মাদক ও মানব পাচারে শ্বশুর-জামাই সিন্ডিকেট

16

নিজস্ব প্রতিবেদক

যাতায়াত ব্যবস্থা দুর্গম হওয়ায় চাইলেও যখন তখন অভিযানে যেতে পারে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সুযোগটি ভালোভাবেই কাজে লাগায় অপরাধীরা। মাদক, মানব পাচার, নকল স্বর্ণের ব্যবসা কিংবা জলদস্যুতার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা সেখানে গড়ে তুলেছেন অপরাধ সাম্রাজ্য। বাঁশখালীর উপকূলীয় ছনুয়া ইউনিয়নে এমন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়েছে একটি পরিবার। গত সোমবার র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন শফিউল আলম, তার ভাই মো. ইসমাইল ও শ্বশুর ইউনুছ মাঝি। তারা সম্পর্কে নিকটাত্মীয় হওয়ায় একে অপরের যোগসাজশে নানা অপকর্মের সাথে লিপ্ত আছেন। র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ সাংবাদিকদের বলেন, নিরীহ মানুষদের প্রতারিত করে নগদ অর্থ আদায়ের মাধ্যমে সাগর পথে ট্রলার যোগে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পাঠানো এবং মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে তাদের বাংলাদেশের কোনো এক নির্জন দ্বীপে ফেলে আসা নিয়ে আলাপ আলোচনা করার জন্য এক জায়গায় একত্রিত হয়েছিল এই চক্রটি। তারা ভিকটিমদের আর্থ-সামাজিক ও অসহায় অবস্থার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করতো। এটি একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি র‌্যাবের হাতে ভয়ঙ্কর মাদক ‘ক্রিস্টাল আইস’ নিয়ে খুলশীর একটি বাসা থেকে সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ছনুয়া এলাকার কবির আহমদ সিকদার পাড়ার মোজাফ্ফর আহমদের ছেলে শফিউল। জামিনে মুক্তি পেয়ে বছর পার না হতেই এবার মানব পাচারে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেপ্তার হতে হয়েছে তাকে। তবে এবার তার ধরা পড়ার সাথে সাথে ভাই ও শ্বশুরের জড়িত থাকারও প্রমাণ পেয়েছে র‌্যাব। ছনুয়া এলাকার সংঘবদ্ধ একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে এমন কাজের সাথে জড়িত। সাবেক ইউপি সদস্য মো. হোসেন ও এমরান নামে দুই ব্যক্তিও তাদের সহযোগী হিসেবে আছেন। এরমধ্যে হোসেনকেও গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১২ সালে মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রাক্কালে ছনুয়ার সাবেক এক চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে থেকে ১১৪ জনকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পরই বাঁশখালীর ছনুয়া এলাকাটি মানব পাচারের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হয়। সেসময় শফি ও তার ভাই ইসমাইলের নেতৃত্বে মানব পাচারের এই চেষ্টা হয়েছিল বলে গুঞ্জন ওঠে। ২০১৯ সালে মালয়েশিয়া পাচারের প্রাক্কালে ছনুয়ার একজন ইউপি সদস্যের সহায়তায় শফিউল আলমের বাড়ি থেকে ১৭ জন নারীসহ ২০ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে এলাকাবাসী। এ ঘটনায় বাঁশখালী থানায় দায়ের করা মামলায় শফিউল আলমকে আসামি করা হয়। ঘটনাটি জানাজানি হলে শফিউল আলম আত্মগোপনে চলে যান। এক পর্যায়ে শফিউল আলম আফ্রিকা কিংবা মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। করোনার লকডাউন শুরুর আগে শফিউল আবার এলাকায় ফিরে এসে মাদক ও মানব পাচারের জমজমাট ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। শুরু করেন আলিশান বাড়ির নির্মাণ কাজ। চারপাশে সীমানা প্রাচীরে ঘেরা তার সুরম্য বাড়িটি উপকূলীয় এলাকায় বাড়তি নজর কেড়েছে।
গত বছরের ১৭ ফেব্রæয়ারি আদালতের নির্দেশে বাঁশখালী থানা পুলিশ শফিউল আলমের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। যেটিতে শফিউল আলম ও তার ভাই ইসমাইলকে চিহ্নিত মাদক পাচারকারি হিসেবে তুলে ধরা হয়। ২০২০ সালেও শফিউল আলমের অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় রেজুলেশন করা হয়।
এলাকাবাসী জানায়, শফিউল দীর্ঘদিন ধরেই মানব পাচারের সাথে জড়িত। চকরিয়া, পেকুয়া, বাঁশখালী, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী এলাকার বহু লোক তার হাতে বিদেশে যেতে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছে। তারা বিদেশে পাঠিয়ে অনেককে মেরেও ফেলেছেন। আবার অনেককে মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে নির্জন কোনো দ্বীপে নামিয়ে দিয়েছেন। এলাকার মানুষ বুঝে গেছে শফিউলের উত্থান কাহিনী। তার ভাই ও শ্বশুর তাকে এ কাজে নিয়মিত সহায়তা করতেন বলে জানায় এলাকাবাসী।