মানব জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা

13

নিজস্ব প্রতিবেদক

যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে গত মঙ্গলবার পবিত্র শবে বরাত (লাইলাতুল বরাত) পালিত হয়। এদিন নগরীর প্রতিটি মসজিদে আলোকসজ্জা করা হয়। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদে মসজিদে জমায়েত হন। তারা নফল নামাজসহ নানা এবাদত-বন্দেগি করেন। এর বাইরে মসজিদগুলোতে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন ছিল। এছাড়া মানব জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করা হয়।
শবে বরাতের রাতে নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদ, চন্দনপুরা মসজিদ, কদম মোবারক মসজিদসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকার মসজিদে, মসজিদে এবং নিজ বাসা-বাড়িতে থেকেই মহান আল্লাহর রহমত কামনায় ‘নফল ইবাদত-বন্দেগী’ শুরু করেন মুসল্লীরা। তারা রাতভর জিকির, কোরআন তেলাওয়াত ও নফল নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামিনের রহমত কামনা করেন।
একই রাতে অনেকেই শাহ আমানত (র.) মাজার, গরিবুল্লাহ শাহ (র.) মাজারসহ বিভিন্ন মাজার জেয়ারত করেন। তাছাড়া বিভিন্ন কবরস্থানে গিয়ে আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করেন।
মুসলমানরা হিজরি বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। মহিমান্বিত এ রাতে মহান রাব্বুল আলামিন তাঁর বান্দাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন।
উপমহাদেশে শবে বরাত উপলক্ষে বিকালে বাড়িতে বাড়িতে হালুয়া-রুটি তৈরি ও তার বিতরণ আর সারারাত ধরে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, সিরিয়াসহ নানা দেশে ঘটা করে শবে বরাত পালন করা হয়। এ রাতে গুনাহ ও পাপের অশুভ পরিনাম থেকে মুক্তি পেতে রহমতের জন্য প্রার্থনা করেন ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা।
পবিত্র কোরআনে এ রাতকে ‘লাইলাতুল মুবারাকাহ্’ বা বরকতময় রজনি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিস শরিফে রসুল (সা.) এ মহিমান্বিত রাতকে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান’ বলে উল্লেখ করেছেন। এ রাতে মুসলমানরা মহান আল্লাহর কাছে মার্জনা প্রার্থনা করে থাকেন। এ কারণে এ রাতকে লাইলাতুল বারকাত বা শবে বরাত বলা হয়।’
আমাদের দেশে বাড়ির বড়রা এদিন রোজা রাখেন। মেয়েরা দুদিন আগে থেকেই হালুয়া বানানোর কাজ শুরু করে দেন। শবে বরাতে সকাল থেকেই রুটি বানানোর তোড়জোড় শুরু হয় বাড়িতে বাড়িতে। এর সাথে মাংসসহ নানা পদের খাবার রান্না করা হয় এবং গরীবদের খাওয়ানো হয়। আর রাতভর হয় ইবাদত-বন্দেগি। মসজিদে মসজিদে যেমন নামাজ পড়তে যান সবাই, তেমনি বাসাতেও মেয়েরা সব কাজ শেষ করে নামাজে বসেন।
এদিকে নগরীতে মসজিদে মসজিদে নফল নামাজ আদায়ের পাশাপাশি মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। চলে তবারুক বিতরণ।
ইতিহাসবিদরা জানান, ঊনিশশো শতকের শেষের দিকে ঢাকায় শবে বরাত পালন মুসলিম পরিচয় প্রকাশের বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় শবে বরাত একটি বড় ধরনের উৎসবে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তান আমলে এর সঙ্গে সরকারি ছুটি যুক্ত হওয়ায় সেটি পালনের ব্যাপকতা আরো বাড়ে। বর্তমান বাংলাদেশে শবে বরাত পালন ধর্ম এবং সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে।