মাদক নিয়ন্ত্রণে পারিবারিক সুশিক্ষা ও জনসচেতনতা জরুরি

28

ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ সবসময় মাদকের অপব্যবহারকে ‘না’ বলে। এদেশ শতকরা ৯০ শতাংশের অধিক মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ। ইসলাম ধর্মে মাদককে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পৃথিবীতে অন্যকোন ধর্মও মাদককে উৎসাহিত করেনি। বর্তমান দেশে মাদকের অপব্যবহার ও মাদক চোরাচালান ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে। বিগত ২৬ জুন ছিল মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস। জেলা প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দিবসটি সম্পর্কে চট্টগ্রামের একটি হোটেলে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার বলেন ‘মাদক সম্পূর্ণ নির্মূল করা না গেলেও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব’। পত্রিকার এক প্রতিবেদন বলছে মাদক সম্পর্কে নানা পরামর্শের কথা। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশে মাদকের অপব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করা অসম্ভব নয়। দেশ হতে মাদকের অপব্যবহার ও মাদক চোরাচালান বন্ধে সরকার, প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতাই যথেষ্ট। আমরা মাদক চোরাচালান বন্ধে যে সকল পদক্ষেপ নিয়ে থাকি তা অসাধু ব্যবসায়ী, অসাধু কিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের কারণে ব্যর্থ হয়। আজ পর্যন্ত মাদক চোরাচালানকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূল শাস্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এর পেছনে দেশের বিচার ব্যবস্থা হতে শুরু করে অপরাজনীতি অনেকাংশে দায়ী।
দেশ হতে মাদকের অব্যবহার এবং মাদক চোরাচালন বন্ধ করতে আমাদের যে কোন দুর্বলতাকে পরিহার করতে হবে। দেশে তাড়ি, বাংলামদ, ফেন্সিডিল, ইয়াবা, হিরোইন ইত্যাদির কারণে দেশের যুব ও ছাত্র সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য মেধা বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ দেশের অভিভাবক সমাজ তাদের সন্তানদের পারিবারিক সুশিক্ষা দিচ্ছে না। ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষা এবং পারিবারিক সুশিক্ষার সংস্কৃতি দেশে জোরদার না থাকার কারণে মাদকের অপব্যবহার বাড়ছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে অবৈধ মাদক চোরকারবারীদের অনৈতিক ব্যবসার দাপট। অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের লভ্যাংশের একটি বড় অংশ ব্যয় করে দেশ হতে মাদক নির্মূলের সকল উদ্যোগকে ভেস্তে দিচ্ছে। তার সাথে জড়িত কিছু অসাধু প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্থা ও কর্মচারী। সরকার ইচ্ছা করলে এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারে। আইন এবং বিচারের মাধ্যমে কোন বিষয়ে সার্বিক সফলতা সম্ভব নয়। এরজন্য দেশের মানুষকে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উজ্জীবিত করা জরুরি। জনসচেতনা বৃদ্ধির কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে দেশ হতে মাদকের অপব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। সরকার কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে মাদক নিয়ন্ত্রণ কঠিন কোন বিষয় নয়। মাদকের অপব্যবহার এবং মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ কার্যকর করা প্রয়োজন। ১) শিক্ষাক্ষেত্রে নৈতিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করা।
২) দেশের প্রত্যেক পারিবারের অভিভাবক তথা মা-বাারা সন্তানদের নৈতিক পারিবারিক শিক্ষা প্রদানে এগিয়ে আসা।
৩) একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মা-বাবারা তাদের সন্তানদের পরিচর্যার পাশাপাশি তাদের জবাব দিহীতার আওতায় রাখা।
৪) মাদকের অবৈধ চালান বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা জোরদার করা
৫) দেশের সকল মানুষকে মাদক বিরোধী কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত করে সার্বিক জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
আমরা ধর্মীয় বিধি-বিধান, মেনে চললে, নৈতিক শিক্ষার আওতা বাড়ালে, নিজ নিজ সন্তানদের ব্যাপারে নজরদারী বাড়ালে অবশ্যই একদিন দেশ হতে মাদকের অপব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে। এর জন্য মাদকমুক্ত জাতি গঠনে সরকারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ জাতি গঠনে এবং জাতীয় অগ্রগতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আমাদের মাদক মুক্ত সমাজ গঠনের উপর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ খুবই জরুরি। বাঙালি মেধাবী জাতি। দেশে মাদকের অপব্যবহার এবং যুব ও ছাত্র সমাজে মাদকের ছড়াছড়ি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের এখনই সময়। এ ব্যাপারে সরকার, প্রশাসন, আইনশৃক্সক্ষলা বাহিনী, সন্তান, অভিভাবক তথা দেশের সর্বস্তরের নাগরিককে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার ও প্রশাসন আন্তরিকতা ও দায়বদ্ধতার সাথে দেশকে মাদকমুক্ত করণ কার্যকর করতে উদ্যোগ গ্রহণ করলে এক বছরের মধ্যে দেশ অবৈধ মাদক চোরা চালান এবং মাদকের অপব্যবহার হতে মুক্ত হবে এমন ধারণা বিশেষজ্ঞদের।