মাদক চোরাচালানের দাপট চলছে সমাজকে মাদক মুক্ত করা জরুরি

14

 

দেশে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরণ ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিগত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে নতুন সনাক্তের সংখ্যা ২৯৬ জন। পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায়, দেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা (১৪ জানুয়ারি ২০২২) ৩০ শতাংশ বেড়েছে। দেশে সনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়েছে। সাধারণ মানুষ মানছে না স্বাস্থ্যবিধি। যার কারণে ওমিক্রন দেশব্যাপী দ্রুত ছাড়িয়ে পড়তে পরে। দেশের এমন সংকটময় মুহূর্তে আরেক দফা বেড়েছে চাল ও ডিমের মূল্য। চাল কেজি প্রতি ১০ টাকা বেড়েছে আর ডিম ডজন প্রতি বেড়েছে ১০ টাকা। অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতা সাধারণ তথা নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে চলেছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশে মাদক চোরাচালান থামছে না। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা, চোলাই মদ, ফেন্সিডিল, গাঁজা, ইত্যাদির চালান ধরছে। যা আমরা পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত দেখতে পাচ্ছি। সরকার মাদক চোরাচালান দমনে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেও মাদক চোরাচালান নির্মূল করতে ব্যর্থ হয়েছে।
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে গাঁজা ও ফেন্সিডিলের চালান চট্টগ্রামে আনার পথে মহিপালে ২ জন গ্রেফতার হয়েছে। টেকনাফে সাড়ে ১২ কোটি টাকার আইস জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড সদস্যরা। গ্রেফতার হচ্ছে চোরাকারবারি, ধরা পড়ছে মাদকের চোরাচালান। কিন্তু বন্ধ নেই মাদকের অবৈধ ব্যবসা। দেশের মানুষের মধ্যে আর্থিক সচ্ছ¡লতা বাড়ছে সত্য কিন্তু সমাজে স্থিতিশীলতা আসছে না। হত্যা, গুম, খুন, রাহাজানির খবর প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে পত্রিকার পাতায়। সামাজিকভাবে মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করা গেলে সমাজে সুখের স্বাদ থাকলেও শান্তির লেশমাত্র থাকবে না।
মাদক আমাদের দেশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। বিনষ্ট করছে পারিবারিক বন্ধন। মাদক কেড়ে নিচ্ছে দেশের বহু মানুষের প্রাণ, সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় হলো মাদকের কুপ্রভাবে দেশের যুব সমাজ ধ্বংসের দ্বারা প্রান্তে অবস্থান করছে। গাঁজা, ইয়াবা, বাংলামদ, চোলাইমদ, তাড়ি, ফেন্সিডিল, এমন কি মারাত্মক মাদক ক্রিস্টাল মেথ তথা আইস ও ঢুকে পড়েছে দেশের সমাজে। যার ফলে সামাজিক মূল্যবোধের মস্তক ফালি ফালি হচ্ছে মাদকের কুটারঘাতে। আমাদের দেশের শতকরা ৯০ শতাংশ মুসলিম। একটি মুসলিম প্রধান দেশে ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তে¡ও যে হারে অবৈধ মাদকের দৌরাত্ম্য বেড়েছে তাতে এ দেশকে মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে ভাবাও যায় না। যুবক, বৃদ্ধ, কিশোর-কিশোরী, শিক্ষার্থীসহ সব ধরনের মানুষের মধ্যে নেশাজাত দ্রব্য ভক্ষণ প্রবণতা বেড়েছে। এটা বাঙালি মুসলিম সমাজের ঐতিহ্যকে তলানিতে নিয়ে গেছে। সুখি, সমৃদ্ধশালী, সভ্যজাতি গঠনে দেশে মাদক অন্যতম প্রধান বাধা। মাদকের কুফল আমরা পত্রপত্রিকায় অহরহ দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষার কারণে দেশের প্রজন্ম যতটা সভ্য হওয়ার কথা, প্রকৃত সুশিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষার অভাবে ততটা সেচ্ছাচারী, ভোগবাদী, অনৈতিক কর্মকাÐে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। যার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়েছে। পারিবারিক ঐক্য নষ্ট হচ্ছে। সামাজিক মূল্যবোধ ও নিয়মনীতি ধ্বংস হতে চলেছে। সর্বস্তরের মানুষের ব্যক্তি স্বার্থ ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে। ব্যক্তি জীবনে সুখ ও সুখের উপকরণ সহজ লভ্য হলেও ইহজীবনে শান্তির লেশ মাত্র থাকছে না সমাজে, পরিবারে, রাষ্ট্রে। এমন পরিস্থিতি হতে দেশের মানুষকে বাঁচাতে সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে। সরকারিভাবে বস্তুবাদি শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করা জরুরি। দেশে অবৈধ মাদক চোরাচালান কেন বন্ধ হচ্ছে না তার মূলে যেতে হবে সরকারকে। আইন করে, মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে মাদক চোরাচালান এবং সমাজের মাদক সেবন প্রবণতা বন্ধ হবে না। সরকার মাদক উৎখাতে অর্থ ব্যয় করছে তার আশানুরূপ সাফল্য দেখা যাচ্ছে না। অথচ বাঙালি সমাজের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পরিকল্পিত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকেই। সরকারের পাশাপাশি দেশের কল্যাণকামী সুশিক্ষিতদের এগিয়ে আসতে হবে জ্ঞান ভিত্তিক সভ্যসমাজ গঠনে। যে সমাজে মাদক, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অস্তিত্ববাদী প্রবণতা থাকবে না নাগরিকদের মধ্যে। আদর্শ নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে জাতিকে সচেতন করা গেলে এ দেশের সমাজ থেকে মাদকের মতো অশুভ শক্তি পরাজিত হবে এমন ধারণা সুস্থমস্তিকের নাগরিকদের।