মাদক চোরাচালান বন্ধে আরো কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

18

সমগ্র বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার বিষাক্ত বাতাস বয়ে চলেছে। খাদ্যদ্রব্য, জ্বালানি তেল এবং গ্যাসের সংকটজনিত কারণে বহু দেশে জনজীবন অতিষ্ঠ। আমাদের দেশও এর প্রভাবমুক্ত নয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গণপরিবহণ ও দ্রব্যপরিবহন খরচ বেড়েছে কল্পনাতীত। সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না। কেননা বাস্তবে দেশের মানুষের আয় আজ হতে দশবছর পূর্বের অবস্থাতেই রয়ে গেছে। অথচ জীবনযাত্রার খরচ বেড়েছে তিন/চারগুণ। সাধারণ মানুষ প্রকৃতপক্ষে সুখেও নেই, শান্তিতেও নেই। এমন পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী মাদকের দৌরাত্ম্য একটুও কমেছে বলা যায় না, বরং দিন দিন মাদক সেবির সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে যুব সমাজে ইয়াবার ভয়াল থাবা আশক্সক্ষাজনক হারে বাড়ছে। তার উপর চোলাই মদ, গাঁজা, হিরোইন, ফেন্সিডিল, অবৈধ বিদেশি মদ সেবির সংখ্যা ভয়াবহ। নানা জাতের মাদকের সাথে দেশে প্রবেশ করছে মরণঘাতি ক্রিস্টাল মেথ। মধ্যবৃত্ত শ্রেণির মানুষের মধ্যে ক্রিস্টাল মেথ ধীরে ধীরে বাজার তৈরি করে ঝেঁকে বসতে উদ্যত। যেখানে সাধারণ মানুষ দু’বেলা খেয়ে, মোটা কাপড় পরে বাঁচতে পারছে না, সেখানে জাতীয় আয়ের একটা বড় অংশ মাদকের পেছনে ব্যয় করছে অবৈধ মাদক সেবিরা। দেশের আয়ের একটা বিরাট অংশ মাদকের ভয়াল থাবায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাদক চোরাচালান বন্ধ করা যাচ্ছে না কোন অবস্থাতেই।
একদিকে মাদকের কারণে সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে যুবসমাজের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। তাছাড়া সার্বিক বিচারে মাদক সেবির সংখ্যা দিন দিন বাড়ার কারণে জনস্বাস্থ্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার প্রভাব দেশের অর্থনীতির উপর পড়ছে। মাদকের কুফল হতে দেশের মানুষকে বাঁচাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর ভূমিকার পাশাপাশি সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে মাদকের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া জরুরি বলে অভিমত ব্যক্ত করেন সমাজ বিজ্ঞানী ও সচেতন নাগরিক সমাজ।
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায় বিগত ৮ মাসে উখিয়া-টেকনাফে হাজার কোটি টাকার ক্রিস্টাল মেথ জব্দ হয়েছে। দেশের সীমান্তরক্ষি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। বিষয়টি মোটেই জাতির জন্য সুখবর নয়। মিয়ানমার থেকে চোরা পথে ইয়াবার অসংখ্য চালান প্রবেশ করছে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে দেশে। যা ছড়িয়ে পড়ছে সমগ্র দেশে। একই পথে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ঢুকে পড়ছে ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের মরণঘাতি চালান। ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের প্রধান উৎপাদক দেশ হচ্ছে থাইল্যান্ড। এইক সঙ্গে মিয়ানমার ফিলিফাইন এবং মালয়েশিয়ায়ও উৎপন্ন হয় ক্রিস্টাল মেথ।
মূলত এই চার দেশ থেকেই এশিয়ার পাশাপাশি ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে ক্রিস্টাল মেথ পাচার হয়ে থাকে। ইউরোপ-আমেরিকা উন্নত মাদক চোরাচালান বন্ধে আরো
কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি, তাদের জনগণের আয় আমাদের গড় আয়ের চেয়ে অনেক বেশি। আমাদের মতো দেশে এমন আরো মাদকের আয়েশ মানানসই নয়। তারপরও একটি চোরাচালানি চক্র এদেশে ক্রিস্টাল মেথ এর বাজার তৈরির অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। যা মুসলিম প্রধান দেশের জন্য কোন অবস্থাতে ভালো হতে পারে না। ব্যয়বহুল আইস মাদক সেবনে এদেশের মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেলে জাতীয় অপচয়ের হার আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বর্ডার গার্ড, কোস্ট গার্ডসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনীকে দায়িত্বশীলতার সাথে মাদক চোরাচালানিদের অপতৎপরতা বন্ধে আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে। বিগত আট মাসে উখিয়া, টেকনাফ সীমান্তে যে পরিমাণ ইয়াবা এবং ক্রিস্টাল মেথের চালান ধরা পড়েছে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ চালান দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছেছে। যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে দেশে ঢুকে পড়েছে। ইয়াবা ও আইস তথা ক্রিস্টাল মেথ চোরাচালান প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে জাতীয় স্বার্থে তৎপর হলে উখিয়া-টেকনফ সীমান্তে দিয়ে দেশে প্রবেশ করা অবৈধ মাদকের সব ধরনের চালান বন্ধ হতে বাধ্য। যারা চোরা চালানের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়া গেলে আমাদের দেশে বাহির হতে অবৈধ মাদক ঢুকা বন্ধ হতে বাধ্য, এমন মত দেশবাসীর।