মানববন্ধন : দুই রকম ব্যানার নিয়ে দাঁড়ালেন চবি শিক্ষকরা

20

চবি প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে তার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক আব্দুল হক। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কার্যনির্বাহী পরিষদ ২০২২ এর ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় তার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সংগঠনটির কার্যনির্বাহী পরিষদের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. জসিম উদ্দিন, সদস্য ড. ফণী ভূষণ বিশ্বাস, শোয়াইব উদ্দিন হায়দার, সৈয়দা করিমুন্নেছা ও হোসাইন মুহাম্মদ ইউনুস সিরাজী উপস্থিত ছিলেন।
এ মানববন্ধনে প্রশাসন কর্তৃক শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে গড়িমসি এবং শিক্ষক নিয়োগ প্রসঙ্গে দুর্নীতি ও চারুকলা ইন্সটিটিউটে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনের ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে ব্যর্থতাসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
এসময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক আব্দুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষক সমিতির অব্যাহত দাবি সত্তে¡ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটে বিভিন্ন ক্যাটাগরির শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন সম্পন্ন না করে চরম ভারসাম্যহীন একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এক বছরের অধিক সময় ধরে পদোন্নতির জন্য আবেদনকৃত বেশ কিছু শিক্ষকের পদোন্নতি বোর্ড সভা সম্পন্ন না করে বারংবার সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের ব্যাপক হয়রানি ও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক অনিয়ম ও অসংগতির ব্যাপারে প্রকাশিত সংবাদ বা অভিযোগকে আমলে নিয়ে তথাকথিত নিয়োগ বাণিজ্য চক্র বা নিয়োগ কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বর্তমান প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম একটি সৃষ্টিশীল জ্ঞান চর্চা কেন্দ্র চারুকলা ইনস্টিটিউটে প্রায় ২.৫ (আড়াই) মাস যাবত চলমান অচলাবস্থা নিরসনের ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে চরম প্রশাসনিক ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
তিনি বলেন, বিষয়গুলো বারবার জানানোর পরেও প্রশাসন এ নিয়ে সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেয়নি। এ কারণেই আমাদের বাধ্য হয়ে মানববন্ধনে আসতে হয়েছে। উল্লেখিত বিষয়ে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে যদি সন্তোষজনক সমাধান না আসে তাহলে আমরা পরবর্তীতে আরো বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা করব।
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানই একটি নির্দিষ্ট আইনের অধীনে চলে। তেমনিভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ নামে নির্দিষ্ট আইন রয়েছে। এই আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব উপাচার্যের। কিন্তু আমরা দেখছি ১৯৭৩ এর আইনের কোনো বাস্তবায়ন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। এই কথাগুলো মানববন্ধনে এসে আমাদের বলতে হচ্ছে। বিষয়টা খুবই লজ্জাজনক। এর আগেও কথাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট মিটিংসহ নানাভাবে নানা সময়ে বলা হয়েছে। এর পরেও এখানে এসে একই কথাগুলো এসে বলতে হচ্ছে। এর চেয়ে বড় ট্রাজেডি আর কিছু হতে পারে না।
এতে আরো উপস্থিত ছিলেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মুহাম্মদ তৌহিদ হোসেন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী, ইঞ্জিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রাশেদ মোস্তফা, হলুদ দলের আহŸায়ক অধ্যাপক ড. সেকান্দার চৌধুরী প্রমুখ।
অপরদিকে এই মানববন্ধনের প্রতিবাদ জানিয়ে একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বর এলাকায় সাধারণ শিক্ষকবৃন্দের ব্যানারে পাল্টা মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সজীব কুমার ঘোষ। এতে শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক এসএম জিয়াউল ইসলাম, সদস্য অধ্যাপক ড. নাজনীন নাহার ইসলাম ও ড. শারমিন মুস্তারিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
এতে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সজীব কুমার ঘোষ বলেন, শিক্ষক সমিতির একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। আলোচনা এবং আন্দোলনের মাধ্যমে চবি শিক্ষক সমিতি জাতির যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। আমরা আলোচনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেই। তারপরে আমরা আন্দোলনে যাই। আমি প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে শিক্ষকদের দাবিদাওয়াগুলো আদায়ের চেষ্টা করেছি। আমরা দাবিদাওয়াগুলো নিয়ে শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী সভায় আলোচনা করে প্রশাসনের নিকট যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির নেতৃত্বে কয়েকজন সদস্য কোনোভাবেই দাবিগুলো নিয়ে প্রশাসনের নিকট যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। আমি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বারবার বলেছি যে সাধারণ সভার সিদ্ধান্তমতে দাবিসমূহ প্রশাসনকে জানাতে হবে। এরপরেও যদি প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমরা অ্যান্দোলনে যাব। কিন্তু আমি জানি না কোন উদ্দেশ্যে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বারবার আলোচনাকে এড়িয়ে গেছেন। এমনকি উপাচার্যও তাকে আলোচনার জন্য ডেকেছেন তিনি তাও প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, তিনি (ভারপ্রাপ্ত সভাপতি) মূলত সহ-সভাপতি। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হয়ে বারবার নিজের সিদ্ধান্তে শিক্ষক সমিতির সভা ডেকেছেন। তিনি আমাদের অনুরোধকে অগ্রাহ্য করে নিজ সিদ্ধান্ত নিয়ে তা আবার প্রেস রিলিজে দিয়ে দিয়েছেন। উনার এই কর্মকাÐগুলো শিক্ষক সমিতির দীর্ঘ ঐতিহ্যকে ভুলুন্ঠিত করেছে। আমি এই মানববন্ধনে আসতে চাইনি। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শিক্ষকদের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণেই আমাকে আজকে এখানে আসতে হয়েছে।
এ মানববন্ধনে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মাহবুবুল আলম, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. বশির আহম্মদ, ফলিত রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লা মামুন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার সাঈদ, ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন, প্রাণরসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইদুল ইসলাম সোহেল ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. আবুল কাশেমসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।