মাদক ও কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় মুসল্লিরা

13

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে সকল ধরনের মাদক ইয়াবা, গাঁজা, মদ বিয়ার, হেরোইন। বিভিন্ন এলাকা থেকে বহিরাগতরা এসে এই মাদক কিনে নিয়ে যাচ্ছে প্রকাশ্যেই। এসব সরাসরি দেখছে এলাকার শিশু-কিশোর-তরুণ-যুবকেরা। দিনের পর দিন এসব চললেও অসংখ্যবার এই বিষয়ে থানাসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও কোনোভাবেই বন্ধ হয় না মাদকের এই প্রকাশ্য বেচাকেনা। ফলে এলাকার কিশোর-তরুণরা এমনকি শিশুরাও আসক্ত হচ্ছে মাদকে। জড়িত হচ্ছে মাদক বহন ও বিক্রিতে। এতে করে অসংখ্য পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে সামাজিক রীতিনীতি। শুধু তাই নয়, এলাকায় রাজনীতির নামে উঠতি কিশোর-তরুণদের জোর করে বিপথগামী করছে কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী। শিশু ও কিশোরদের নিয়ে তারা কিশোর গ্যাং করে রাতে দিনে এলাকার অলিতে-গলিতে আড্ডায় মশগুল হচ্ছে। এলাকায় চুরি-ছিনতাই হচ্ছে তাদেরকে দিয়ে। এলাকার বাইরে থেকে এসে এলাকার কিশোর-তরুণদের গ্রæপিং এর কারণে মেরে চলে যাচ্ছে। পতিতা ব্যবসা থেকে শুরু করে নানা অপরাধে অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ। এতোসব অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী এবার রাস্তায় নেমেছেন মাদক-সন্ত্রাস-অসামাজিক কার্যক্রম বন্ধ ও কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বন্ধের দাবি নিয়ে।
গতকাল শুক্রবার জুম’আর নামাজের পরপরই নগরের পাহাড়তলী থানাধীন ১১নং দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের আবদুর পাড়া আদর্শ সমাজ ও শাপলা আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির ডাকে রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা। এতে আশপাশের কয়েকটি মসজিদের হাজারো মুসল্লী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে মাদক সন্ত্রাস বন্ধ ও এলাকা থেকে কিশোর গ্যাংয়ের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
জুমার নামাজ আদায়ের পর এ-বøক বাস স্ট্যান্ড মোড়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে হাজারো অংশগ্রহণকারী স্থানীয় বাসিন্দারা একটি গণমিছিল নিয়ে এলাকার বিভিন্ন অলি-গলি প্রদক্ষিণ করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন আব্দুর পাড়া আদর্শ সমাজ এবং শাপলা আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দ। অংশ নেন আশপাশের বেশ কয়েকটি মসজিদের কয়েকশত মুসল্লিও।
স্থানীয় আবদুরপাড়া সমাজের মুরুব্বি ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আসলাম হোসেন সওদাগর জানান, ‘গত বৃহ্স্পতিবার আমাদের আবদুর পাড়া এলাকায় দুপুর ২টায় আনা খাতুন নামের এক মধ্যবয়সী নারীকে মাদক বিক্রির সময় হাতেনাতে ধরতে সক্ষম হয় এলাকাবাসী। বিষয়টি পাহাড়তলী থানাকে অবহিত করা হলে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে ঐ মহিলাকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এলাকাটিতে মাদক বিক্রেতা এবং কিশোর গ্যাং এর অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারণ জনগণ। অসংখ্যবার জানানোর পরেও যারা এটা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে তাদের সহযোগিতা পাচ্ছি না। এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে তাই রাস্তায় নেমেছে।’
আবদুর পাড়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি শুক্রবার মসজিদের খুৎবায়, এলাকার মিটিং এ আমরা মাদক সন্ত্রাস, অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বলি। আর এখন সবচাইতে বেশি যেটা আমাদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে সেটা হচ্ছে কিশোর গ্যাং। তাদের অত্যাচারে এবং এসব অপকর্মে আমরা অতিষ্ঠ। আমাদের ছেলে-মেয়েরা নিরাপদে চলতে পারছে না। উঠতি কিশোর-তরুণদের বাধ্য করে কিশোর গ্যাংয়ে যুক্ত হতে। রাজনৈতিক সংগঠনের নামেও এখানে কিশোর গ্যাং সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিবাদও করেও কিছু হচ্ছে না। ছেলে-মেয়েরা মাদকাসক্ত হয়ে বিপথে যাচ্ছে। তাই এলাকাবাসী আজ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করছে।’
দক্ষিণ কাট্টলীর স্পৃহা ব্লাড ডোনেশন সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা মো. জমির আলম বলেন, ‘এখানকার যুব সমাজ প্রতিবাদ করে আসছে। কিন্তু সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করছে না বলে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। সবাই যদি সম্মিলিতভাবে এই প্রতিবাদের মনোভাব সবসময় রাখেন তাহলে অচিরেই মাদক সন্ত্রাস, কিশোর গ্যাং কর্মকান্ড বন্ধ হবে।’
স্থানীয় মসজিদের মুসল্লী সরোয়ার জাহান মুকুল বলেন, আমরা পুলিশকে তথ্য দেই। কিন্তু অপরাধীরা তথ্যদাতার তথ্য জেনে যায়। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের হুমকি-ধমকি দেয়। কয়েকদিন আগে বাইরে থেকে কিশোরদের এনে আমাদের এলাকার এক কিশোরকে ছুরিকাঘাত করে গেছে। এভাবে তো চলতে পারে না। ৯৯৯ নম্বরে কল করলেও অপরাধীরা কলদাতার তথ্য পেয়ে যায়। উদারণ আকবরশাহ এলাকাটি। ৯৯৯ নম্বরে ফোন করার কারণে সন্তান ও পিতার উপর হামলা হয়েছে। পিতা মারা গেছে। অথচ চিহ্নিতরা, অভিযুক্তরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। আমি আজকের এই মানববন্ধনের কথা শুনে নিজে থেকেই এসেছি প্রতিবাদ করতে। সবাইকে এভাবে এগিয়ে আসতে হবে।