মানবতাবিরোধী মামলায় মুসার মৃত্যুদন্ডের রায়

19

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজশাহীর পুঠিয়ার মো. আব্দুস সামাদ (মুসা) ওরফে ফিরোজ খাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা চারটি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিটি অভিযোগেই তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। আসামি যে ধরণের অপরাধ করেছে তাতে তাকে ‘এনিমি অব দ্য অল হিউম্যান রাইটস’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দিয়েছেন। এটি ট্রাইব্যুনালের ৩৯তম রায়। রায় ঘোষণার সময় সংশ্লিষ্ট মামলার প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা ও প্রসিকিউটর জাহিদ ইমামসহ অন্যান্য প্রসিকিউটরবৃন্দ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আব্দুল সাত্তার পালোয়ান। আসামি বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
রায় ঘোষণার পর প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম বলেছেন, আসামি যে অপরাধ করেছে, সন্দেহাতীতভাবে সেসব অপরাধ আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান বলেছেন, তারা এ রায়ে খুশি হতে পারেন নি। তারা ট্রাইব্যুনালের এ রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন চারটি অভিযোগ এনেছে। প্রথম অভিযোগ- একাত্তরের ১৯ এপ্রিল পুঠিয়ার ভালুকগাছী ইউনিয়নের দমদমা, সুখদেবপুর, বাঁশবাড়ি ও গতিয়া গ্রামে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যা। দ্বিতীয় অভিযোগ- একাত্তরের ১৯ এপ্রিল পুঠিয়ার গোহালী, চকপলাশী, বৈরাগীবাজার ও বাঁশবাড়ি গ্রামে ছয়জনকে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যা। তৃতীয় অভিযোগ- একাত্তরের ১৯ এপ্রিল পুঠিয়ার ভালুকগাছী ইউনিয়নের পশ্চিমবাগ গ্রামের সাঁওতাল পাড়ায় গিয়ে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন, হত্যা ও গণহত্যা। চতুর্থ অভিযোগ- একাত্তরের ২০ এপ্রিল পুঠিয়ার ভালুকগাছী ইউনিয়নের ঢোকরাকুল গ্রামে একজনকে আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যা।
মো. আব্দুস সামাদ (মুসা) ওরফে ফিরোজ খাঁর বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়ার ত্রিমোহিনী বাজারের কাঁঠালবাড়িয়া গ্রাম। ১৯৭১ সালে দেশে যখন স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয় সে সময় তার বয়স আনুমানিক ২০ বছর। সামাদের পূর্বপুরুষ এদেশে এসেছিলেন ভারতের মুর্শিদাবাদ থেকে। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন। এ মামলার অভিযোগপত্রের বিবরণ অনুযায়ী, চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা সামাদ এক সময় মুসলিম লিগ করলেও একাত্তরে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে ভিড়েন এবং স্থানীয় রাজাকার বাহিনীতে নাম লেখান।
প্রসিকিউশন সূত্রে জানা যায়, এ মামলার তদন্ত শুরু হয় ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর। ২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ২০১৮ সালে ১৫ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। একই বছরে ১২ এপ্রিল ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়। ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। একই বছরের ৩ অক্টোবর থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ২০১৯ সালের ১৪ মে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। এ মামলায় মোট ১৫ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করে। ২০১৯ সালের ৪ জুলাই থেকে যুক্তিতর্ক শুরু হয়। আর যুক্তিতর্ক শেষ হয় চলতি বছরের ৮ জুলাই। রায় ঘোষণার জন্য ৮ জুলাই সিএভি রাখা হয়।