বিদেশী শিল্পী পরে, আগে তোমার সম্মানকে রক্ষা করি!